ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ: খামেনিকে হত্যা করলে সংঘাত শেষ হবে— বললেন নেতানিয়াহু, ট্রাম্প দিলেন না সম্মতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন আরও এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন — “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করলে যুদ্ধ বাড়বে না, বরং শেষ হবে।” এ বক্তব্য দিয়েছেন তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ABC News-কে দেওয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য মুহূর্তেই বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কারণ, এটি শুধু ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং বিশ্ব নিরাপত্তার প্রশ্নেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট – কোনো ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে আয় শুরু করুন!

নেতানিয়াহুর মন্তব্য: “যা করা দরকার, তাই করবো”

ABC News-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “খামেনিকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা আছে কি?” উত্তরে নেতানিয়াহু বলেন:

“আমরা যা করা দরকার, তাই করব। ইরান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওরা চায় ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’। আমরা শুধু আত্মরক্ষা করছি।”

তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলকে তারা পরমাণু যুদ্ধের কিনারায় নিয়ে এসেছে। এখন সময় এসেছে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবার।”

‘খামেনি হত্যা পরিকল্পনা’ নিয়ে ট্রাম্পের ভিন্নমত

এর ঠিক একদিন পরই রয়টার্স প্রকাশ করে এক গোপনীয় রিপোর্ট — যেখানে বলা হয়, ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু সে সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ভেটো দেন।

তিন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “নেতানিয়াহু চান খামেনিকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু ট্রাম্প বলেন — ‘এটা কোনও ভালো ধারণা না।’”

রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি এই পরিকল্পনা হয়েছিল। তবে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। পরে Fox News-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন:

“এই বিষয়ে অনেক গুজব আছে। আমি এসব নিয়ে আলোচনায় যেতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি — আমরা আমাদের দেশের সুরক্ষার জন্য যা দরকার, সেটাই করব।”

ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ: পটভূমি

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নতুন নয়। তবে ২০২৫ সালের শুরু থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নেয়।

  • ইসরায়েল দাবি করে, ইরান সিরিয়ায় হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে।
  • অন্যদিকে, ইরান দাবি করে, তারা শুধু নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।

২০২৫ সালের মার্চে, ইরান একটি ড্রোন হামলায় তেল আবিবে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি করে। জবাবে ইসরায়েল ইরানে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। সেখান থেকেই শুরু হয় বর্তমান ইরান ইসরাইল যুদ্ধ

আরো পড়ুন: এড দেখে টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট 2025– ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে আয় করার সহজ উপায়!

সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরিসংখ্যান (জুন ২০২৫ পর্যন্ত)

বিষয়ইরানইসরায়েল
ড্রোন হামলা১৩+
ক্ষয়ক্ষতি (মানব)৭৫০+ নিহত২১০ নিহত
ক্ষয়ক্ষতি (অর্থমূল্য)$1.2 বিলিয়ন$870 মিলিয়ন
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াজাতিসংঘের নিন্দাইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

জাতিসংঘ, ইইউ, এবং আরব লিগ — তিনটিই এ সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন:

“মধ্যপ্রাচ্যের কোনও নতুন যুদ্ধ শুধু ওই অঞ্চলের নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।”

বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যেই তেলের দাম বেড়েছে ১৮%। গোল্ডের দাম নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে ইউএস, ইউকে, এবং কানাডা।

বিশ্লেষণ: খামেনি হত্যার ফলাফল কী হতে পারে?

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন,
“আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হত্যা করা হলে ইরানে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে, যা হঠাৎ করে আরও চরমপন্থার জন্ম দিতে পারে।”
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রিচার্ড মার্টিন বলেন:

“আধুনিক ইতিহাসে দেখা গেছে, কোনও উচ্চ পর্যায়ের নেতাকে হত্যার পর সংঘাত থামে না, বরং জ্বলে ওঠে নতুন আগুন।”

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমির হোসেন বলেন,

“আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যদি নেতানিয়াহু খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করেন, সেটা আমাদের জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হবে।”

জেরুজালেমের এক দোকানি বললেন,

“খামেনি হচ্ছে সমস্যার মূল। ওর মতো লোক থাকলে শান্তি আসবে না।”

উপসংহার: নতুন দিকেই যাচ্ছে সংঘাত?

বর্তমানে “ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ” শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি বিশ্ব নিরাপত্তা, ধর্মীয় নেতৃত্ব, জ্বালানি অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিল ধাঁধায় রূপ নিয়েছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য, ট্রাম্পের ভেটো, এবং খামেনির অবস্থান — সব কিছুই বোঝায়, সামনে হয়তো আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ অনুসরণ করুন

2 thoughts on “ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ: খামেনিকে হত্যা করলে সংঘাত শেষ হবে— বললেন নেতানিয়াহু, ট্রাম্প দিলেন না সম্মতি”

Leave a Comment