এনসিটিবি বই বিতরণে দেরি: ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দুঃখ প্রকাশ শিক্ষা উপদেষ্টার

এনসিটিবি বই: বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা একটি দীর্ঘকালীন রেওয়াজ, তবে এবার এটি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বই বিতরণে সৃষ্ট সমস্যা এবং ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, অনেক ধরনের ষড়যন্ত্রের কারণে বই বিতরণে দেরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে বাধা সৃষ্টি করেছে।

এনসিটিবি বই বিতরণের ক্ষেত্রে এই দেরি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, যাদের জন্য নতুন পাঠ্যবই কিছুটা সময় পরেই দেওয়া হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বইগুলো এখনই সকল শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, এবং এজন্য আমি তাদের অভিভাবকদের কাছে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

বই বিতরণে বাধা দেয়ার জন্য যেসব ষড়যন্ত্র হয়েছে, তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা যখন বই বিতরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষ কিছু জায়গায় ষড়যন্ত্র করে বইগুলো আটকে রাখা হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “যদিও আমাদের বই বিতরণে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল, তবুও অনেক মানুষ আমাদের সাহায্য করেছেন এবং তাদের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”

আরও পড়ুন: এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল, পাঠ্যবই বিতরণে প্রস্তুতি

এনসিটিবি বই বিতরণের জন্য যখন বিপরীতমুখী শক্তির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তখন সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং বইগুলো সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা ছিল অব্যাহত। তবে বইয়ের প্রচুর অভাব ছিল, এবং সময়ের অভাবে অনেক বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এনসিটিবি বই

বই বিতরণের নতুন পদ্ধতি

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, এবার থেকে পাঠ্যবই বিদেশে ছাপানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আর বিদেশে পাঠ্যবই ছাপাবো না। আমরা দেশের ভিতরে বই ছাপানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

এনসিটিবি বই বিতরণ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং নতুন পাঠ্যবইয়ের ধরণও বিবেচনায় আনা হয়েছে। ২০১২ সালের কারিকুলাম ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অনেক সমালোচনা হলেও, তা সময়ের অভাবের কারণে পরিবর্তন করতে হয়েছে। “নবম শ্রেণি থেকে উচ্চতর গণিত ও বিজ্ঞান না পড়ানো একটি বড় সমস্যা ছিল। এটি সংশোধন করা হয়েছে,” বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন

নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে বিভিন্ন দিক থেকে প্রশ্ন উঠেছে। তবে, শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, পাঠ্যবইগুলোর পরিমার্জন ও সংশোধন করার কাজ চলছে। এই সময়ের মধ্যে বইগুলো আরও সুন্দরভাবে তৈরি হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় সঠিক দিকনির্দেশনা পায়।

আরও পড়ুন: কমলাপুর রেলস্টেশনে ২০ মিনিট ধরে অশ্লীল ভিডিও: পাথর ছুড়ে মনিটর ভাঙলেন যাত্রী

শিক্ষকরা ও প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। “যেসব প্রেস মালিক ও কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের সাহায্য করেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষত তারা বাজারমূল্যের তুলনায় কম দামে কাগজ সরবরাহ করেছেন, যা আমাদের পক্ষে বই বিতরণের কাজ সহজ করেছে।”

এনসিটিবি বই

বই বিতরণে গত ১০ বছরে পরিবর্তন

আওয়ামী লীগের আমলে, বছরের প্রথম দিন বই উৎসবের আয়োজন করা হতো, যেখানে শিক্ষার্থীরা উৎসবের মাধ্যমে নতুন বই পেতো। কিন্তু গত বছর থেকে সেই উৎসব আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারের বই বিতরণও বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তবে শিক্ষা উপদেষ্টা আশা করছেন, ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করা যাবে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকের বইগুলিও বিতরণ হবে।

আরও পড়ুন: তালিকা ফাঁস- ইন্টারপোলের রেড লিস্টে ৬৩ বাংলাদেশি

এনসিটিবি বই বিতরণ কর্মসূচি শুরু হলেও নানা দিক থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্তমান সরকার এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে এবং আশা করা হচ্ছে যে আগামী দিনে বই বিতরণে আর কোনো সমস্যা হবে না।

ভবিষ্যতের জন্য আশার কথা

এনসিটিবি বই বিতরণের বিলম্ব এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এই কঠিন সময়ে যে সান্ত্বনা পাওয়া গেছে, তা হচ্ছে শিক্ষা উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি। “শিক্ষার্থীরা যখন বই পাবে, তখন তারা দেখতে পাবে, বইগুলো আগের চেয়ে আরও সুন্দরভাবে তৈরি হয়েছে,” তিনি আরও বলেন।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বই বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে, এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবই হাতে পাবেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নতমানের শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিত করা হবে।

এনসিটিবি বই বিতরণে সৃষ্ট সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন সাফল্যের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

Leave a Comment