৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: নতুন রেটে কত মুনাফা পাবেন

বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র সবসময়ই একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। বিশেষত ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উচ্চ মুনাফার সুযোগ দিয়ে আসছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের তুলনায় আরও আকর্ষণীয়। নতুন এই মুনাফার হার শুধু মেয়াদপূর্তিতে নয়, নগদায়নের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি রিটার্ন নিশ্চিত করবে।

এছাড়াও, বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি এবং উৎসে কর সংক্রান্ত স্বচ্ছতা বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি আরও সুবিধাজনক করেছে। যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার সুযোগ। চলুন, নতুন মুনাফার হার এবং অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Table of Contents

সঞ্চয়পত্র কি

সঞ্চয়পত্র হলো একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম যা সাধারণত সরকার বা নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যু করা হয়। এটি একটি ধরণের সুদ-আধারিত বিনিয়োগ, যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য টাকা জমা রাখলে নির্ধারিত হারে সুদ পাওয়া যায়।

সঞ্চয়পত্রের বৈশিষ্ট্য:

  1. নিরাপদ বিনিয়োগ: সরকার কর্তৃক ইস্যু করা হওয়ায় এটি অত্যন্ত নিরাপদ।
  2. নির্দিষ্ট মেয়াদ: সাধারণত ৩, ৫ বা ১০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা হয়।
  3. নির্দিষ্ট সুদহার: সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট এবং সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।
  4. কুপন বা এককালীন মুনাফা: কিছু সঞ্চয়পত্রে নিয়মিত সুদ প্রদান করা হয়, আবার কিছুতে মেয়াদ শেষে এককালীন সুদ দেওয়া হয়।
  5. কর সুবিধা: নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়।

সঞ্চয়পত্রের প্রকারভেদ:

  1. পেনশনভোগী সঞ্চয়পত্র – অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য
  2. পরিবার সঞ্চয়পত্র – পরিবারের নিরাপত্তার জন্য
  3. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র – প্রতি তিন মাসে সুদ পাওয়া যায়
  4. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র – পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ

সাধারণত ব্যাংক, পোস্ট অফিস বা নির্দিষ্ট সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। এটি মূলত নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে জনপ্রিয়।

৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফার হার ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এই পুনর্নির্ধারিত হার বিনিয়োগকারীদের জন্য আগের তুলনায় আরও বেশি লাভজনক। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

আরও পড়ুন: নারীদের ঘরে বসে কাজ: 2025 সালের সেরা ১০টি সহজ উপায়

নতুন মুনাফার হার (২০২৫)

বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ী মুনাফার হার

সময়বিনিয়োগ ≤ ৭,৫০,০০০ টাকাবিনিয়োগ > ৭,৫০,০০০ টাকা
১ম বছর১০.১৩%১০.১১%
২য় বছর১০.৬৪%১০.৬২%
৩য় বছর১১.১৯%১১.১৭%
৪র্থ বছর১১.৭৮%১১.৭৫%
৫ম বছর১২.৪০%১২.৩৭%

উৎসে কর

  • ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে: উৎসে কর ৫%।
  • ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে: উৎসে কর ১০%।

মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা

  • সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১২.৪০%।
  • সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১২.৩৭%।

নগদায়নের ক্ষেত্রে মুনাফা

মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়নের ক্ষেত্রেও প্রতি অতিক্রান্ত বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে:
  • প্রথম বছরে নগদায়নে মুনাফা হবে ১০.১৩%, দ্বিতীয় বছরে ১০.৬৪%, তৃতীয় বছরে ১১.১৯%, এবং চতুর্থ বছরে ১১.৭৮%।
  • সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে: প্রথম বছরে নগদায়নে মুনাফা হবে ১০.১১%, দ্বিতীয় বছরে ১০.৬২%, তৃতীয় বছরে ১১.১৭%, এবং চতুর্থ বছরে ১১.৭৫%।

বিনিয়োগ সীমা

  • ব্যক্তিগত নামে: সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা হলো ৩০ লাখ টাকা।
  • যুগ্ম নামে: সর্বোচ্চ সীমা হলো ৬০ লাখ টাকা।
  • কিছু বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সুবিধাভোগী

এই নতুন হারে মুনাফা পাবেন শুধুমাত্র যারা ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন

অন্যান্য সুবিধা

  • সঞ্চয়পত্রের উত্তরাধিকার নিয়োগ করা যায়।
  • বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী মেয়াদ শেষে বা তাৎক্ষণিক নগদায়ন করতে পারবেন।
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নতুন নিয়ম ২০২৫

বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। এগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও স্বচ্ছতা এবং সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রণীত হয়েছে। নিচে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নতুন নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলো:

আরও পড়ুন: Top Bangladeshi App প্রতিদিন 1000 টাকা ইনকাম পেমেন্ট বিকাশ

১. বিনিয়োগ সীমা

  • একক নামে: সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা।
  • যৌথ নামে: সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ টাকা।
  • প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমা রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট নীতিমালার আওতায় নির্ধারণ করা হয়।

২. উৎসে কর

  • মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার কম হলে ৫% উৎসে কর প্রযোজ্য।
  • মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে পুরো টাকার উপর ১০% উৎসে কর কাটা হবে।

৩. ক্রয় ও নগদায়ন স্থান

সঞ্চয়পত্র ক্রয় এবং নগদায়ন করা যায়:

  • জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিস থেকে।
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাসমূহ।
  • তফসিলি ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে।

৪. মুনাফার হার ও প্রাপ্তি

  • মুনাফার হার সঞ্চয়পত্রের ধরণ এবং বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী ভিন্ন হয়।
  • ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফা সাধারণত মেয়াদান্তে প্রদান করা হয়। তবে কিছু বিশেষ স্কিমে তিন মাস অন্তর মুনাফা পাওয়ার সুবিধাও রয়েছে।

৫. যোগ্যতা

সকল শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশি নাগরিক সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু স্কিমে বিশেষ যোগ্যতা প্রয়োজন হতে পারে, যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্র বা পেনশনভিত্তিক সঞ্চয়পত্র।

৬. বিশেষ নিয়মাবলী

  • সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়), এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক।
  • একাধিকবার ছোট পরিমাণে সঞ্চয়পত্র কিনলেও মোট বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করা যাবে না।

৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র – বিনিয়োগের সেরা সুযোগ!

প্রবর্তন: ১৯৯৮ খ্রিঃ
মেয়াদ: ৩ বছর
মূল্যমান:
১,০০,০০০ টাকা, ২,০০,০০০ টাকা, ৫,০০,০০০ টাকা ও ১০,০০,০০০ টাকা

কোথায় পাওয়া যাবে:
জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে।

মুনাফার হার:

এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ৩ বছরের মেয়াদে বৃদ্ধি পায়, যা আপনাকে আকর্ষণীয় লাভ প্রদান করে:

মেয়াদ৭,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত৭,৫০,০০১ টাকা বা তার বেশি
১ম বছর শেষে১১.০৪%১১.০০%
২য় বছর শেষে১১.৬৫%১১.৬১%
৩য় বছর শেষে১২.৩০%১২.২৫%

মুনাফা পাবেন ত্রৈমাসিকভাবে, অর্থাৎ প্রতি ৩ মাসে একবার লাভ পাবেন।

উৎসে কর:

  • ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫% উৎসে কর
  • এর বেশি বিনিয়োগে মুনাফার উপর ১০% উৎসে কর কর্তন হবে।

কোথায় এবং কাদের জন্য ক্রয় করা যাবে:

এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন:

  • সব শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশী নাগরিক
  • ভবিষ্য তহবিল পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহ
  • অটিস্টিক শিশুদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান
  • দুঃস্থ ও অনাথ শিশুদের নিবন্ধিত আশ্রয় প্রতিষ্ঠান
  • প্রবীণদের জন্য নিবন্ধিত আশ্রয় কেন্দ্র
  • মৎস্য, খামার, দুগ্ধ উৎপাদনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীরা

বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা:

  • ব্যক্তির জন্য: একক নামে ৩০ লক্ষ টাকা, যুগ্ম নামে ৬০ লক্ষ টাকা।
  • প্রতিষ্ঠান: সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা।
  • ফার্ম: সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা।
  • অটিস্টিক বা দুঃস্থ শিশুদের সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান: সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা।

অতিরিক্ত সুবিধাসমূহ:

  • ত্রৈমাসিক মুনাফা প্রদান
  • নমিনি নিয়োগের সুযোগ
  • ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সহজেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারেন, অথবা প্রতি ৩ মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র – আপনার অবসরের নিরাপদ ও লাভজনক ভবিষ্যৎ!

প্রবর্তন: ২০০৪ খ্রিঃ
মেয়াদ: ৫ বছর
মূল্যমান:
৫০,০০০ টাকা, ১,০০,০০০ টাকা, ২,০০,০০০ টাকা, ৫,০০,০০০ টাকা, ১০,০০,০০০ টাকা

কোথায় পাওয়া যাবে:
জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে সহজেই ক্রয় ও নগদায়ন করা যাবে।

মুনাফার হার:

পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ৫ বছরের মেয়াদে বাড়তে থাকে, যা আপনাকে অনেক বেশি লাভ প্রদান করবে:

মেয়াদ৭,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত৭,৫০,০০১ টাকা বা তার বেশি
১ম বছর শেষে১০.২৩%১০.১১%
২য় বছর শেষে১০.৭৫%১০.৬২%
৩য় বছর শেষে১১.৩১%১১.১৭%
৪র্থ বছর শেষে১১.৯১%১১.৭৫%
৫ম বছর শেষে১২.৫৫%১২.৩৭%

মুনাফা পাবেন প্রতি মাসে, অর্থাৎ প্রতি মাসে আপনি নিয়মিত লাভ পাবেন।

উৎসে কর:

  • ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কোন উৎসে কর কর্তন করা হয় না।
  • ৫,০০,০০০ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% উৎসে কর কর্তন হবে।

কাদের জন্য ক্রয় করা যাবে:

এটি শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের জন্য:

  • সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী
  • সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিগণ
  • সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য
  • মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান

বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা:

  • একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা, যা প্রাপ্ত আনুতোষিক (Gratuity) এবং ভবিষ্য তহবিলের অর্থ মিলিয়ে নির্ধারিত।

অতিরিক্ত সুবিধাসমূহ:

  • মাসিক মুনাফা প্রদান
  • নমিনি নিয়োগের সুবিধা
  • ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সহজেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারবেন অথবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন।

পরিবার সঞ্চয়পত্র – আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন!

প্রবর্তন: ২০০৯ খ্রিঃ
মেয়াদ: ৫ বছর
মূল্যমান:
১০,০০০ টাকা, ২০,০০০ টাকা, ৫০,০০০ টাকা, ১,০০,০০০ টাকা, ২,০০,০০০ টাকা, ৫,০০,০০০ টাকা, ১০,০০,০০০ টাকা

কোথায় পাওয়া যাবে:
জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে সহজেই ক্রয় ও নগদায়ন করা যাবে।

মুনাফার হার:

পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বছর প্রতি বৃদ্ধি পায়, যাতে আপনি পাচ্ছেন সুরক্ষিত ও নিয়মিত লাভ:

মেয়াদ৭,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত৭,৫০,০০১ টাকা বা তার বেশি
১ম বছর শেষে১০.২০%১০.১১%
২য় বছর শেষে১০.৭২%১০.৬২%
৩য় বছর শেষে১১.২৮%১১.১৭%
৪র্থ বছর শেষে১১.৮৭%১১.৭৫%
৫ম বছর শেষে১২.৫০%১২.৩৭%

মুনাফা পাবেন মাসে মাসে, যা আপনাকে নিয়মিত উপার্জনের সুযোগ দেবে।

উৎসে কর:

  • ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কোন উৎসে কর কর্তন করা হয় না।
  • ৫,০০,০০০ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% উৎসে কর কর্তন হবে।

কাদের জন্য ক্রয় করা যাবে:

পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন:

  • ১৮ (আঠার) বছর বা তার বেশি বয়সের বাংলাদেশী মহিলা
  • যে কোন শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ/মহিলা)
  • ৬৫ (পঁইত্রিশ) বছর বা তার বেশি বয়সের বাংলাদেশী (পুরুষ/মহিলা)

বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা:

  • একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লক্ষ টাকা।
  • একই নামের সাথে ৫০ লক্ষ টাকা অথবা যুগ্ম নামে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যাবে (যদিও পরিবার সঞ্চয়পত্রে যৌথ নামে বিনিয়োগ করা যায় না)।

অতিরিক্ত সুবিধাসমূহ:

  • মাসিক মুনাফা প্রদান
  • নমিনি নিয়োগ, পরিবর্তন বা বাতিলের সুবিধা
  • ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সহজেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারবেন অথবা প্রতি মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন।

সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্র

সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্র বিভিন্ন ধরনের আর্থিক পরিকল্পনার জন্য একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল মুনাফা এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে। সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র ক্রয় এবং মুনাফার হার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:

সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার

সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিমে ভিন্ন ভিন্ন মুনাফার হার প্রদান করে। ২০২৫ সালের জন্য উল্লেখযোগ্য স্কিমগুলোর মুনাফার হার হলো:

স্কিমের নামমুনাফার হারমেয়াদ
সোনালী সঞ্চয় স্কিম৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি)৫ বছর
শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি)১০ বছর
চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি)১০ বছর
পল্লী সঞ্চয় স্কিম৬.৫০% (সরল হার)৭ বছর
বিবাহ সঞ্চয় স্কিম৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি)১০ বছর
অনিবাসী আমানত স্কিম৭.০০% (সরল হার)৫ বছর
সোনালী অবসর সঞ্চয় স্কিম৮.০০% (সরল হার)৩-১৫ বছর
অনন্যা সোনালী সঞ্চয় স্কিম৮.৫০%-৮.৭৫% (সরল হার)৩ অথবা ৫ বছর
সোনালী মাসিক মুনাফা প্রকল্প৮.২৫% (সরল মুনাফা)৩ বছর
সোনালী প্রবাসী মাসিক মুনাফা প্রকল্প৮.৫০% (সরল মুনাফা)৩ বছর

সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নিয়ম

  1. বিনিয়োগ সীমা:
  • সর্বনিম্ন: ১০,০০০ টাকা।
  • সর্বোচ্চ: একজন ব্যক্তি সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
  • নির্দিষ্ট স্কিমে যেমন পরিবার বা তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সীমা ভিন্ন হতে পারে।
  1. প্রয়োজনীয় নথি:
  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • টিআইএন সার্টিফিকেট (৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক)।
  • ট্যাক্স রিটার্ন সার্টিফিকেট।
  1. নগদায়ন সুবিধা:
  • যে কোনো সময় নগদায়ন করা যায়।
  • নির্ধারিত সময়ের আগে নগদায়ন করলে প্রযোজ্য হারে সুদ প্রদান করা হয়।
  1. ক্রয়ের স্থান:
  • সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখা।
  • জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং ডাকঘর থেকেও এই সেবা পাওয়া যায়।

বিশেষ সুবিধা

  • মাসিক বা তিন মাস অন্তর মুনাফা তোলার সুযোগ।
  • সরাসরি ব্যাংক হিসাবে মুনাফা জমা হয়, যা সহজে উত্তোলন করা যায়।
  • মহিলাদের জন্য বিশেষ স্কিম যেমন “পরিবার সঞ্চয়পত্র”।

শেষ কথা

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফার হার বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় এবং লাভজনক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র একটি নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। নতুন নিয়মাবলী এবং সুবিধাগুলির মাধ্যমে এটি এখন আরও সুবিধাজনক এবং স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে।

যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার সুযোগ, বিশেষত যদি তারা একটি নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ খুঁজছেন। সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং নতুন মুনাফার হার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে, আপনার বিনিয়োগ পরিকল্পনা আরও সঠিকভাবে সাজাতে পারবেন।

সঞ্চয়পত্র সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ):

সঞ্চয়পত্রের সুদ খাওয়া কি হারাম?

সঞ্চয়পত্রের সুদ ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুযায়ী হারাম বলে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এটি সুদ ভিত্তিক (রিবা) আর্থিক ব্যবস্থা। তবে, কিছু ব্যক্তি শরিয়াহ-অনুযায়ী বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধান করে থাকেন। ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সুদমুক্ত বিকল্প বিনিয়োগের ব্যবস্থা পাওয়া যায়।

সঞ্চয়পত্রের লাভ কত?

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর, যেমন বিনিয়োগের পরিমাণ ও মেয়াদ। উদাহরণস্বরূপ, ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১২.৪০% পর্যন্ত হতে পারে (২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী)। তবে এই হার বিনিয়োগ সীমা ও মেয়াদের ওপর নির্ভরশীল।

কত বছর আগে সঞ্চয়ের উপায় উদ্ভাবন হয়?

সঞ্চয়পত্রের ধারণা অনেক পুরনো, এবং বাংলাদেশে এর প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মাধ্যমে। এর আগে বিভিন্ন দেশের সরকারও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদবৃদ্ধি উপায় প্রদান করত।

সঞ্চয়পত্র কত প্রকার ও কি কি?

সঞ্চয়পত্রের কিছু সাধারণ প্রকার:
পেনশনভোগী সঞ্চয়পত্র (অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য)
পরিবার সঞ্চয়পত্র (পরিবারের নিরাপত্তার জন্য)
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র (তিন মাসে একবার সুদ)
পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র (মেয়াদ শেষে এককালীন মুনাফা)

সঞ্চয়পত্রের বর্তমান রেট কত?

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বর্তমান ২০২৫ সালে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের জন্য ১২.৪০% পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই হার বিনিয়োগের পরিমাণ ও মেয়াদের ওপর নির্ভর করে।

কোথায় টাকা রাখলে লাভ বেশি?

সাধারণত সঞ্চয়পত্র বা সরকারী নিরাপদ বন্ডে বিনিয়োগ করলে ভালো লাভ পাওয়া যায়, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে। এছাড়া ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটও লাভজনক হতে পারে, তবে সুদের হার সঞ্চয়পত্রের তুলনায় কম থাকে।

পরিবার সঞ্চয়পত্র কারা করতে পারে?

পরিবার সঞ্চয়পত্র মূলত পরিবারের সদস্যদের জন্য, বিশেষ করে যে কোনো বয়সের পরিবারের অভিভাবকরা এটি করতে পারেন। এটি পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

এক লক্ষ টাকার সুদ কত?

এক লক্ষ টাকার সুদ নির্ভর করে আপনি যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন তার মুনাফার হার এবং মেয়াদের ওপর। উদাহরণস্বরূপ, ১২% সুদে ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করলে বছরে ১২,০০০ টাকা সুদ পাওয়া যাবে।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিভাবে চেক করব?

আপনি জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা অবস্থান চেক করতে পারেন: জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিসে গিয়ে
ব্যাংক শাখা বা ডাকঘর থেকে
অনলাইন সেবা (যদি উপলব্ধ থাকে) দিয়ে

মুনাফা আসল কি?

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আসল অর্থাৎ, আপনি যে সুদ পাবেন তা নির্ধারিত এবং বাস্তব। তবে, মুনাফার হার সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে এবং বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল থাকে।

1 thought on “৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: নতুন রেটে কত মুনাফা পাবেন”

Leave a Comment