গুগল স্টোরেজ ফুল? সহজে সমাধান পাবেন!

গুগল স্টোরেজ ফুল? (google storage full) চিন্তা নেই! এই কৌশলগুলো জানলে স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা হবে সহজ এবং মুক্ত

আপনি যদি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হন, তাহলে ‘স্টোরেজ ফুল’ এই নোটিফিকেশনটি অবশ্যই একাধিক বার দেখেছেন। গুগল ব্যবহারকারীরা সাধারণত ১৫ জিবি ফ্রি স্টোরেজ পান, যা অনেকের জন্য যথেষ্ট মনে হতে পারে। তবে, অব্যবস্থাপনা, বেশি তথ্য সংরক্ষণ এবং নানা কারণে এই ১৫ জিবি স্টোরেজ খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যায়, এবং তার ফলে আপনার প্রিয় স্মার্টফোনের বা গুগল অ্যাকাউন্টের মধ্যে বিশাল জায়গা নেয়া ফাইলগুলোই অস্থির হয়ে ওঠে। একসময় আপনি উপলব্ধি করেন, প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য মুছে ফেলতে হচ্ছে, যা আপনাকে মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই! সঠিকভাবে স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা ও কিছু কৌশল ব্যবহার করে আপনি গুগল স্টোরেজকে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারবেন, তাও কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই।

আজকের লেখাটিতে, আমরা আপনাকে দেখাবো কীভাবে গুগল স্টোরেজ (google storage) ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং কীভাবে আপনার ১৫ জিবি স্টোরেজের সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে পারেন, যাতে ‘স্টোরেজ ফুল’ নোটিফিকেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করবেন কিভাবে?

১. অবাঞ্ছিত ইমেইল মুছে ফেলা

গুগল স্টোরেজের একটি বিশাল অংশ দখল করে থাকে আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্ট। এটি সাধারণত জিমেইলের মাধ্যমে হয়, যেখানে প্রমোশনাল ইমেইল, স্প্যাম এবং বড় ফাইলগুলো জমা হয়। এই ইমেইলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় নয় এবং সহজেই মুছে ফেলা যায়। চলুন, দেখি কীভাবে আপনি এগুলো সঠিকভাবে মুছে ফেলতে পারেন:

বড় ফাইল খুঁজে মুছে ফেলুন:

আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে যদি অতিরিক্ত বড় ফাইল থাকে, তবে তার মাধ্যমে স্টোরেজ খুব দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায়। এই ফাইলগুলো চিহ্নিত করে মুছে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। আপনি জিমেইল সার্চ বক্সে লিখুন has:attachment larger:10M, এতে আপনি ১০ মেগাবাইটের বেশি সাইজের সমস্ত ইমেইল দেখতে পাবেন। এগুলো চেক করে, আপনি সহজেই মুছে ফেলতে পারবেন।

স্প্যাম এবং প্রমোশনাল ইমেইল মুছে ফেলুন:

স্প্যাম এবং প্রমোশনাল ইমেইলগুলো প্রায়ই স্টোরেজের বড় একটি অংশ দখল করে রাখে, তাই নিয়মিতভাবে আপনার স্প্যাম এবং প্রমোশনাল ফোল্ডার চেক করুন। এগুলো মুছে ফেললে স্টোরেজের অনেক জায়গা খালি হবে। এছাড়া, আপনি এগুলোর জন্য ফিল্টার তৈরি করতে পারেন যাতে ভবিষ্যতে প্রমোশনাল ইমেইলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোন চার্জ দেওয়ার সময় ভুলেও যে ৫টি কাজ করবেন না, করলেই বিপদ!

২. গুগল ড্রাইভে ফাইল ম্যানেজমেন্ট

গুগল ড্রাইভ মূলত আপনার ফাইল সংরক্ষণের জায়গা হিসেবে কাজ করে। তবে, এখানে অনেক বড় ফাইল জমা হতে পারে, যা স্টোরেজকে দ্রুত পূর্ণ করে ফেলে। গুগল ড্রাইভ ব্যবস্থাপনায় কিছু কৌশল আপনাকে স্টোরেজ অপ্টিমাইজ করতে সাহায্য করবে:

অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে ফেলুন:

গুগল ড্রাইভে জমে থাকা অনেক ফাইল অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। এই ফাইলগুলো মুছে ফেলতে হলে, গুগল ড্রাইভের ‘ফাইলস’ সেকশনে গিয়ে আপনি বড় ফাইলগুলো চিহ্নিত করতে পারেন এবং সেগুলো মুছে ফেলতে পারেন। এটি স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে।

ফাইল কমপ্রেস করুন:

যদি আপনার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল থাকে, তবে সেগুলো কমপ্রেস করে সংরক্ষণ করতে পারেন। ফাইল কমপ্রেশন করলে তার সাইজ কমে যাবে, ফলে একই স্টোরেজে অনেক বেশি ফাইল রাখা সম্ভব হবে। আপনি ফাইলগুলো ‘zip’ ফরম্যাটে সংরক্ষণ করতে পারেন, যা সাইজ কমিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: ফোন ট্রাকিং হচ্ছে কিনা বুঝবেন কিভাবে? জেনে বন্ধ করার উপায়

৩. গুগল ফটোসে ফটো ও ভিডিও সংরক্ষণ

গুগল ফটোসে প্রচুর ছবি এবং ভিডিও জমা হয়ে থাকে, যা স্টোরেজের জায়গা নিয়ে নেয়। তবে, স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায় কিছু কৌশল ব্যবহার করলে আপনি এসব মিডিয়া ফাইলগুলোকেও সঠিকভাবে ব্যবহারের মধ্যে রাখতে পারবেন:

কোয়ালিটি অপশন সিলেক্ট করুন:

গুগল ফটোসে ছবি আপলোড করার সময়, আপনি ‘স্টোরেজ সেভার’ কোয়ালিটি সিলেক্ট করতে পারেন। এর মাধ্যমে, আপনার ছবি কম রেজুলেশনে আপলোড হবে, যা স্টোরেজ কম খরচ করবে। তবে, যদি আপনার প্রিন্ট করার প্রয়োজন না থাকে বা বড় আকারের ছবি না চাইলে এটি একটি দুর্দান্ত উপায়।

ডুপ্লিকেট ছবি মুছে ফেলুন:

অনেক সময় একই ছবি বারবার আপলোড হয়ে যায়, যা অপ্রয়োজনীয়ভাবে জায়গা নেয়। গুগল ফটোসে গিয়ে আপনি ডুপ্লিকেট ছবি খুঁজে বের করে সেগুলো মুছে ফেলতে পারেন। এটি আপনার স্টোরেজকে অনেকটাই মুক্ত করতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন:

৪. স্টোরেজ বাঁচানোর আরও কিছু কৌশল

ফাইল আর্কাইভ করুন:

আপনার কম গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ক্লাউড স্টোরেজে বা অন্য কোনো ড্রাইভে ব্যাকআপ হিসেবে রেখে গুগল ড্রাইভ থেকে মুছে ফেলতে পারেন। এতে আপনি স্টোরেজ বাঁচাতে পারবেন এবং এই ফাইলগুলো পরে প্রয়োজন হলে আবার অ্যাক্সেস করতে পারবেন।

টেম্পোরারি ফাইল মুছে ফেলুন:

আপনার ফোন বা কম্পিউটারে থাকা অপ্রয়োজনীয় টেম্পোরারি ফাইলগুলো মুছে ফেলতে পারেন। এই ফাইলগুলো সাধারণত সিস্টেমের কার্যক্রমের জন্য তৈরি হয়, কিন্তু পরে সেগুলো কোনো কাজে আসে না। তাই এগুলো মুছে ফেললে স্টোরেজের জায়গা অনেকটা খালি হবে।

শেয়ার করা ডকুমেন্ট মুছে ফেলুন:

অনেক সময়, আপনি অন্যদের সাথে শেয়ার করা ফাইলগুলো ধরে রাখেন, যদিও সেগুলোর আর প্রয়োজন নেই। সেগুলো মুছে ফেললে স্টোরেজ খালি হবে এবং আপনার গুগল ড্রাইভ আরও পরিষ্কার থাকবে।

৫. বয়সভিত্তিক ফাইল মুছে ফেলা

ফাইলগুলো গুগল ড্রাইভে এক জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে রেখে দিলে তাদের প্রয়োজনীয়তা কমে যেতে পারে। তাই আপনি পুরনো বা অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো মুছে ফেলুন। বছরের পর বছর জমে থাকা ফাইলগুলো প্রায়শই আপনার কাজের নয়, শুধু জায়গা দখল করে রাখে। এটি আপনার স্টোরেজকে আরও বেশি ব্যবহৃত হতে সাহায্য করবে।

৬. গুগল ড্রাইভের আলাদা ফোল্ডার তৈরি করুন

গুগল ড্রাইভের ভিতরে আলাদা আলাদা ফোল্ডার তৈরি করে, আপনি ফাইলগুলো শ্রেণীবদ্ধ করে রাখতে পারেন। এতে আপনি খুঁজে পেতে সহজ হবে, এবং অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে। এতে আপনার স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা আরও ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।

উপসংহার

গুগল স্টোরেজ (google storage) ব্যবস্থাপনা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে, তবে কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে এটি সম্ভব হয়ে ওঠে। আপনার ১৫ জিবি ফ্রি স্টোরেজকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত ফাইল, ইমেইল এবং ছবি/ভিডিও মুছে ফেলতে হবে, আর কিছু অপ্রয়োজনীয় ফাইল কমপ্রেস বা ব্যাকআপ রাখতে হবে। এই কৌশলগুলো মেনে চললে, আপনি দীর্ঘ সময় ধরে স্টোরেজে অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই আপনার প্রয়োজনীয় ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবেন।

এখনই শুরু করুন, স্টোরেজ পরিষ্কার করুন এবং আর কোনো সময় ‘স্টোরেজ ফুল’ (google storage) নোটিফিকেশন আপনাকে বিরক্ত করবে না!

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Leave a Comment