দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নতি করতে এবং মানুষের মধ্যে সুরক্ষা অনুভূতি তৈরি করার জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই পদক্ষেপের কথা জানান।
সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আজ সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোরভাবে কাজ শুরু করবে, এবং আপনি নিজেই তখন পরিস্থিতি টের পাবেন।’’
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ প্যাট্রোল
স্বাধীনতার পরবর্তী ৫৩ বছরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনোই পুরোপুরি সন্তোষজনক ছিল না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মনিটর করা হচ্ছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে নানান পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আজকের সভায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই পরিস্থিতি গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন এবং ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী সন্ধ্যা থেকেই এই বাহিনীগুলোর যৌথ প্যাট্রোল শুরু হবে এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশি চৌকি বসানো হবে।
শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, জানান যে ঢাকা শহরের যেসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেখানে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হবে। এছাড়া, যেহেতু ঢাকা শহরে যানজটের প্রবণতা অনেক বেশি, সেই কারণে পুলিশকে সহায়তার জন্য মোটরসাইকেল কেনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
আরো পড়ুন: যেভাবে বই পড়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন
রাতের অভিযানে শক্তিশালী পদক্ষেপ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘আমরা শুধু দিনে নয়, রাতেও কাজ করি।’’ রোববার রাত তিনটায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন, যা থেকে স্পষ্ট যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার রাতদিন কাজ করছে।
তবে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট দেখে কখনও কখনও মনে হতে পারে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে এই বিষয়গুলো এখন দ্রুতই জানাজাচ্ছে, যা আগে কয়েকদিনে হত।
বনশ্রীতে ছিনতাই ও ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’
রোববার রাতে রাজধানী ঢাকার বনশ্রী এলাকায় ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনাটি দ্রুতই সবার নজরে আসে। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আগে এই ধরনের ঘটনা জানাতে দুই-তিন দিন সময় লাগত, কিন্তু এখন এ ধরনের ঘটনা দ্রুত জানানো হচ্ছে।’’
এছাড়া, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ বিষয়ে তিনি জানান, এই অভিযানটি মূলত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তবে কিছু সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, কেন পুলিশ এখনও পুরোপুরি সক্রিয় নয়, সে বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।


সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, কেন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ‘‘যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে সেই কাজ করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কোনো অসহযোগিতা তিনি দেখছেন না।’’
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি
সভায় আরও এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা হলো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি করা হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের তদারকি আরও জোরালো হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়ানো হবে।
কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর সংঘর্ষ
এছাড়া, কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, ‘‘এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের পদক্ষেপে জনসাধারণের আশ্বাস
এ দিকে, গত কয়েকদিনের যে ঘটনাগুলো দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘মানুষকে আশ্বস্ত করতেই আজকের সভা করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম, তাই জানি যে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।’’


সার্বিক পরিস্থিতি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সন্তোষজনক, তবে এর উন্নতির সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনো পুরোপুরি ভালো ছিল না, কিন্তু এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আমরা আরও উন্নতির দিকে কাজ করছি।’’
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এটা পরিষ্কার যে সরকার আইনের শাসন ও দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এখনো কিছু জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, তবে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে তা মোকাবেলা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
1 thought on “সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা”