মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মাঝে কিছু ভালো গুণ যেমন বিদ্যমান, তেমনি কিছু দুর্বলতা বা মন্দ অভ্যাসও থাকে। এই দুর্বলতা বা ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আমরা সচরাচর প্রকাশ করতে চাই না এবং লুকিয়ে রাখতে চাই। এটিই মানুষের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা। কিন্তু যখন কারও এই গোপন বিষয় প্রকাশ পায়, তখন তা মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হতে পারে। কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি মানুষকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। অন্যের দোষ খোঁজা ইসলাম অনুযায়ী স্পষ্ট হারাম এবং সমাজে অনৈতিকতার জন্ম দেয়। মানুষের গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষা করে শান্তিপূর্ণ জীবন গঠনের গুরুত্ব জানুন।
আরও পড়ুন: এক সাহাবিকে নিয়ে কোরআনের ১৬ আয়াত নাজিল হয়
ইসলামে প্রাইভেসির গুরুত্ব
ইসলাম মানুষের গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষা করার জন্য জোর দিয়ে নির্দেশ দিয়েছে। কারও গোপন বিষয় খুঁজে বের করা বা তা নিয়ে আলোচনা করা ইসলাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না’ (সূরা হুজুরাত: ১২)। আল্লাহ তায়ালা নিজেই যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা একজন মুমিনের দায়িত্ব।
হাদিসেও মানুষের প্রাইভেসি রক্ষা করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সন্দেহ থেকে দূরে থাক। সন্দেহ সবচেয়ে বড় গুনাহের কারণ হতে পারে। মানুষের দোষ খোঁজো না এবং গুপ্তচরবৃত্তি করো না। হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকো এবং পরস্পরের ভাইয়ের মতো হয়ে যাও। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত, সম্মান ও সম্পদ হারাম’ (মুসলিম–২৫৬৩)।
আরও পড়ুন: প্রশ্নও উঠেছিল হাফেজ হতে পারবো কি না: বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজ
মানবিক গুণাবলির সংরক্ষণে ইসলামের নির্দেশনা
উপরের হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষের প্রাইভেসি তার সম্মানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারও গোপন বিষয় প্রকাশ করা বা তাকে অপমান করা ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট হারাম। এমনকি কারও দোষ জেনে গেলে তা অন্যের কাছে প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছেন নবিজি (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন’ (সহিহ মুসলিম)।
অন্যের দোষ খোঁজার পরিণতি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যদি তুমি মুসলমানদের দোষ খোঁজার পেছনে লেগে থাকো, তবে তাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়বে অথবা ফ্যাসাদ সৃষ্টির উপক্রম করবে’ (আবু দাউদ ৪৮৮৮)।
সাহাবিদের উদাহরণ
সাহাবায়ে কেরাম মহানবী (সা.)-এর এই নিষেধাজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। এর একটি অনন্য উদাহরণ হলো, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর একটি ঘটনা। একবার তার কাছে একজন ব্যক্তিকে ধরে এনে বলা হলো, তার দাড়ি থেকে মদের গন্ধ বের হচ্ছে, যা প্রমাণ করে সে মদ পান করেছে। কিন্তু হজরত আবদুল্লাহ (রা.) সরাসরি বললেন, ‘আমাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি কিছু স্পষ্টভাবে আমাদের সামনে প্রকাশ পায়, তাহলে আমরা তা আমলে নেব’ (আবু দাউদ ৪৮৯০)।
এই ঘটনায় দেখা যায়, স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আবদুল্লাহ (রা.) শরিয়তের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই ব্যক্তির দোষ খুঁজতে যাননি। এটি ইসলামের সেই মহান আদর্শকে প্রমাণ করে যা মানুষের গোপনীয়তা এবং সম্মান রক্ষায় দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন: সূরা ওয়াকিয়া: যে দোয়া পড়লে দারিদ্রতা কাছেও ঘেঁষতে পারবে না
আমাদের জন্য শিক্ষা
অন্যের দোষ খোঁজা বা গোপন বিষয় নিয়ে চর্চা করা ইসলামের দৃষ্টিতে শুধু গর্হিত কাজ নয়, বরং এটি সমাজে অনৈতিকতার জন্ম দেয়। এই শিক্ষা আমাদের নিজেদের জীবনকে পরিশীলিত করতে এবং একটি সুন্দর ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। আমরা যদি আল্লাহর এই নির্দেশনা মেনে চলি এবং অন্যের গোপনীয়তার প্রতি সম্মান দেখাই, তবে আমাদের জীবন শান্তিময় ও সম্মানিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তি, অন্যের দোষ খোঁজা এবং সব ধরনের নিন্দনীয় কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমাদের জীবনে উত্তম গুণাবলির সমাবেশ ঘটুক এবং আমরা যেন সুন্দর ও পরিশীলিত জীবন গড়ে তুলতে পারি—এটাই প্রার্থনা।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
1 thought on “অন্যের দোষ খোঁজা: হারাম এবং অনৈতিক একটি কাজ”