হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কামরুল হাসান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই রায়ের সময় আদালত কক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্যারিস্টার সুমন । তার এই পরিস্থিতি আদালত কক্ষে উপস্থিত অনেককেই হতবাক করে।
আরও পড়ুন: ডিবি হারুন এর সেই রিসোর্ট এখন শিয়াল-কুকুরের দখলে
মামলার পটভূমি
গত ১১ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সুমনসহ ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ছাত্র আন্দোলনে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার সঙ্গে সুমন জড়িত। এই মামলায় আরও প্রায় ২০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিটন রায় সুমনের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
বুধবার ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রিজনভ্যানে করে তাকে হবিগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
আরও পড়ুন: অস্থির বাংলাদেশ সচিবালয়: কাজের চেয়ে আলোচনা বেশি
আদালতে সুমনের কান্না এবং জনতার ক্ষোভ
ব্যারিস্টার সুমনকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দেখতে আদালত চত্বরে ভিড় জমান শত শত মানুষ। বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে সুমনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং তার শাস্তির দাবি করেন। আদালতে প্রবেশের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যানে ডিম ছুড়ে মারেন।
এ সময় ব্যারিস্টার সুমনের আইনজীবীরা আদালতে জানান, সুমন ওই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। তারা দাবি করেন, ঘটনার দিন সুমন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সুমনের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সমর্থকের ভিডিও ধারণের চেষ্টা
আদালত চলাকালে সুমনের এক সমর্থক ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। এই ঘটনা আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। আইনজীবীরা ওই সমর্থককে ধাওয়া করলে তিনি পালিয়ে যান। এ ঘটনার ফলে আদালতে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদের এখন কোথায়, তাকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষের আইনজীবী সহিদুল ইসলাম বলেন, “এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। সুমনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত নয়। আমরা আদালতে এ বিষয়টি তুলে ধরেছি এবং তার রিমান্ডের বিরোধিতা করেছি। কিন্তু আদালত আমাদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।”
জনতার প্রতিক্রিয়া এবং আদালতের নিরাপত্তা
ব্যারিস্টার সুমনকে আদালতে আনার সময় জনতা উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। তারা তার ফাঁসির দাবিও করে। এমনকি তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়। এই পরিস্থিতিতে আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ব্যারিস্টার সুমনের অবস্থান
সুমন দাবি করেছেন যে, তিনি এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ এবং তার সঙ্গে কোনোভাবেই এই ঘটনার সম্পর্ক নেই। তার আইনজীবীরা আদালতে এ বিষয়টি তুলে ধরে তার নির্দোষিতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই দাবিকে নাকচ করে জানায় যে, সুমন সরাসরি এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন।
ব্যারিস্টার সুমনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর তাকে দুই দিনের জন্য পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং মামলার প্রকৃত সত্য বের করতে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তবে জনতার ক্ষোভ, আদালতের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ এবং সুমনের কান্নায় ভেঙে পড়া—সব মিলিয়ে এই মামলার পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিচ্ছে।