Site icon Juger Alo

সমবায় ব্যাংকের সোনা বেদখল: ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না

সমবায় ব্যাংকের সোনা বেদখল

সমবায় ব্যাংকের সোনা বেদখল

সমবায় ব্যাংকের সোনা বেদখল: কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এর ৫৭তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ জানিয়েছেন, সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের বিভিন্ন সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে রয়েছে এবং এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলছে।

আজকের মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘সমবায় ব্যাংকের সোনা বেদখল হয়ে গেছে এবং যারা আগে এসব ব্যাংকে কাজ করতেন, তাদের হাতেই বেশিরভাগ সম্পত্তি বেদখলে রয়েছে।’ এই বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন: এবার রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

তিনি আরও বলেন, ‘সমবায় ব্যাংক উন্নয়ন করতে পারছে না কারণ সমবায়ীদের মধ্যে প্রকৃত সমবায় মানসিকতার অভাব রয়েছে। তারা শুধু কমিটিতে আসতে চায়, কিন্তু কীভাবে উন্নয়ন হবে সে বিষয়ে তাদের কোনও আগ্রহ নেই।’

সমবায় ব্যাংকের অবস্থা ও সমবায় ব্যবস্থার সমস্যা

সমবায় ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জনগণকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক উদ্যোগকে প্রাধান্য দেওয়া। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সমবায় ব্যাংক সংকটে পড়েছে। সমবায় ব্যবস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, কমিটিগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব ও সঠিক মানসিকতার সংকট।

উপদেষ্টা হাসান আরিফ এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেন, ‘সমবায় ব্যবস্থায় যারা আসেন, তাদের মূল লক্ষ্য উন্নয়নের চেয়ে ব্যক্তিগত লাভ করা। আর এ কারণেই তারা সমবায়কে সমৃদ্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’

এই সংকট সমাধানে প্রশাসন ও সমবায়ীদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও, তিনি উল্লেখ করেন যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সমবায় ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউনূসের ‘মেগাফোন কূটনীতি’ ভারতের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

বার্ড সম্মেলনে বিশেষ অতিথিদের পরামর্শ

বার্ডের ৫৭তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসি চেয়ারম্যান ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. তোফায়েল আহমেদ এবং বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ। তারা তাদের বক্তব্যে সমবায় ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় ব্যবস্থার জন্য যে নতুন দিকনির্দেশনা প্রয়োজন, তা আমরা বার্ডের গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে পারি।’

প্রফেসর ড. তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘সমবায় ব্যবস্থা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের উচিত সমবায় ব্যবস্থার পরিচালনা প্রক্রিয়ায় আরও আধুনিকতা এবং স্বচ্ছতা আনা।’

আইনি পদক্ষেপ ও সমবায় ব্যাংকের ভবিষ্যৎ

উপদেষ্টা হাসান আরিফ আশ্বাস দেন যে সমবায় ব্যাংকের বেদখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। যারা এই বেদখলের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘যারা একসময় সমবায় ব্যাংকে কাজ করতেন এবং ব্যাংকের বিভিন্ন সম্পত্তি বেদখলে নিয়ে বসে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা চাই সমবায় ব্যবস্থাকে পুনরায় শক্তিশালী করতে।’

এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংকের সম্পত্তি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি কার্যকর সমাধান আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সমবায় ব্যবস্থার প্রতি নতুন দৃষ্টি এবং পথচলা

সমবায় ব্যাংকগুলোর অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ আরও বলেন, ‘সমবায় ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে আমাদের সমবায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাদের স্বার্থের দিকে মনোযোগ না দিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।’

এছাড়া তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমবায়ের আদি উদ্দেশ্যগুলোর দিকে ফিরে যাওয়া। আমাদের উচিত সমবায় ব্যবস্থায় যারা আসবেন, তাদের মধ্যে একটি উন্নয়নমুখী মানসিকতা তৈরি করা।’

সমবায় ব্যাংকগুলোর বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগ যদি সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন।

সমাপ্তি:
সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার বেদখল নিয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এই পদক্ষেপ কার্যকরভাবে সম্পন্ন হলে সমবায় ব্যাংকগুলো আবারো তাদের আদর্শ উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম হবে।


   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Exit mobile version