বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রখ্যাত অলরাউন্ডার ও সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত “সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড” গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ। অবশেষে আইএফআইসি ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় এবং কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ৩০ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে একটি আইনি নোটিশ জারি করেছে।
আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসান: মধ্যরাতে নাটকীয়তা- দেশে ফেরা নিয়ে শঙ্কা
নোটিশটি গত বৃহস্পতিবার আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে দেওয়া হয় এবং এটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ নোটিশের মাধ্যমে ব্যাংক তাদের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কোম্পানির প্রতি চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। বর্তমানে সাকিব আল হাসানের এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোট ঋণ বকেয়া রয়েছে চার কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা দ্রুত পরিশোধ না করা হলে ব্যাংক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ঋণ নেওয়ার পটভূমি ও কোম্পানির বর্তমান অবস্থা
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর এলাকায় ২০১৬ সালে সাকিব আল হাসান “সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম” প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে কাঁকড়া চাষের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এই খামার পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এক কোটি টাকা এবং টার্ম লোন হিসেবে দেড় কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে।
তবে, সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোনকে মেয়াদি ঋণে স্থানান্তর করে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঋণ পরিশোধের জন্য নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিটি এই টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আইএফআইসি ব্যাংককে দুটি চেক প্রদান করা হয়, তবে সংশ্লিষ্ট হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চেকগুলো বাউন্স হয়।
আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসান: ব্যর্থতা ও লজ্জা বোধ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন শেবাগ
আইএফআইসি ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও আইনি পদক্ষেপ
ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার নোটিশ দেওয়ার পরও সাকিবের কোম্পানি ঋণ পরিশোধে সাড়া দেয়নি। তাই আইএফআইসি ব্যাংক এখন আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নোটিশ অনুযায়ী, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এই চার কোটি ১৪ লাখ টাকার বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যাংক আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংক নিজেদের আইনি প্রক্রিয়ার সাথে সম্মতি রেখেছে এবং নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী পাওনা আদায়ে শেষ চেষ্টা করছে।
সাকিব আল হাসান ও তাঁর কোম্পানির ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটে অন্যতম সফল খেলোয়াড় হলেও, তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণ সমস্যার কারণে একাধিকবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে “সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম” প্রতিষ্ঠার সময় এটি উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশ্বাস প্রদান করেছিল।
তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং ঋণ পরিশোধের অক্ষমতায় এই উদ্যোগটি একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সাকিবের এই কোম্পানির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং ঋণ সমস্যা সমাধানে আরও সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের নোটিশের প্রভাব
আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃক দেওয়া এই ৩০ দিনের আলটিমেটাম সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংকটজনক মুহূর্ত। প্রতিষ্ঠানটি যদি নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।
এছাড়া, সাকিবের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে অন্যান্য সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্যও একটি নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি হতে পারে। তবে, এই নোটিশ সাকিবের কোম্পানির প্রতি একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং দ্রুত ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সমাপনী মন্তব্য
“সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড” এর ঋণ সমস্যা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের দেওয়া আলটিমেটাম প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি সতর্ক সংকেত। সাকিবের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের কোম্পানি এই ধরণের সমস্যা সামাল দিতে না পারলে তা তাঁর সামগ্রিক ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই বিষয়টি একটি শিক্ষা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে যে ব্যবসায় সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র খ্যাতি নয়, সঠিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত এবং আর্থিক স্বচ্ছতারও প্রয়োজন।
3 thoughts on “সাকিব আল হাসানকে আল্টিমেটাম: টাকা ফেরত দিতে পারছে না”