রাশিয়া জনসংখ্যা বাড়াতে নতুন এক অভাবনীয় পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছে। জন্মহার কমে যাওয়া রুখতে ‘মিনিস্ট্রি অব সেক্স’ নামে একটি বিশেষ মন্ত্রণালয় চালু করার চিন্তা করছে দেশটি। রাশিয়ার সংসদের পরিবার সুরক্ষা, পিতৃত্ব, মাতৃত্ব এবং শৈশব সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান নিনা ওসতানিনা এমন একটি মন্ত্রণালয় গঠনের পক্ষে একটি পিটিশন পর্যালোচনা করছেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’ এ তথ্য জানিয়েছে।
‘দ্য সান’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের সাথে চলমান যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সেনাবাহিনী বড় পরিসরে ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। এই যুদ্ধের প্রভাবে সেনা সংখ্যা হ্রাস পেয়ে পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত জনবলসংকটে পড়তে পারে দেশটি। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে রুশ নীতিনির্ধারকেরা দ্রুত কিছু উদ্যোগ নিতে বলছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ‘মিনিস্ট্রি অব সেক্স’ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব।
আরও পড়ুন: ইরাক ইরান যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি? মহাযুদ্ধের হুমকির মুখে ইরান ও ইসরায়েল
রাশিয়ার মস্কোভিচ ম্যাগাজিনের সূত্রে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গ্ল্যাভপিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠান জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য এই মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস, জন্মহার বাড়াতে এবং পরিবার পরিকল্পনা সহজ করতে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় থাকা উচিত। তাদের পিটিশনের মধ্যে নানা ধরনের পরিকল্পনার প্রস্তাবনা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাড়িতে থাকা নারীদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া, একবার সন্তান জন্ম দিলে ৫ হাজার রুবল পর্যন্ত ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিয়ের পর প্রথম রাতে বিশেষ কোনও স্থান ব্যবস্থা করে দেওয়া, যাতে নবদম্পতি একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থার কথাও রয়েছে পিটিশনে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বৃহৎ পরিবার গঠনের পক্ষে। গত বছর তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ায় পরিবার গঠন নিয়ে যে ঐতিহ্য প্রচলিত আছে, তা মানা উচিত। বিশেষ করে চার-পাঁচ সন্তানের বেশি নেওয়ার প্রবণতা তিনি উৎসাহিত করছেন। তিনি বলেন, অতীতে রাশিয়ান দাদা-দাদীরা ৭-৮টি করে সন্তান নিতেন। সেই ধারাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। পুতিন মনে করেন, বেশি সন্তান নিয়ে বড় পরিবার গঠন করার প্রবণতা যেন রুশ সমাজে একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়।
এটি লক্ষণীয় যে, ইউক্রেন যুদ্ধে দুই পক্ষই উল্লেখযোগ্য ক্ষতির শিকার হয়েছে, যা জনসংখ্যা হ্রাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। রুশ প্রেসিডেন্ট প্রত্যেক নারীর জন্য আট বা তারও বেশি সন্তান নেওয়ার সুপারিশ করেছেন এবং বড় পরিবার গঠনের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। ক্রেমলিনের ডেপুটি মেয়র আনাস্তাসিয়া রাকোভা বলছেন, নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু-র বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন আঘাত: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানাচ্ছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে রাশিয়ায় জন্মহার কমে যাওয়া সমস্যা তৈরি করেছে। সেই থেকেই দেশটি এই সংকট মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রচেষ্টা চালানো হলেও সঠিকভাবে ফল আসেনি। তাই নতুন করে ‘মিনিস্ট্রি অব সেক্স’ চালুর মতো পরিকল্পনা সামনে এসেছে, যা দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে কার্যকর হতে পারে।
2 thoughts on “‘মিনিস্ট্রি অব সেক্স’ চালু করতে চায় রাশিয়া, কিন্তু কেন?”