জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে, যাতে সরকার-অনুদিত পাঠ্যবই স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথাসময়ে বিতরণ করা যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ছাত্রছাত্রীদের হাতে এই পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, গত দুই মাস ধরে বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন, এমনকি সাপ্তাহিক ছুটিও ছুটির দিন হিসাবে গণনা হয়নি। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা পাঠ্যবইয়ের প্রস্তুতি, মুদ্রণ এবং বিতরণ প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছেন।
মঙ্গলবার একটি সরকারি আদেশ জারি করে জানানো হয়, পাঠ্যবই মুদ্রণ ও সরবরাহের কাজটি জাতীয় গুরুত্বের বিষয় হওয়ায়, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আদেশে আরও বলা হয়েছে, “এই বিশেষ পরিস্থিতিতে, পাঠ্যবই বিতরণ সম্পর্কিত যে কোন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বোর্ডের সকল স্টাফের জন্য ছুটি বাতিল করা হয়েছে।”
এছাড়া, এনসিটিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে, এবছর মুদ্রণ এবং সম্পাদনা কার্যক্রমে কিছু বিঘ্ন ঘটে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্ভব হয়েছে। এর ফলে পাঠ্যবই বিতরণের কাজ কিছুটা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা ও অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে তা সামাল দেওয়া হয়েছে।
পাঠ্যবই বিতরণের গুরুত্ব
এনসিটিবি প্রতি বছর দেশে সকল সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাঠ্যবই সরবরাহ করে থাকে। এটি শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের সুষ্ঠু চালনা নিশ্চিত করে। তবে, এই বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য কারণের কারণে মুদ্রণ এবং সম্পাদনা কার্যক্রমে বেশ কিছু বাধা এসেছে।
তবে, এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং অতিরিক্ত সময় দিয়ে সকল বাধা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে যেন কোনো বাধা না আসে, সে জন্য সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্য, যাতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বিতরণ কোনোভাবেই বিলম্বিত না হয় এবং সঠিক সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় বই পায়।
মুদ্রণ কার্যক্রমে বিঘ্ন এবং সমাধান
এ বছর পাঠ্যবইয়ের মুদ্রণ ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেস এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এই কারণে বইয়ের মুদ্রণ এবং সম্পাদনা প্রক্রিয়া পিছিয়ে গিয়েছিল, যা সরকারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সময়মতো বই বিতরণে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছিল।
আরও পড়ুন: খালেদ মুহিউদ্দীন ও ড. আলী রীয়াজের বিতর্কিত টকশো- সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়
এমন পরিস্থিতিতে, এনসিটিবির পক্ষ থেকে বইয়ের মুদ্রণ এবং বিতরণ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। একদিকে, বইয়ের মুদ্রণ এবং সম্পাদনাটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে বই পরিবহনের জন্য আরও বেশি গাড়ি এবং সরবরাহকারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, ধীরে ধীরে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে এবং আশা করা যাচ্ছে, আগামী জানুয়ারির প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর কাজ সম্পন্ন হবে।
ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে খুবই নিষ্ঠাবানভাবে কাজ করছেন। বিশেষত, এই কঠিন সময়ে তাদের সকলেই অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন, যাতে পাঠ্যবইয়ের বিতরণ কোনোভাবেই দেরি না হয়। তিনি আরও জানান, ছুটি বাতিলের এই সিদ্ধান্তটি বোর্ডের সকল কর্মচারীর সহায়তায় সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে।
এনসিটিবির অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, তবে তাঁরা মনে করেন, সরকার যদি কিছু অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে, তবে তাঁদের কাজ আরও কার্যকরী এবং দ্রুত হয়ে উঠবে। একটি বড় অংশের কর্মী জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত কাজ করছেন এবং মাঝে মাঝে তাদের শারীরিকভাবেও ক্লান্তি অনুভূত হয়, কিন্তু তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ছাত্রদের সময়মত বই পৌঁছে দেওয়া।
আরও পড়ুন: তালিকা ফাঁস- ইন্টারপোলের রেড লিস্টে ৬৩ বাংলাদেশি
পাঠ্যবই বিতরণের প্রক্রিয়া
পাঠ্যবই বিতরণের কাজটি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। প্রথমে, বইগুলোর মুদ্রণ সম্পন্ন করা হয়, তারপর সেগুলোকে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বইগুলো পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত কর্মী ও পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এবার, বইগুলো সঠিক সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা ইতিমধ্যেই দেশে পাঠ্যবই সরবরাহের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন এবং বিতরণ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এনসিটিবি জানায়, আগামী বছরগুলোতে পাঠ্যবই বিতরণের কাজ আরও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পাঠ্যবই বিতরণ নিশ্চিত করতে চায়। তাছাড়া, ছাত্রদের জন্য নতুন শিক্ষামূলক কার্যক্রম এবং ডিজিটাল বইয়ের প্রবর্তনও তাঁদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
শেষ কথা
এনসিটিবির এই সিদ্ধান্ত এবং উদ্যোগে বোঝা যায়, সরকারের প্রতিটি শিক্ষা পরিকল্পনা এবং কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব কতটা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সঠিক এবং সময়ে পাঠ্যবই বিতরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও বিভিন্ন বাধা থাকলেও, এনসিটিবির কর্মকাণ্ডে দৃঢ় সংকল্প এবং উৎসাহ স্পষ্ট। তাদের লক্ষ্য হলো ছাত্রদের সময়মতো পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া, যাতে শিক্ষার মান ও কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অঙ্গীকার, তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং সরকারের সহায়তার মাধ্যমে আগামী জানুয়ারির মধ্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হবে এবং দেশের প্রতিটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী নিজেদের প্রয়োজনীয় বই হাতে পাবে।
1 thought on “এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল, পাঠ্যবই বিতরণে প্রস্তুতি”