বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক পরাজয়ের পর প্রশ্ন উঠছে, শেষ পর্যন্ত দায় নিবে কে? ইতিহাসে প্রায় সব সিরিজ হারের পর বিসিবির টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ বা অধিনায়করা প্রায়ই সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বিসিবিতে কেউ নেই যাকে নির্দিষ্টভাবে দায়ী করা যায়। হাথুরুসিংহে, নান্নু, পাপন—এরা কেউ এখন টিম ম্যানেজমেন্টে নেই। সুতরাং, এবার অভিযোগের তীর উঠবে কার দিকে?
প্রথমেই দেখা যাক, বাংলাদেশের ঘরোয়া মাঠে প্রোটিয়া দল (দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে কী ঘটেছিল। বাংলাদেশের দল ঠিকঠাকভাবে প্রস্তুতি নিলেও, ম্যাচগুলোতে তারা পরাজিত হয়েছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুটি টেস্টেই বাংলাদেশ ধবলধোলাই হয়েছে। আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও একই অবস্থা। অথচ, এই পরাজয়গুলো কোনো একক ভুল বা একটি বিশেষ ঘটনার কারণে হয়নি। বরং, একাধিক অস্বাভাবিক ঘটনা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পুরো সিরিজটাই বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: বিপিএল ২০২৪ সময়সূচী ও দল ঘোষণা: প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি বরিশাল–রাজশাহী
বিশেষ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তগুলো বেশ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ইনজুরিতে পড়া মুশফিকুর রহিম এবং শান্ত, দুজনেরই অপ্রত্যাশিত অনুপস্থিতি এবং তাদের বিকল্প না থাকা একটি বড় সমস্যা ছিল। তাছাড়া, ইনফর্ম তাসকিন আহমেদও স্কোয়াডে ছিল না, যা দলের জন্য আরও বড় দুঃসংবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাসকিন না থাকলে দল যে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে, তা যেন প্রমাণিত হয়ে গেছে এই সিরিজে। বিশেষত, আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরির পর পুরো ম্যাচটাই বাংলাদেশের হাত থেকে চলে যায়। গুরবাজের বিক্ষিপ্ত ব্যাটিং, যেটি বাংলাদেশি বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, তাসকিনের অনুপস্থিতিতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
এদিকে, বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের আরও কিছু বড় ভুল ছিল। মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও দলের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। ম্যাচের পরপরই প্রমাণিত হয়, মাঠে কিছু সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। যেমন, ১২তম ওভারে রিশাদ হোসেন গুরবাজের সহজ উইকেট মিস করেন, আর ২২তম ওভারে মিরাজের পঞ্চম বল স্টাম্পিং করার সুযোগ হাতছাড়া করেন উইকেটকিপার জাকের আলি অনিক। এসব ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভুলগুলো ম্যাচের ফলাফল পাল্টে দেয়।
আরও পড়ুন: ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড: এমন লজ্জা ভারত আগে কখনো পায়নি
তবে, আরও একটি বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়ে থাকে—স্কোয়াডে খেলোয়াড়দের ক্লান্তির বিষয়টা। দলকে মনে হয়েছে যেন একধরনের মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দিতে পারছিল না এবং একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত, খেলোয়াড়দের মধ্যে অস্থিরতা, মাঠে অব্যর্থ ফিল্ডিং এবং ক্রিকেটের মৌলিক কৌশলগুলোর প্রতি অমনোযোগী মনোভাব—সবই দলকে পিছিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, তাসকিনের ড্রপের সিদ্ধান্তও বড় একটি ভুল ছিল। তার জায়গায় নাহিদ রানা, যিনি ১৫১ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন এবং দুইটি উইকেটও নিয়েছেন, তবুও তিনি কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। গুরবাজের দুর্দান্ত ব্যাটিং ছিল মূলত তাসকিনের অনুপস্থিতিরই ফলস্বরূপ, এটা অনেকেই মনে করছেন।
বাংলাদেশের এই পরাজয় শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা নয়, বরং টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনারও এক বড় পরাজয়। তবে এই প্রশ্ন থেকেই যায়—যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্টের বড় কর্তাব্যক্তিরা (হাথুরু, নান্নু, পাপন) এখন বিসিবিতে নেই, তাহলে দায়ভার নেবে কে? আসলেই কি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তাদের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করছেন? নাকি সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবেই এই পরাজয়গুলোর জন্ম হচ্ছে?
আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসানকে আল্টিমেটাম: টাকা ফেরত দিতে পারছে না
সিরিজ হারের পর যে জবাবদিহি দরকার ছিল, তা এখন আর পিছনে ফেলে রাখা সম্ভব নয়। বিসিবি, কোচিং স্টাফ এবং অধিনায়ক—এদের সবাইকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। সিরিজ পরাজয়ের দায় কেবল এককভাবে ক্রিকেটারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, কারণ যারা পরিকল্পনা নিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত নিজের পদে অটুট আছেন। তাই আসলেই, এই সিরিজ হারের দায় আমাদের কোথায় রাখা উচিত, সেটিই এখন ক্রিকেটের বৃহত্তম প্রশ্ন।
শেষমেশ, কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনার কারণে বাংলাদেশের হারের দায় স্পষ্টভাবেই টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর বর্তাচ্ছে। তবে, এই সিরিজ হারের দায় পর দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য সঠিক পরিবর্তন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি, যাতে পরবর্তী সিরিজগুলোতে এমন পরিস্থিতি আর না দেখা যায়।
3 thoughts on “হাথুরু, নান্নু, পাপন—কেউই নেই, তাহলে সিরিজ হারের দায় নেবে কে?”