তুমি কি ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে আয় করো বা করতে চাও? তাহলে ২০২৫ সালের জুলাই ১৫ থেকে চালু হওয়া নতুন YouTube monetization policy আপডেট সম্পর্কে না জানলে বড় বিপদে পড়তে পারো!
⛔ কারণ ইউটিউব এবার খুবই কড়া নজর দিচ্ছে “ইনঅথেনটিক কনটেন্ট (Inauthentic Content)” এর উপর, যেটা সরাসরি তোমার ইনকামের পথ বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু একটু চালাক হলে এটাকে তুমি নিজের জন্য সুযোগে পরিণত করতে পারো!
এই আর্টিকেলে তুমি জানতে পারবে:
- ইউটিউব ইনঅথেনটিক কনটেন্ট কী?
- কোন কোন ভিডিও এখন আর মনিটাইজ করা যাবে না?
- AI কনটেন্ট কি এখন নিষিদ্ধ?
- ইউটিউব কীভাবে এইসব ধরছে?
- কিভাবে তুমি নিরাপদে আয় করতে পারো?
চলো তাহলে একদম ডিটেলসে ঢুকে যাই।
আরো পড়ুন: মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করার উপায় খুঁজছেন? রইলো ১০টি পরীক্ষিত সহজ পথ
ইনঅথেনটিক কনটেন্ট (Inauthentic Content) আসলে কী জিনিস?
এই শব্দটা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই — যদি তুমি সত্যিকারের ক্রিয়েটিভ কাজ করো। কিন্তু তুমি যদি নিচের কাজগুলো করো, তাহলে ইউটিউব থেকে খারাপ খবর আসতে পারে:
✔️ AI দিয়ে তৈরি ভয়েস ও কপি-পেস্ট স্ক্রিপ্ট: যেখানে কোনো নিজস্ব ইনপুট নেই, শুধু মেশিনের উপর নির্ভর করে ভিডিও বানানো হয় ⛔
✔️ একই ধাঁচের স্লাইডশো বা রিপিটেড ভিডিও: বারবার একই ফরম্যাট ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করছো — কোনো ভিন্নতা বা নতুনত্ব নেই ⛔
✔️ রিঅ্যাকশন ভিডিও হলেও নিজের কোনো প্রতিক্রিয়া বা ব্যাখ্যা নেই: শুধু অন্যের কনটেন্টে বসে থাকা, নিজের মতামত বা টাচ নেই ❌
আরও পড়ুন
✔️ শুধু সাবটাইটেল চালিয়ে দেওয়া, কোনো ব্যাখ্যা বা উপস্থাপনা ছাড়াই: দর্শকের জন্য ব্যক্তিগতকরণ নেই ❌
এই ধরনের কনটেন্টকে ইউটিউব এখন বলছে “inauthentic”, অর্থাৎ এমন ভিডিও যা দেখে মনে হয় না মানুষের হাতে তৈরি — বরং রোবটিক ও একঘেয়ে।
আগে এই ধরনের কনটেন্টকে “repetitious content” বলা হতো। এখন শুধু নাম বদলায়নি, বাস্তবায়ন আরও কঠোর হয়েছে।
✅ তাই এখন YouTube স্পষ্ট বলছে — “এই ধরনের কনটেন্ট আর মনিটাইজযোগ্য নয়।” অর্থাৎ, শুধু আপলোড করলে আর আয় হবে না!
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা


এখন কোন কোন ধরনের কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি রিস্কে আছে?
নিচের ধরণের কনটেন্ট বানিয়ে থাকলে সাবধান! ইউটিউব এখন এই ধরনের ভিডিওকে সবচেয়ে বেশি সন্দেহের চোখে দেখছে:
✔️ যেসব ভিডিও মাসের পর মাস একঘেয়ে ভাবে বানানো হয়, অথচ তাতে মানুষের কোনো নিজস্ব ইনপুট নেই।
✔️ AI দিয়ে বানানো স্ক্রিপ্ট আর সেই সাথে AI ভয়েস — কোনো মানুষের কণ্ঠ বা চিন্তা নেই, শুধু রোবটের কথা।
✔️ একই স্টাইলে বানানো স্লাইডশো ভিডিও — যেগুলোর স্ক্রিপ্ট, ভিজ্যুয়াল এমনকি ন্যারেশনও একই রকম!
✔️ রিঅ্যাকশন ভিডিও হলেও নিজের কোনো রিয়েল রিঅ্যাকশন নেই — শুধু অন্যের ভিডিও চালিয়ে দিচ্ছো, ব্যস!
✔️ অটো-ভয়েস, সাবটাইটেল বা মেকানিকাল উপস্থাপনা, যেগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত স্পর্শ বা বাস্তবতা নেই।
এইসব ভিডিও এখন demonetize হওয়ার সবচেয়ে বড় টার্গেট!
AI দিয়ে ভিডিও বানালে কি ইউটিউব ব্যান করে দেবে?
না, একদমই না! ইউটিউব AI-কে কোনোভাবেই নিষিদ্ধ করছে না। বরং তারা বলছে:
“তুমি AI ইউজ করতেই পারো — কিন্তু সেটা যেন মানুষিক চিন্তা, আবেগ আর সৃষ্টিশীলতায় পূর্ণ হয়।”
❓তাহলে ইউটিউব আসলে কী চাচ্ছে?
✧ AI দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখা? ঠিক আছে, কিন্তু সেটা কপি-পেস্ট না করে নিজের মতামত, ব্যাখ্যা আর অভিজ্ঞতা যোগ করতে হবে।
✧ Text-to-Speech ভয়েস? চলবে, তবে তাতে যেন আবেগ, টোন, আর ব্যক্তিত্ব থাকে। যেটা শুনে দর্শক বুঝতে পারে — এটা কারো রোবটিক পড়া নয়।
✧ ভিডিও এডিটিং বা প্রেজেন্টেশন: যেকোনো AI টেমপ্লেট বা সফটওয়্যার ইউজ করতে পারো, কিন্তু তোমার কনটেন্ট যেন ইউনিক গল্প বলে, যেটা অন্য কেউ বলছে না।
→ সংক্ষেপে বললে — AI হবে হেল্পার, তুমি থাকবে রিয়েল ক্রিয়েটর হিসেবে সামনে।
AI যদি হয় গাড়ি, তাহলে তুমি হবে ড্রাইভার — YouTube চায় তুমি হ্যান্ডেল ধরো, না হলে তারা তোমাকে রাস্তা থেকেই নামিয়ে দেবে!
আরও পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম: বিকাশ, নগদ বা রকেটে পেমেন্ট
ইউটিউব আসলে কিভাবে বুঝে ফেলে কোন ভিডিও ইনঅথেনটিক?
তুমি ভাবছো — “ভাই, এত ভিডিও! YouTube কিভাবে ধরে ফেলে কোনটা কৃত্রিম?”
উত্তরটা সিম্পল: AI দিয়ে বানানো ভিডিও চেনার জন্য YouTube নিজেই এখন AI ইউজ করছে!
✅ ইউটিউব এখন যেসব জিনিস স্ক্যান করে:
→ ভিডিওর থাম্বনেইল, টাইটেল আর ডিসক্রিপশন:
তুমি যদি একঘেয়ে বা জেনারেটেড টেক্সট ব্যবহার করো, তাহলে YouTube এর অ্যালগরিদম সেটা ধরে ফেলে।
→ ভয়েস ও স্ক্রিপ্ট প্যাটার্ন:
রোবটিক ভয়েস, মেশিন-লাইক টোন, অথবা স্ক্রিপ্টে বারবার একই স্টাইল — সবগুলোই রেড ফ্ল্যাগ!
→ ইউজার এনগেজমেন্ট আর ওয়াচ টাইম:
যদি কেউ ভিডিও ক্লিক করেই স্কিপ করে, বা কমেন্ট/লাইক কম হয় — সেটা ইউটিউবের চোখে সন্দেহজনক।
✧ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়…
YouTube এখন কোনো রকম মানব রিভিউ ছাড়াই অটো-মেটেড সিস্টেম দিয়ে চ্যানেল demonetize করে দিচ্ছে!
→ তাই ভাবছো, “এত কিছু বুঝবে কিভাবে?” — উত্তর সহজ: YouTube এখন মানুষ নয়, AI দিয়ে মানুষ খুঁজছে।
তোমার কনটেন্টে যদি সত্যিকারের মানবিক স্পর্শ না থাকে, তাহলে সেটা ধরা পড়বেই!
তাহলে কোন কোন ভিডিও এখনো মনিটাইজ হচ্ছে?
ভয় পাওয়ার কিছু নেই! YouTube এখনো অনেক ধরনের কনটেন্টকে মনিটাইজ করছে — যতক্ষণ না তা অরিজিনাল, ভ্যালুসমৃদ্ধ আর মানুষিক স্পর্শে ভরা।
✨ নিচের ধরণের ভিডিওগুলো এখনো একদম সেফ জোনে:
✅ ইউনিক টিউটোরিয়াল বা পার্সোনাল গাইড:
যেখানে তুমি নিজেই শেখাচ্ছো — সেটা স্কিল, সফটওয়্যার, বা লাইফ টিপস যাই হোক না কেন। দর্শক বুঝতে পারছে, এটা কোনো রোবটের লেখা নয় — তোমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আসা।
✅ অরিজিনাল ভ্লগ, শর্ট ফিল্ম বা স্কেচ ভিডিও:
যেখানে তোমার মুখ, গল্প, অভিনয় — সবকিছুতে হিউম্যান টাচ আছে। YouTube এখন এই রকম কনটেন্টকেই ভালোবাসে
✅ রিঅ্যাকশন ভিডিও — যেটাতে সত্যিকারের প্রতিক্রিয়া আছে:
যদি তুমি শুধু ভিডিও চালিয়ে বসে না থাকো, বরং নিজের মতামত, রিয়েকশন, বা ব্যাখ্যা দাও — সেটাই হয় মনিটাইজযোগ্য।
✅ “হাও টু” বা ব্যাখ্যামূলক ভিডিও:
যেখানে দর্শক কিছু শিখছে — আর তুমি সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছো তোমার ভাষায়, তোমার উদাহরণে।
✅ ইনফরমেটিভ ভিডিও যেটা একটা গল্পের মতো:
ডেটা বা নিউজ দিয়েও যদি তুমি সেটা গল্পের মতো উপস্থাপন করো, ব্যস — মনিটাইজড! YouTube storytelling-কে ভীষণভাবে প্রাধান্য দিচ্ছে এখন।
→ সংক্ষেপে বললে — যেটাতে মানুষ আছে, সেটাই টিকে থাকবে।
তুমি যদি কনটেন্ট বানাও যেখানে মানুষ মানুষকে কিছু বলছে, সেটাই ইউটিউবের ভবিষ্যৎ কনটেন্ট।
YouTube Monetization Policy Update কি শুধু আমেরিকার জন্য?
না, YouTube স্পষ্ট জানিয়েছে — এই পলিসি গ্লোবালি প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ, ভারত, ইউকে, মধ্যপ্রাচ্য—যেখানেই চ্যানেল হোক না কেন, সব জায়গায় একই রুলস।
কেন YouTube এখন এত কড়া হচ্ছে?
Statista এর ডেটা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ ৩ মাসেই ৯.৫ মিলিয়ন ভিডিও ডিলিট করা হয়েছে — মূলত রোবটিক, AI বানানো কনটেন্টের কারণে।
YouTube এখন চায়:
“Authentic creators যাঁরা মানুষকে ভ্যালু দেন, তাদেরই প্ল্যাটফর্মে টিকিয়ে রাখতে।”


YouTube থেকে আয় করতে চাইলে এখন কী করবো?
→ নিজের ভয়েস ইউজ করো
→ কনটেন্টে নিজের মতামত ও অভিজ্ঞতা যোগ করো
→ গল্প বলো, শুধু তথ্য দিও না
→ একই টেমপ্লেট বারবার ইউজ কোরো না
→ Studio-তে গিয়ে AI disclosure দাও
→ রেগুলারলি পলিসি রিভিউ করো
টিপস ফর ক্রিয়েটরস:
➡️ “দর্শক যেন ভাবে, এই ভিডিও আমার জন্য বানানো হয়েছে” — সেই টোন আনো
➡️ ভয়েস টোনে বাস্তবতা, আবেগ থাকুক
➡️ boring স্ক্রিপ্টে spice দাও — storytelling, fun, relatability
➡️ thumbnail + title = curiosity trigger হওয়া উচিত
এই আপডেট কি বিপদ, নাকি সুযোগ?
আসলে এটা একটা wake-up call! YouTube এবার সত্যিকারের ক্রিয়েটরদের পাশে আছে। যারা অরিজিনাল কনটেন্ট বানায়, মানুষকে শেখায় বা বিনোদন দেয় — তাদের জন্য এটা বড় সুযোগ।
তুমি যদি নিজের চিন্তা, কণ্ঠ, ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে ভিডিও বানাও — YouTube তোমার সঙ্গে আছে
উপসংহার: সময় এখন হিউম্যান টাচে ফিরে যাওয়ার
২০২৫ সালের YouTube monetization policy আমাদের মনে করিয়ে দেয় — “Audience-first” is the new rule. তাই এখন সময় নিজের চ্যানেল রিভিউ করার, কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি সাজানোর এবং AI কে হেল্পার হিসেবে রেখে, নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করার।
তোমার কনটেন্ট যদি মানুষকে কিছু শেখায়, হাসায়, কাঁদায় বা ভাবায় — YouTube তোমাকে স্যালুট করবে। আর শুধু ফাঁকিবাজির কনটেন্ট হলে? মনিটাইজেশন তো গেলই, চ্যানেলও হারাতে পারো!
তাই সাবধান, সচেতন, আর স্মার্ট হও — আয়ও হবে, ব্র্যান্ডও হবে! ✨