বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে আঙুল ফোটানোর এই সাধারণ অভ্যাসে আসলে কতটা প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। অনেকেই কাজের মাঝে বা কোনো চাপের মুহূর্তে আঙুল ফোটান, আবার কেউ কেউ অন্যদের দিয়ে হাত-পায়ের আঙুলও ফোটান। কিন্তু এই অভ্যাসে কী সত্যিই কোনো ক্ষতি হতে পারে? অনেকের মধ্যে রয়েছে সংশয়, বিশেষ করে কিছু মানুষ মনে করেন যে আঙুল ফোটানোর কারণে বাতের অসুখ হতে পারে। তবে কি এটা সত্যি? আসুন জানি, চিকিৎসকদের মতে আঙ্গুল ফোটালে আসলে কি হয় এবং এটি কতটা বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন: বন্ধুত্ব মানে কি- কাছের বন্ধুটি আপনাকে ঠকাচ্ছে না তো? বুঝবেন কিভাবে
আঙুল ফোটানোর প্রভাব:
ভারতের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ প্রশান্তকুমার ভট্টাচার্য আঙুল ফোটানোর বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সাধারণত, আঙুল ফোটালে কোনো সমস্যা হয় না।” এক্ষেত্রে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই যদি কেউ মাঝে মাঝে বা এক-দুবার আঙুল ফোটান। তবে, যদি কেউ প্রতিদিন একাধিকবার আঙুল ফোটান, তবে সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
বলা বাহুল্য, আমাদের জয়েন্টগুলোর মধ্যে থাকে সাইনুভিয়াল ফ্লুইড, যা আমাদের হাড়ের সংযোগস্থলে লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ হাড় দুটি একে অপরের সঙ্গে ঘষা খেতে পারে না। তবে এই ফ্লুইডের পরিমাণ সব সময় সমান থাকে না। কিছু সময় এই ফ্লুইড কমে যায় এবং তখন যদি আঙুল ফোটানো হয়, তখন হাড় দুটি একে অপরের সঙ্গে ঘষা খেতে শুরু করে। এই ঘর্ষণের ফলে জয়েন্টে আঘাত লেগে আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুন: নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় কি: জেনি নিন ১০টি কার্যকর কৌশল
কবে সাবধান হওয়া উচিত?
এখন, যদি আপনি প্রতিদিন আঙুল ফোটানোর অভ্যাসে লিপ্ত থাকেন, তবে সেই জায়গায় প্রদাহ হতে পারে। জয়েন্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইডের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক সময় এমনও হতে পারে যে, আঙুল ফোটানোর ফলে জয়েন্ট ফুলে গিয়ে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করবে। এতে আঙুল নড়াচড়া করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
এছাড়াও, অতিরিক্ত আঙুল ফোটানোর ফলে হাড়ের মধ্যে অবাঞ্ছিত চাপ সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে জয়েন্টের ক্ষতি হতে পারে। তাই, যদি কখনো অনুভব করেন যে আঙুল ফোটানোর পর প্রদাহ, ফুলে যাওয়া বা তীব্র ব্যথা হচ্ছে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক সুন্দর করবেন যেভাবে- রইলো ৭ উপায়
আঙুল ফোটানোর পাশাপাশি আরও কী সাবধানতা নিতে হবে?
আজকাল জীবনযাত্রার ধরন এমনভাবে বদলে গেছে যে, শুধুমাত্র বার্ধক্যই নয়, তরুণদের মধ্যেও হাড়ের সমস্যা বাড়ছে। নিয়মিত ব্যায়াম না করা, পুষ্টিকর খাবারের অভাব এবং দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে কাজ করার কারণে হাড়ের ক্ষয় বাড়ছে। এর ফলে বিভিন্ন জয়েন্টের সমস্যা যেমন আর্থ্রাইটিস, সাইটিকা এবং স্পন্ডিলাইটিস বেড়ে চলেছে।
তাই, আঙুল ফোটানোর পাশাপাশি আপনার হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন, যাতে আপনার জয়েন্ট ও হাড় শক্তিশালী থাকে। পুষ্টিকর খাবার যেমন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন। দুধ, দই, মাছ, সিম, শাকসবজি ইত্যাদি খাবার হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: Cheque সম্পর্কে ৯৯% মানুষই জানে না, যে নিয়ম না জানলে হতে পারে বিপদ
এছাড়া, আঙুল ফোটানোর অভ্যাস যদি একেবারে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়ে শরীরে কোনো সমস্যা তৈরি করে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা:
আঙুল ফোটানোর অভ্যাস স্বাভাবিক হলেও এটি অতি মাত্রায় করতে যেয়ে অনেকের হাড়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই, এটি একটি উপকারী অভ্যাস হতে পারে, তবে সীমিত পরিসরে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে আপনার হাড় ও জয়েন্টকে শক্তিশালী রাখুন, যাতে শরীরের কোনো অংশে চাপ না পড়ে। আর, যদি কখনো আঙুল ফোটানোর পর তীব্র ব্যথা বা সমস্যার অনুভব হয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।