কোরবানি, ইসলামের একটি প্রধান ইবাদত, যা প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০, ১১, এবং ১২ তারিখে মুসলিম উম্মাহ পালন করে থাকে। এটি হজ্জের সময় পালিত হয় এবং ইব্রাহিম (আ.) এর ত্যাগের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়। তবে, যখন একজন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়, তখন কোরবানির বিধান কী হবে, এবং ঋণ পরিশোধ আগে নাকি কোরবানি, এ নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
কোরবানি একটি পবিত্র ইবাদত যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে বিবেচিত হয়। কিন্তু যখন এটি ঋণ এবং সম্পদের বিষয়ে আসে, তখন কিছু বিশেষ বিবেচনা প্রয়োজন। আমরা এখানে এই বিষয়ে আলোচনা করব এবং ইসলামের দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করব।
প্রথমত, আমরা বিবেচনা করব যে ঋণগ্রস্ত কিন্তু নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক একজন ব্যক্তির কোরবানির হুকুম কী হবে? সে কি কোরবানি দিতে পারবে? এ ব্যাপারে ইসলামের দিক-নির্দেশনা কী?
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, যে ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। নেসাব পরিমাণ বলতে বোঝায় সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপার সমপরিমাণ সম্পদ। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হয়, তাহলে তার কোরবানির হুকুম কী? এক্ষেত্রে বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির অবস্থার উপর।
আরও পড়ুন : কত টাকা থাকলে কোরবানি দিতে হবে?
১. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করার পর কোরবানির সময়ে তার নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে তবে ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য কোরবানি আবশ্যক নয়।
২. আর যদি ঋণ পরিশোধ করার পরও কোরবানির সময়ে সাময়িক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্যও কোরবানি আবশ্যক।
উল্লেখ্য, কোরবানির জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ সারা বছর ধরে জমা রাখা জরুরি নয়। শুধু কোরবানির দিনগুলোতে (১০ম, ১১শ ও ১২ই জিলহজ) এই পরিমাণ সম্পদ থাকলেই যথেষ্ট।
এখন, আমরা বিবেচনা করব যে ঋণ পরিশোধ আগে নাকি কোরবানি? এই বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
কোরবানি দেয়ার মতো টাকার মালিক বা সম্পদ আছে কিন্তু ঋণগ্রস্ত; এ ব্যক্তির কোরবানির হুকুম কী? সে কি কোরবানি দিতে পারবে? কোরবানি না দিলে কি গোনাহ হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো:
যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব বা আবশ্যক; সে পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্ত হয় তবে তার কোরবানি দেয়া আবশ্যক কি না, তা নির্ভর করবে ওই ব্যক্তির অবস্থার ওপর। আর তা হলো–
আরও পড়ুন : ইউটিউবার দাউদ কিমের মসজিদ নির্মাণ: সব বাধা পেরিয়ে সফলতা
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্ত থাকেন, তাহলে তার জন্য আগে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি। কারণ, শেষ বিচারের দিন হাদিস অনুযায়ী, পাওনাদারকে নিজের নেকি দিয়ে দিতে হবে নতুবা পাওনাদারের গুনাহ কাঁধে নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে।
তাই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কোরবানির দিনগুলোতে ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি না থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। আর ঋণ পরিশোধের পর যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে
কোরবানির গুরুত্ব ও ঋণের প্রভাব
কোরবানি কেবল একটি পশু বলি নয়, বরং এটি একটি আত্মত্যাগের প্রতীক। কোরবানির মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য ও ভক্তি প্রকাশ করে থাকেন। তবে, যদি কেউ ঋণের বোঝা বহন করে থাকেন, তাহলে তার প্রথম কর্তব্য হল ঋণ পরিশোধ করা। কারণ, ঋণ পরিশোধ না করা হলে তা পাওনাদারের প্রতি অন্যায় এবং এটি ইসলামিক শিক্ষা অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গত নয়।
আরও পড়ুন : কিভাবে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠবেন, জেনে নিন উপকারিতা, ওঠার আমল ও দোয়া
সুতরাং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কোরবানির বিধান নির্ভর করে তাদের আর্থিক সামর্থ্যের উপর। ঋণ পরিশোধের পরও যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোরবানি দেওয়া উচিত। না হলে তাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে সামর্থ্য থাকলে ঋণগ্রস্ত অবস্থাতেও কোরবানি করা উত্তম।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন |