পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ও শোভাযাত্রার ইতিহাস – বাংলার প্রাণের উৎসব

পহেলা বৈশাখ—শুধু একটি দিন নয়, এটি বাঙালির হৃদয়ের উৎসব। নতুন দিনের আলো, নতুন বছরের শুরু আর নতুন সম্ভাবনার হাতছানি নিয়েই আসে বাংলা নববর্ষ। বাংলার মানুষের কাছে এই দিনটি কেবল নতুন ক্যালেন্ডার পাল্টানোর দিন নয়—এটি এক অনুভব, এক আত্মিক উচ্ছ্বাস, যা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে নতুন করে জড়িয়ে দেয়।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) ঘটা করে পালিত হয় বাংলা নববর্ষ। লাল-সাদা পোশাক, পান্তা-ইলিশ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা—সব মিলিয়ে এই দিনটিকে বাঙালি জাতি উদযাপন করে প্রাণ খুলে।
তবে এখানেই প্রশ্ন ওঠে—বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই একটি দিন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই চলুন ফিরে যাই পহেলা বৈশাখের ইতিহাসবাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস আর সেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার ইতিহাসে, যেখানে বাঙালির ঐতিহ্য আর আত্মপরিচয়ের গল্প লেখা আছে রঙে, আলোয় আর সুরে।

আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা

Table of Contents

বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

বাংলা নববর্ষ কেবল একটি তারিখ নয়। এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক, সংস্কৃতির দিগন্তে গর্বিত একটি পতাকা। এই দিনটি আমাদের জাতিসত্তা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির নিদর্শন। হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, লাল-সাদা পোশাক, আর মিষ্টিমুখ—সবকিছু মিলিয়ে এটি এমন এক উৎসব, যেখানে ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসাথে উদযাপন করে।

এই দিনে আমরা পুরনো বছরের দুঃখ, গ্লানি আর হতাশা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পাই। নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্ন। তাই পহেলা বৈশাখ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।

এটি শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এই দিনটির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা খুলে হালখাতা করেন, দেনাদারদের আমন্ত্রণ জানান, মিষ্টিমুখ করান। সমাজিকভাবেও এটি এক মিলনমেলা—ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য আর সংস্কৃতির অপূর্ব সম্মিলন।

সত্যি বলতে, বাংলা নববর্ষ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—আমরা বাঙালি, আমাদের রয়েছে একটি নিজস্ব ইতিহাস, একটি গর্বিত পরিচয়।

আরো পড়ুন: কিভাবে ফেসবুকে প্রতিদিন $500 আয় করা যায় – বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সহজ কৌশল

নববর্ষের শুভেচ্ছা
নববর্ষের শুভেচ্ছা

পহেলা বৈশাখ ইতিহাস – কোথা থেকে এলো এই দিনটি?

পহেলা বৈশাখ ইতিহাস বলতে গেলে ফিরে যেতে হয় মোগল আমলে। মোগল সম্রাট আকবর প্রথমবারের মতো বাংলা সনের প্রচলন করেন। তখন কৃষি প্রধান এই অঞ্চলে খাজনা আদায়ের সময় মুসলিম হিজরি সন অনুযায়ী দিন নির্ধারিত হতো, যা ছিল চাঁদের ওপর নির্ভরশীল। ফলে কৃষকেরা ফসল ওঠার আগেই খাজনা দিতে বাধ্য হতো।

এই সমস্যার সমাধানে সম্রাট আকবর হিজরি ও সৌর সন মিলিয়ে এক নতুন ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন—এটাই আজকের বাংলা সাল। ইতিহাসবিদ আবুল ফজল “আইন-ই-আকবরী” তে এই পঞ্জিকার বিবরণ দিয়েছেন। এই বাংলা সনের প্রথম দিনটিই হলো পহেলা বৈশাখ

শুরুতে দিনটি ছিল মূলত আর্থিক লেনদেন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কেন্দ্রিক। ব্যবসায়ীরা খাজনা প্রদান করতেন, জমিদাররা আয়োজন করতেন মিষ্টিমুখ ও ভোজের। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই দিনটি হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও জাতীয় উৎসবের রূপে

১৯৬৫ সালের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) এই দিনটিকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এবং স্বাধীনতার পর থেকে বাংলা নববর্ষ আরও বৃহৎ পরিসরে, জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হতে থাকে।

আজ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের নয়, এটি এখন বাঙালির আত্মপরিচয়ের গর্বিত স্মারক। পহেলা বৈশাখ আমাদের বলে দেয়—আমরা এক, আমরা বাঙালি।

আরো পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট – কোনো ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে আয় শুরু করুন!

শোভাযাত্রার ইতিহাস – মঙ্গল শোভাযাত্রা কবে ও কিভাবে শুরু?

বাংলা নববর্ষ মানেই এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা—রঙে, রূপে, ঢাক-ঢোলে মুখরিত এক আনন্দযাত্রা। তবে আপনি কি জানেন, এই শোভাযাত্রার ইতিহাস কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়?

➡️ শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া ও জাতিগত ঐক্যের বার্তা দিতে এক ব্যতিক্রমী র‌্যালি আয়োজন করেন। সেখানেই জন্ম নেয় মঙ্গল শোভাযাত্রা—যার মূল উদ্দেশ্য ছিল অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় উদযাপন করা।

সেই ছোট্ট উদ্যোগটি এখন পুরো দেশের—এমনকি বিশ্বের বাঙালিদের এক গর্বিত প্রতীক।

➡️ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

২০১৬ সালে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা-কে ইউনেস্কো ‘Intangible Cultural Heritage of Humanity’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক বিশাল অর্জন, যা প্রমাণ করে—পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ও শোভাযাত্রার ইতিহাস শুধুমাত্র জাতিগত নয়, বরং বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক স্বীকৃতিরও বিষয়।

➡️ শোভাযাত্রার রঙিন অনুষঙ্গ

এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ, পশুপাখির প্রতিকৃতি, গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি, ফুলের আলপনা এবং বিশাল আকৃতির কাঠামো—যা তৈরি হয় কাগজ, বাঁশ ও কাপড় দিয়ে। সব কিছুতেই প্রকাশ পায় শুভ, সত্য, সৌন্দর্য ও প্রতিবাদের সৌন্দর্য

➡️ শুধু শহরে নয়, গ্রামেও এখন শোভাযাত্রা

আজ শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি প্রবাসেও বাংলাদেশি কমিউনিটিগুলো পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই রঙিন শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এটি হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহনকারী এক অনন্য আয়োজন।

আরো পড়ুন: ফ্রি লটারী খেলে টাকা ইনকাম: ২০২৫ সালে কিভাবে সহজে টাকা আয় করবেন?

বৈশাখী মেলার ইতিহাস কী?

বৈশাখী মেলার ইতিহাস কী?—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হয় বাংলার মাটির কাছে, গ্রামবাংলার প্রাণের উৎসবে। একসময় যখন টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা আধুনিক বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল না, তখন গ্রামীণ মানুষের সবচেয়ে বড় আনন্দের মাধ্যম ছিল মেলা। আর সেই মেলাগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বৈশাখী মেলা

➡️ হালখাতার সঙ্গে মেলার সম্পর্ক

প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে হালখাতা খুলতেন। পুরনো হিসাব মুছে দিয়ে নতুন খাতা শুরু হতো, আর গ্রাহকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হতো। সেই উৎসব ঘিরেই আয়োজন হতো মেলার—যেখানে শুধু কেনাবেচাই নয়, থাকত সংস্কৃতি, খেলাধুলা, লোকসংগীত ও সামাজিক মিলন।

➡️ মেলার দৃশ্যপট

বৈশাখী মেলায় আপনি দেখতে পাবেন—মাটির খেলনা, বাঁশের পাখা, কাঠের হাতি-ঘোড়া, হস্তশিল্প, মিষ্টির দোকান, নাগরদোলা, পুতুল নাচ, বানর-ভালুকের খেলা, ঝাঁপি-কাঠি ঘোরানো, পটচিত্র আর লোকগান। এগুলোই ছিল বাঙালির প্রজন্মের পর প্রজন্মের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু।

➡️ শহরেও মেলার রূপান্তর

আজকের দিনে শহরগুলোতেও আয়োজন হয় বৈশাখী উৎসব। রমনা বটমূলে ছায়ানটের গান, রবীন্দ্রসংগীত, নাটক, কবিতা আবৃত্তি—এসব সবই এখন মেলারই একটি বিবর্তিত রূপ। কিন্তু লক্ষ্য একটাই—বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাসকে স্মরণ করে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা।

➡️ বৈশাখী মেলা: শুধু কেনাকাটা নয়, সংস্কৃতির চর্চাও

বৈশাখী মেলা আজ কেবল পণ্য বিক্রির জায়গা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র। এখানে ছোটদের শেখানো হয় দেশীয় সংস্কৃতি, লোকজ গান, নৃত্য, নাট্য এবং বাঙালি ইতিহাস।

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস – কৃষক থেকে শহুরে প্রাণের উৎসব

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই দিনটির শিকড় অনেক গভীরে, বিশেষ করে বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজে। এক সময় পহেলা বৈশাখ ছিল মূলত খাজনা আদায়ের দিন। জমিদাররা বসতেন বারান্দায়, আর কৃষকেরা নতুন ফসলের মৌসুম শুরুর আগে সেই দিনের মধ্যেই খাজনা পরিশোধ করতেন। এই অর্থনৈতিক লেনদেনকে ঘিরেই তৈরি হতো উৎসবের আবহ—গান, বাজনা, নাচ, আর মিষ্টিমুখ।

তখনকার দিনে এই আয়োজন ছিল গ্রামের প্রাণকেন্দ্র। গান-বাজনা, বাউল সংগীত, হাট-বাজার, পুতুলনাচ, হালখাতা—সব মিলিয়ে এক জমজমাট আয়োজন, যা মানুষকে বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিকভাবে একত্রিত করত।

➡️ শহুরে রূপান্তর

সময়ের সাথে সাথে বাংলা নববর্ষ উদযাপন শহরেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আধুনিক নগরজীবনে এটি পেয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। এখনকার পহেলা বৈশাখ মানেই—লাল-সাদা পোশাক, পান্তা-ইলিশের স্বাদ, ঢাক-ঢোল, আলপনা, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা আর হাজারো মানুষের ঢল। এটি এখন কেবল গ্রাম বাংলার নয়, জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে।

ঢাকার রমনা বটমূলে ভোরবেলা ছায়ানটের সংগীত, চারুকলায় রঙিন মুখোশ, আর বিভিন্ন সংগঠনের মঙ্গল শোভাযাত্রা আজ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাসকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।

➡️ আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্প্রীতির প্রতীক

বাংলা নববর্ষ এখন কেবল বাঙালির নয়, বরং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এটা আমাদের শেখায়—বাঙালি হিসেবে আমাদের একটি নিজস্ব পরিচয় আছে, আর সেই পরিচয়ই আমাদের গর্ব।

আরো পড়ুন: অনলাইন ইনকাম এবার হবেই: রইলো ১০ উপায়, লাগবেনা অভিজ্ঞতা

বাংলা নববর্ষ রচনা – শিক্ষার্থীদের জন্য

ভূমিকা:
বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির অন্যতম প্রাণের উৎসব। এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের এক গর্বিত নিদর্শন। প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ) তারিখে এই দিনটি ঘটা করে পালিত হয়।

মূল বিষয়বস্তু:
বাংলা নববর্ষের দিনে সকালেই শুরু হয় উৎসবের আমেজ। মানুষ নতুন জামাকাপড় পরে, বিশেষ করে লাল-সাদা পোশাক পরার রীতি খুব জনপ্রিয়। ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ, পায়েস, মিষ্টান্নসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন করা হয়।

বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন মিলে ঘুরতে বের হয়, কেউ যায় মেলায়, কেউবা যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। স্কুল-কলেজগুলোতে থাকে বৈশাখী অনুষ্ঠান, দেয়ালপত্রিকা, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনের আয়োজন। ব্যবসায়ীরা এই দিনে হালখাতা খুলে দেনাদারদের আপ্যায়ন করেন।

ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের গানের অনুষ্ঠান ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা এই দিনে বিশেষ গুরুত্ব পায়। মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর স্বীকৃত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

সংস্কৃতি ও গুরুত্ব:
বাংলা নববর্ষ আমাদের শেখায় কীভাবে শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। এটি শুধু উৎসব নয়, আমাদের জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির বর্ণিল প্রকাশ। এই দিনে আমরা পুরনো গ্লানি ভুলে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করি।

উপসংহার:
বাংলা নববর্ষ কেবল একটি দিনের উৎসব নয়—এটি বাঙালির হৃদয়ের উৎসব। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যকে ভালোবাসা ও যত্নের সঙ্গে আগামীতেও বাঁচিয়ে রাখা।

আরও পড়ুন: ফেসবুক স্টোরি থেকে আয়ের সুযোগ: কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য সুখবর, পারবনে আপনিও

বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ

বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এটি প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ) তারিখে ঘটা করে উদযাপন করা হয়। এদিন সবাই নতুন জামা পরে, সকালে পান্তা-ইলিশ খায়, মেলায় যায় এবং আনন্দে মেতে ওঠে। ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে পুরনো হিসাব বন্ধ করে নতুন খাতা শুরু করেন।

ঢাকায় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা এখন ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই দিনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করে, যা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন

বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য

১. পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।
২. এটি প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পালিত হয়।
৩. এই দিনে আমরা পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করি।
৪. পহেলা বৈশাখের প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
৫. অনেক ব্যবসায়ী এই দিনে হালখাতার আয়োজন করেন।
৬. পান্তা-ইলিশ খাওয়া এখন একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
৭. গ্রামে-গঞ্জে হয় বৈশাখী মেলা।
৮. এই দিনটি বাঙালির ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক।
৯. মোগল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন।
১০. পহেলা বৈশাখ ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহ্যবাহী দিন।

আরও পড়ুন :  ২৪০ টাকা ফ্রী বিকাশ পেমেন্ট – সত্যিটা কী? অফার নেই, কিন্তু ইনকামের সুযোগ আছে!

নববর্ষের শুভেচ্ছা

পহেলা বৈশাখ প্রতিবেদন

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে প্রতিবেদন ‍ঠিক এমনটা হওয়া উচিৎ

শিরোনাম: পহেলা বৈশাখে বর্ণিল আয়োজন – দেশজুড়ে প্রাণের উৎসব

রিপোর্টার: নিজস্ব প্রতিবেদক
তারিখ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫
স্থান: ঢাকা

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ ১৪ এপ্রিল দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। ভোরবেলা থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ নতুন পোশাকে ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন উৎসবে যোগ দিতে।

ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের গানে মুখরিত হয় সকাল। এরপর চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা—যা ইউনেস্কো স্বীকৃত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। হাজার হাজার মানুষ মুখোশ পরে, আলপনা আঁকে, রঙিন সাজে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।

দেশের বিভিন্ন জেলায় আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। সেখানে লোকজ পণ্য, পিঠা-পুলি, হস্তশিল্প, খেলনা ও গ্রামীণ খাবারের স্টল বসে। ছোটদের জন্য থাকে পুতুলনাচ, নাগরদোলা, মুখোশ বানানোর ওয়ার্কশপ ইত্যাদি।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে। হাসপাতাল ও দমকল বিভাগ থাকে প্রস্তুত।

পহেলা বৈশাখের এই উৎসব আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

বাংলা নববর্ষ প্রতিবেদন

শিরোনাম: বাংলা নববর্ষে প্রাণের উচ্ছ্বাস – নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা

রিপোর্টার: নিজস্ব প্রতিবেদক
তারিখ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫
স্থান: ঢাকা

আজ ১৪ এপ্রিল, বাংলা ১লা বৈশাখ। বাঙালি জাতি আজ উদযাপন করছে তাদের চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য – বাংলা নববর্ষ। সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়, মেলায়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি উপলক্ষে আয়োজন করে নানা রকম অনুষ্ঠান। গানে, কবিতায়, নাচে, আবৃত্তিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো দেশ।

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয় এবং নতুন হিসাবের সূচনা করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বাংলা নববর্ষ ঘিরে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। দেশি-বিদেশি বাঙালিরা সবাই শুভেচ্ছা জানায় একে অপরকে।

বাংলা নববর্ষ কেবল একটি দিন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের শিকড় ও আত্মপরিচয়ের কথা।

পহেলা বৈশাখ কবে 2025?

অনেকেই জানতে চান, পহেলা বৈশাখ কবে 2025 সালে পড়বে? বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ ১ বৈশাখ প্রতি বছর পালিত হয় ১৪ এপ্রিল তারিখে। ২০২৫ সালেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

➡️ পহেলা বৈশাখ ২০২৫ সালে পড়বে সোমবার, ১৪ এপ্রিল।

এই দিনটি বাংলাদেশে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে থাকে। স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ থাকে এবং দেশব্যাপী চলে উৎসবের আমেজ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হালখাতা আয়োজন করে, পরিবার-পরিজন মিলে দিনটি উদযাপন করে আনন্দঘন পরিবেশে।

সুতরাং, ক্যালেন্ডারে আগেভাগেই টিক দিয়ে রাখুন—১৪ এপ্রিল ২০২৫, কারণ এই দিনটি আমাদের সংস্কৃতির, ঐতিহ্যের ও জাতিসত্তার এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।

বাংলা নববর্ষ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. বাংলা নববর্ষ কে আবিষ্কার করেছিলেন?

বাংলা নববর্ষ আবিষ্কারের কৃতিত্ব মোগল সম্রাট আকবর-এর। তিনি খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সনের প্রচলন করেন।

২. পহেলা বৈশাখের রং কি কি?

পহেলা বৈশাখে সাধারণত লাল ও সাদা রঙ প্রধানত ব্যবহৃত হয়। এই রঙদ্বয় বাঙালির ঐতিহ্য, আনন্দ ও বিশুদ্ধতার প্রতীক।

৩. বৈশাখী মেলার বিশেষ আকর্ষণ কোনটি?

নাগরদোলা, পুতুল নাচ, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খাবার ও লোকগান বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া শিশুরা মুখোশ বানানো ও খেলনায় মজা পায়।

৪. বাংলা নববর্ষ চালু করেন কে?

বাংলা নববর্ষ চালু করেন সম্রাট আকবর, তার শাসনামলে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের প্রচলন হয়।

৫. পহেলা বৈশাখে কি কি অনুষ্ঠান হয়?

এই দিনে হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, হালখাতা, বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা-ইলিশ খাওয়া, আলপনা আঁকা, গান-বাজনা ইত্যাদি।

৬. মঙ্গল শোভাযাত্রা কী?

মঙ্গল শোভাযাত্রা হলো চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা শুভ শক্তির প্রতীক এবং এখন ইউনেস্কোর স্বীকৃত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

৭. বৈশাখ মাস ইংরেজিতে কি মাস?

বৈশাখ মাস সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে পড়ে। পহেলা বৈশাখ হয় প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল

৮. কত সালে সর্বপ্রথম বাংলা নববর্ষের আয়োজন করা হয়েছিল?

প্রথম বাংলা নববর্ষের আয়োজন হয়েছিল আকবরের আমলে, আনুমানিক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে

৯. বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি কী?

বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি মিশ্র সৌর ও চান্দ্র ক্যালেন্ডার থেকে। এটি হিজরি ও বাংলা কৃষিপঞ্জিকার সমন্বয়ে গঠিত হয়।

১০. হালখাতা কেন করা হয়?

হালখাতা করা হয় পুরনো হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য। এটি ব্যবসায়ীদের নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।

শেষ কথা

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ এমন একটি দিন, যা শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নয়, বরং বাঙালির হৃদয়ের পাতায় অমলিনভাবে লেখা থাকে। এই দিনটি আমাদের শিখিয়ে দেয়—নতুন করে শুরু করার সাহসআত্মপরিচয়ের গর্ব, আর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

পহেলা বৈশাখ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রতিকূলতার মাঝেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়, বৈচিত্র্যের মাঝেও ঐক্যের বন্ধন গড়ে তোলা সম্ভব।

চলুন, আসুন আমরা সবাই মিলে বাংলার এই প্রাণের উৎসব—পহেলা বৈশাখকে আরও ভালোবাসি, আরও গভীরভাবে উদযাপন করি।
শুধু উৎসবে নয়, সংস্কৃতিতেও থাকুক আমাদের ভালোবাসার ছাপ।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Leave a Comment