কুমিল্লা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়ে গোপন বৈঠক আয়োজন করেছিলেন কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল দেবিদ্বার উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির বর্ষ সমাপনী মিলনমেলার ব্যানারে। বৈঠকে শুধুমাত্র এমপির আশীর্বাদপুষ্ট কলেজ শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত আছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার সব উপায় অবলম্বন করবে
তবে এই গোপন বৈঠক আচমকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মোবাইল কোর্টের হানায় পণ্ড হয়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির খবরে বৈঠকস্থল থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা হন্তদন্ত হয়ে ছুটাছুটি করেন এবং অনুষ্ঠান আর শুরু হয়নি। এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল নিজেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এই বৈঠকের সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, এটি শিক্ষক সমিতির প্রোগ্রাম এবং এখানে কোন রাজনৈতিক বিষয় নেই
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও দেবিদ্বার আলহাজ জোবায়দা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং পরে তিনি নিজের রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেন। উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখানে শুধু এমপির কাছের শিক্ষকদেরই দাওয়াত করা হয়েছে এবং এমপি মহোদয়ের আসার কথা ছিল, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে তিনি আসেননি।
কিন্তু এই বৈঠক সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এমপি ফখরুল এমন একটি বৈঠক কেন আয়োজন করেছেন যেখানে প্রিজাইডিং অফিসারদের উপস্থিতি ছিল, তা প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। এছাড়া, এই বৈঠকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে কিনা তা জানানো হয়নি।
এই বৈঠকের সম্পর্কে ম্যাজিষ্ট্রেট অতীশ সরকার বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে আসার পর আয়োজকরা জানিয়েছেন, এটি শিক্ষক সমিতির প্রোগ্রাম। কিন্তু আমরা শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছি। যদি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনও তথ্য উল্লেখ থাকে, তাহলে আমরা প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করব”।
এই ঘটনা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে ধরে। নির্বাচনের আগে প্রিজাইডিং অফিসারদের সাথে একজন সংসদ সদস্যের গোপন বৈঠক আয়োজন নির্বাচনী আইন ও নীতির পরিপন্থী এবং এটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত করার সম্ভাবনা তৈরি করে।
এই বৈঠকের সম্পর্কে আরও তদন্ত চালানো হচ্ছে এবং এর ফলাফল অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। এই বৈঠকের সত্যি উদ্দেশ্য কী ছিল, তা সঠিকভাবে বুঝতে হবে তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করে।
1 thought on “প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়ে গোপন বৈঠকে ম্যাজিস্ট্রেটের হানা”