বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা একটি সাধারণ ঘটনা। তবে কখনও কখনও এই বন্যা মানুষের জীবনে এমন করুণ পরিস্থিতি তৈরি করে, যা হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠে। আজকের গল্পটি এমনই এক করুণ কাহিনী, যেখানে ছেলের হাত থেকে বৃদ্ধ বাবাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় বানের স্রোত। এই ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির অসহায়ত্ব এবং মানুষের সীমাবদ্ধতা।
আরও পড়ুন: মুশফিক-লিটনের মহানুভবতা: বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য প্রাইজমানি দান
মূল কাহিনী
ক্যান্সার আক্রান্ত ষাটোর্ধ্ব শহিদুল ইসলামকে চিকিৎসা করাতে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে আবদুর রহিম। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ফেনীতে বন্যার কারণে তাদের গাড়ি থেকে নামতে হয়। লালপোল এলাকায় এসে তারা পানির তীব্র স্রোতের মধ্যে পড়েন। আবদুর রহিম তার বাবার হাত ধরে স্রোত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্রোতের তোড়ে বাবাকে ধরে রাখতে পারেননি। তার চোখের সামনেই বানের পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায় বৃদ্ধ বাবাকে।
দুই দিন পর, লালপোলের একটু দূরে শহিদুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। বাবার লাশ সামনে নিয়ে আবদুর রহিমের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। শহিদুল ইসলামের আরেক ছেলে সাইফুল ইসলামও সেখানে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তার সাথে যোগ দেন শহিদুল ইসলামের আরেক ছেলে সাইফুল ইসলাম। দুই ভাইয়ের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। একই সময়ে, পলাশ কর্মকার তার নিখোঁজ ভাই কালাচান কর্মকারকে খুঁজছিলেন, যিনি ফেনীর ছাগলনাইয়ার শান্তিরহাট বাজারে স্বর্ণের দোকান থেকে স্বর্ণ সরিয়ে নেওয়ার সময় নিখোঁজ হন। পরে তিনি ভাইকে জীবিত খুঁজে পান।
ফেনীর বন্যায় বিধ্বস্ত জনপদে আরও তিনটি লাশ পাওয়া যায়, যার মধ্যে একটি অজ্ঞাত শিশুর লাশ এবং কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রামনগরে ফরিদ মিয়ার লাশ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: নেপথ্যের কারণ ও পরিণতি
বন্যার কারণে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মধুগ্রামের নেপাল কর্মকার পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে বাড়ির ছাদে আটকে আছেন। তার তিনটি গরু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে এবং গত চার দিনে কোনো ত্রাণ পাননি। ফাজিলপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফরিদুর রহমানের দুটি অটোরিকশা বন্যায় ডুবে গেছে, যা তার পরিবারের জীবিকার উৎস ছিল। মুহুরীগঞ্জ এলাকার মর্জিনা আক্তার পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাগলনাইয়া বাজারের ব্যবসায়ী সুজিত বাবুর চালের দোকান ও গোডাউনের প্রায় তিন হাজার বস্তা চাল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপসংহার
এই করুণ কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদের কতটা অসহায় হতে হয়। পরিবারের সদস্যদের হারানোর ব্যথা এবং সেই সঙ্গে জীবনের অনিশ্চয়তা আমাদেরকে আরও সচেতন করে তোলে। এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও প্রস্তুত হওয়া এবং একে অপরকে সাহায্য করা। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব।