মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি, নাকি যমজ ভাই? কোনটি সত্য- চলছে আলোচনা

হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে শহীদ মুগ্ধ। আর এই আলোচনার শুরুটা হয় মুগ্ধকে নিয়ে ফেসবুকের কিছু পোস্টকে কেন্দ্র করে। যেই পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, মুগ্ধ মারা যাননি, মুগ্ধ নামে কেউ না কি ছিলেনই না। এমনকি মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ দুই ভাই নয়, মুগ্ধই স্নিগ্ধ ছিল, মানুষ একজনই।

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি প্রাণ হারান। আন্দোলনের সময় মুগ্ধকে দেখা যায়, সে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে খাবার পানি ও বিস্কুট বিতরণ করতে।

আরও পড়ুন: চাকরি ছাড়লেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই- নেপথে কারণ কি?

তবে ২০ নভেম্বর রাত থেকে ফেসবুকে মুগ্ধের মৃত্যুর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করা হতে থাকে। এক পোস্টে দাবি করা হয়, “মুগ্ধ মারা যায়নি, মুগ্ধ নামে কেউ ছিলই না! মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ দুই ভাই নয়, মুগ্ধই স্নিগ্ধ ছিল। মানুষ একজনই!”

মুগ্ধের মৃত্যু নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সাপোর্টারস অব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামের একটি গ্রুপে লেখা হয়, “মুগ্ধর ডেডবডির ছবি কেউ দেখে নাই, মুগ্ধর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, জানাজা, কবর কই?”

মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ
মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ

এই অভিযোগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের সমর্থকরা বলেন, “মুগ্ধরা মরে না, তারা চিরদিন বেঁচে থাকবে, আমাদের সকল মানুষের মনে। তাদের এ আত্মত্যাগ যুগ যুগ ধরে সবাই মনে রাখবে। আল্লাহ মুগ্ধকে বেহেশতের উচ্চতর শিখরে পৌঁছে দিক।”

তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে যে, মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ পৃথক দুই যমজ ভাই। ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে উত্তাল রংপুর: মহাসড়ক অবরোধ

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুগ্ধকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “গত ১৮ জুলাই, উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারীরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লে তিনি তাদের জন্য পানি ও খাবার নিয়ে ছুটে যান।”

পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় মুগ্ধ বিক্ষোভকারীদের পানির বোতল ও বিস্কুট বিতরণ করছেন। বিকেল ৫টার দিকে তাকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার কপাল ভেদ করে মাথার ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। পরে তার মরদেহ উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুগ্ধের মৃত্যু ও তার পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে সত্যতা নিশ্চিত করা জরুরি, যেন মুগ্ধের পরিবারের প্রতি সুবিচার করা যায় এবং তার স্মৃতিকে সঠিকভাবে স্মরণ করা হয়।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Leave a Comment