পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিশেষ দিনটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য এক মহান আনন্দের মুহূর্ত, এবং তারই মধ্যে, সরকার ঈদের দিনে সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে টানা ৯দিন ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি ভোগ করতে পারবেন।
তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও ছুটি কার্যকর হবে না, যা প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রজ্ঞাপনটি রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি সব অফিসে ছুটি থাকবে, কিন্তু কিছু জরুরি পরিষেবা ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
কোন কোন সেবা থাকবে ছুটির আওতার বাইরে?
সরকারি ছুটির আওতায় থাকবে না জরুরি সেবা সম্পর্কিত সমস্ত কার্যক্রম, যেমন:
- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি পরিষেবা,
- ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম,
- টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাক সেবা, এবং সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা।
এছাড়া, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা সম্পর্কিত কর্মীরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক এবং কর্মীসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহনও ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
ব্যাংকিং ও আদালতের কার্যক্রম
ছুটি চলাকালীন ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কিত নির্দেশনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে বিচারব্যবস্থা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
আরও পড়ুন
এভাবে, ৩ এপ্রিল ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত ও সেবার কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে। ছুটির দিনটি আনন্দ ও পবিত্রতার সঙ্গে উদযাপনের পাশাপাশি, জরুরি সেবা সম্পর্কিত কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, যাতে দেশের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বজায় থাকে।
ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি
সরকার আগেই ঈদের জন্য পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছিল। ৩১ মার্চ সম্ভাব্য ঈদ ধরে নির্ধারিত এই ছুটি শুরু হওয়ার কথা ২৯ মার্চ থেকে। তবে ক্যালেন্ডারের পাতায় ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন, ২৮ মার্চ শুক্রবার একই দিনে সাপ্তাহিক ছুটি এবং পবিত্র শবে কদরের ছুটি হওয়ায় কার্যত ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে একদিন আগেই।
পূর্ব ঘোষিত এই ছুটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২ এপ্রিল। কিন্তু পরদিন ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার একদিন অফিস চালু থাকায়, আবার পরবর্তী দুই দিন (৪ ও ৫ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটি পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ৩ এপ্রিলকে নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় টানা ৯ দিন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করতে পারবেন তারা।
আরো পড়ুন: ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত


এদিকে, ঈদের ছুটির আগেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ছুটি পড়ছে—২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এর পরদিন, অর্থাৎ ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার শুধু একদিন অফিস থাকবে খোলা। সেই দিন কেউ অর্জিত ছুটি বা ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারলে আরও দীর্ঘ হবে ঈদের ছুটি। এই দীর্ঘ ছুটি ঈদের উৎসবকে আরও আনন্দময় করে তুলবে বলেই আশা করছে সরকারি চাকরিজীবীরা।
বর্তমানে দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পরিবার রয়েছে, যারা দীর্ঘ ছুটির অপেক্ষায় দিন গুনছেন। বিশেষ করে গ্রামে থাকা পরিবারগুলোর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারার সুযোগটিই তাদের কাছে বিশেষ কিছু। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলো থেকে লাখো মানুষের ঈদে বাড়ি ফেরার দৃশ্য সবসময়ই ছিল আলোচিত। এবারের দীর্ঘ ছুটি সেই ঈদযাত্রার চাপ কিছুটা কমিয়ে আনবে, এমনটাই আশা করা যাচ্ছে।
আরো পড়ুন: ঈদুল ফিতর ২০২৫ কত তারিখে: যেভাবে মিলবে টানা ৯ দিনের ছুটি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্ধারিত সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য বছরের শুরুতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। যারা আগেই এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন, তারা এবারের ঈদে আরও দীর্ঘ ছুটি ভোগ করতে পারছেন।
তবে জরুরি সেবাসংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, হাসপাতালসহ জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত অফিসগুলো তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী ছুটি ঘোষণা করবে। এই ছুটি ঘোষণায় জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কর্মরত দুই লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদের ছুটির বিষয়েও আলোচনা চলছে। প্রতিবছরই বিশেষ ব্যবস্থায় ঈদের আগের দিনগুলোতে কিছু ব্যাংক শাখা খোলা রাখা হয়। তবে এবারের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু ব্যাংক খোলা রাখা হতে পারে।
আরো পড়ুন: 2025 সালের সেরা ঈদের শুভেচ্ছা: ফেসবুক স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, মেসেজ ও কবিতা


পোশাকশিল্পে ছুটি
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ছুটি নিয়েও রয়েছে আলাদা আগ্রহ। দেশে বর্তমানে ৩০ লাখেরও বেশি পোশাক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ইতিমধ্যে কারখানা মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ঈদের দু-তিন দিন আগেই শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়। এতে ঈদের আগের দিনগুলোতে সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থায় চাপ কিছুটা কমে আসবে। শ্রমিকদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার জন্য বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছে সংগঠনটি।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “ঈদের আগে কাজের চাপের কারণে বেশিরভাগ কারখানাই শেষ কর্মদিবসেই ছুটি দেয়। তবে এবার কারো সুযোগ থাকলে আগেই শ্রমিকদের ছুটি দেওয়ার অনুরোধ করেছি।”
সরকারের দীর্ঘ ছুটি ঘোষণার খবরে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে হাজারো পরিবারে। রাজধানীর একটি সরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, “এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি আমাদের জন্য বড় আনন্দের খবর। দীর্ঘ সময় পর বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামে সময় কাটাতে পারব। পরিবার নিয়ে পরিকল্পনাও সাজিয়েছি।”
সর্বোপরি, ঈদের দীর্ঘ ছুটি কেবল আনন্দ আর বিশ্রাম নয়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করারও এক মহাসুযোগ। এ সুযোগকে কেন্দ্র করে লাখো পরিবার এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছে, বাড়ছে উৎসবের আমেজ।