সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইয়াছমিন মিতুর শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেক প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানার এবং অন্যান্য সূত্রের বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত।
আরও পড়ুন: পরকীয়ার সময় ২ কৃষি কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক, অতঃপর…
ভিডিওটির প্রকৃত সত্য
ফ্যাক্টচেক অনুসারে, আলোচিত ভিডিওটি আসল নয়। এটি মূলত অন্য একজন নারীর পুরোনো ঘটনার অডিও সংগ্রহ করে মিতুর একটি বক্তব্যের ভিডিওর সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
- মূল ভিডিও: জাতীয় দৈনিক সমকাল এর ফেসবুক পেজে ১৬ ডিসেম্বর “স্বৈরাচারী আপা বিজয় দিবসকে এতদিন নিজের করে নিত” শীর্ষক একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। সেখানে মিতু বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে বক্তব্য দেন। তার পোশাক, গহনা এবং অঙ্গভঙ্গি এই ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া ক্লিপটির সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। তবে মূল ভিডিওতে শ্লীলতাহানির কোনো অভিযোগ ছিল না; বরং তিনি বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে কথা বলছিলেন।
- অডিওর উৎস: অনুসন্ধানে জানা যায়, “Jewel Jewelrana” নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর অডিও ক্লিপ ব্যবহার করে এটি সম্পাদনা করা হয়েছে। এই অডিওতে বিউটি নামে অন্য এক নারীর বক্তব্য ছিল, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মিতুর ভিডিওতে যুক্ত করা হয়।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার প্রভাব
ফেসবুকে প্রচারিত দুটি ভুয়া ভিডিও ৪৯ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে এবং সাত হাজারেরও বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে। এটি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং সারজিস আলমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২ ঘন্টার চুক্তিতে ‘হিল্লা বিয়ে’: মসজিদের ভেতরে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের মতামত
রিউমর স্ক্যানার এবং অন্যান্য ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম একমত যে, এই ভিডিওটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে যে, এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারের একটি উদাহরণ, যা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দুই বছর পর ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন সরকারি কর্মকর্তা
ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সচেতনতা
এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তেমনি এর অপব্যবহার বিভ্রান্তি ও ক্ষতি করতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো তথ্য যাচাই না করে বিশ্বাস করা উচিত নয়। একই সঙ্গে, ভুয়া তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা এবং সাইবার অপরাধ দমন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
সারজিস আলমের বিরুদ্ধে সমন্বয়ক ইয়াছমিন মিতুর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং ভুয়া ভিডিও দ্বারা সৃষ্ট অপপ্রচার। এ ধরনের ঘটনা থেকে সচেতন থাকা এবং যাচাই-বাছাই করে তথ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।