ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ হয়ে রইল স্পেন বনাম ফ্রান্স। এই ম্যাচে ছিল সব কিছু—গোলের ঝড়, নাটকীয় প্রত্যাবর্তন, তরুণ তারকার ঝলক এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দমবন্ধ করা উত্তেজনা। স্টুটগার্টের আলো ঝলমলে স্টেডিয়ামে, উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে বৃহস্পতিবার রাতে, ফুটবল ভক্তরা পেলেন এক অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চ।
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
দুর্দান্ত শুরু স্পেনের: প্রথম ৩ মিনিটেই দুই গোল!
খেলার প্রথমার্ধেই ম্যাচটি একতরফা হয়ে উঠতে শুরু করে। মাত্র ২২তম মিনিটে গোল করেন নিকো উইলিয়ামস। এরপর ২৫তম মিনিটে মিকেল মেরিনো দ্বিতীয় গোলটি করেন। মাত্র তিন মিনিটে দুটি গোল—স্পেনের এই শুরু ফ্রান্সকে চাপে ফেলে দেয়।
সেই চাপের মাঝে ফ্রান্স কিছুটা সামলে ওঠার চেষ্টা করলেও স্পেন বনাম ফ্রান্স লড়াই তখন পুরোপুরি স্পেনের নিয়ন্ত্রণে। তবে এমন দুর্দান্ত লড়াইয়ে শেষটা যে এত নাটকীয় হবে, তখন কে জানত?
আরো পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট – কোনো ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে আয় শুরু করুন!
চমৎকার ট্যাকটিকসে উড়ল স্পেন
স্পেনের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে ম্যাচের পরিকল্পনায় ছিলেন নিখুঁত। ফাস্ট পাস, উইং ব্যবহার, ও হাই প্রেসিং—সব মিলিয়ে স্পেন ম্যাচের মাঝমাঠ ও ফ্ল্যাঙ্ক দখল করে নেয়। ৩১ মিনিটেই ফ্রান্সের দুই আক্রমণ ব্যর্থ হয়—দিজিরে দুয়ের ও এমবাপের শট ফিরিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন।
৪৪ মিনিটে স্পেন গোল করে বলে মনে হলেও রেফারি বাতিল করেন অফসাইডের কারণে। ইয়ামালের দারুণ ক্রসে ওইয়ারসাবালের হেড পাসে ডিন হাউসেনের ভলিটি ছিল চোখ ধাঁধানো। কিন্তু রিয়ালের এই নতুন ডিফেন্ডার আক্রমণের সময় অফসাইডে থাকায় গোলটি গণ্য হয়নি।

ইয়ামাল: তরুণ তারকার দুই গোল, ম্যাচের নায়ক
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নাটকীয় মোড় নেয় খেলা। ৫৪ মিনিটে স্পেন পায় পেনাল্টি—বার্সেলোনার বিস্ময় বালক লামিনে ইয়ামাল নিজেই ফাউলের শিকার হন, নিজেই সফলভাবে স্পট কিক নেন। ৫৫ মিনিটে পেদ্রি অসাধারণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উইলিয়ামসের পাস থেকে চতুর্থ গোলটি করেন।
৬৭ মিনিটে আবার গোল করেন ইয়ামাল। ডান দিক থেকে আসা পেদ্রো পোরোর পাস বক্সে পেয়ে, ডিফেন্ডারকে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে দুর্দান্ত শটে বল পাঠান জালে। ১৭ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের নৈপুণ্যে ভর করেই স্পেন বনাম ফ্রান্স ম্যাচে স্পেন চলে যায় ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
আরও পড়ুন
আরো পড়ুন: মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করার উপায় খুঁজছেন? রইলো ১০টি পরীক্ষিত সহজ পথ


ফ্রান্সের প্রতিরোধ: ফিরে আসার লড়াই
৫৯ মিনিটে এমবাপে পেনাল্টি থেকে এক গোল পরিশোধ করেন। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার পেদ্রো পোরো ফাউল করলে ফ্রান্স পেনাল্টি পায়। এরপর ৭৯ মিনিটে হায়ান শের্কি, যিনি ৬৩ মিনিটে বদলি নেমেছিলেন, এমবাপের পাস পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন।
৮৪ মিনিটে স্পেন আত্মঘাতী গোল খায়—ফ্রান্সের শট বক্স থেকে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই বল পাঠান দানি ভিভিয়ান। ৫-৩ তে পৌঁছায় স্কোরলাইন। এরপর যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে রান্দাল কোলো মুয়ানি হেডে আরও একটি গোল করেন শের্কির ক্রসে।
এত কিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি। স্পেন বনাম ফ্রান্স লড়াইয়ে নাটকীয় শেষ মিনিটগুলোয় গোল শোধ করতে মরিয়া ফ্রান্স আর কিছু করতে পারেনি।
পরিসংখ্যানে কে এগিয়ে?
গোলের দিক থেকে স্পেন জয়ী হলেও পরিসংখ্যানে ফ্রান্স কিছুটা এগিয়ে ছিল:
- ফ্রান্সের মোট শট: ২৪
- লক্ষ্যে শট: ৯
- স্পেনের মোট শট: ১৬
- লক্ষ্যে শট: ৮
বল দখলেও ফ্রান্স এগিয়ে থাকলেও গোলরক্ষক উনাই সিমনের অসাধারণ পারফরম্যান্স আর স্পেনের ডিফেন্স ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং কি? কী করবেন, কী করবেন না – ইসলাম কি বলে?
ফাইনালে কার মুখোমুখি স্পেন?
স্পেন বনাম ফ্রান্স ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠল স্পেন। এখন তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও বড়—পর্তুগাল। রোববার মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হবে নেশন্স লিগ ফাইনাল।
এই ম্যাচটি হবে এক ঐতিহাসিক লড়াই—ইউরো ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন স্পেন বনাম নেশন্স লিগ ২০১৯ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।
শেষ কথা: একটি স্বপ্নের ম্যাচ
এই স্পেন বনাম ফ্রান্স ম্যাচ ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। ফুটবল কীভাবে আবেগ, নাটক, আর কৌশলের মিশেল হতে পারে—তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ম্যাচ।
লামিনে ইয়ামাল, নিকো উইলিয়ামস, পেদ্রি, উনাই সিমন—যারা শুধুই খেলেননি, দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
এই ম্যাচ থেকে ফ্রান্সও শিখবে অনেক কিছু—তাদের লড়াকু মানসিকতা, তরুণ খেলোয়াড়দের সাহস, সবকিছু ফুটবলকে করেছে আরও সুন্দর।