আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হলো ক্রিকেট জগতের দুই দিগ্গজ দল – অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই হাইভোল্টেজ ম্যাচে দর্শকরা দেখলেন এক রোমাঞ্চকর লড়াই, যেখানে ভারতীয় বোলিং আক্রমণ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপকে ২৬৪ রানে সীমিত করল।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বরুণের জাদুতে থামল হেডের দাপট
ম্যাচের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল যখন ভারতের মিস্ট্রি স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণাত্মক ওপেনার ট্রাভিস হেডকে আউট করলেন। হেড, যিনি গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়ে আসছিলেন, এবার বরুণের ভেলকিতে পড়ে ৩৯ রানে পেভিলিয়নে ফিরতে বাধ্য হলেন।
হেডের এই আউট বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ:
- এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ৭৩তম ওয়ানডে ম্যাচ।
- এর আগে কখনও ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে কোনো স্পিনারের বলে আউট হননি হেড।
- পাওয়ারপ্লেতে স্পিনারের বিরুদ্ধে তার রেকর্ড ছিল অসাধারণ – ১১৭ বলে ১৩৫ রান, স্ট্রাইক রেট ১১৫.৩৮।
বরুণ চক্রবর্তীর এই সাফল্য শুধু ভারতীয় দলকে নয়, সমগ্র ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের উচ্ছ্বসিত করে তুলল। কারণ হেড ছিলেন সেই ব্যাটসম্যান যিনি ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে দলকে জয়ী করেছিলেন।
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫: ম্যাচের গতিপথ
টস জিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড দ্রুত রান তুলতে থাকেন। কিন্তু নবম ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর প্রবেশ পুরো ম্যাচের মোড ঘুরিয়ে দেয়।
হেডের আউটের পর অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস ধীরে ধীরে গতি হারাতে থাকে। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ৯৬ বলে ৭৩ রান করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মধ্য ওভারগুলোতে ভারতীয় স্পিনাররা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন।
আরও পড়ুন
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজ ২০২৫
- বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজ ২০২৫: সময়সূচি, স্কোয়াড ও খেলার আপডেট
- Pakistan vs New Zealand: হার, হতাশা আর এক পেসারের আর্তনাদ
- সাকিব আল হাসান: মুল্যায়নের পর বোলিং করার ছাড়পত্র পেলেন আইসিসিরি
- IND VS NZ ফাইনাল না হলে কার হাতে যাবে ট্রফি? ম্যাচ টাই হলে কী হবে?
শেষদিকে অ্যালেক্স ক্যারি ৩৪ বলে ৩৯ রান করে দলের স্কোর বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা শেষ কয়েকটি উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ রানে অলআউট করে দেন।
বরুণের উত্থান
বরুণ চক্রবর্তীর এই পারফরম্যান্স তার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর এবার সেমিফাইনালেও নিজের প্রতিভার ছাপ রাখলেন তিনি।
বরুণের সাফল্যের পিছনে একটি বড় ভূমিকা রয়েছে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির। সেমিফাইনালের আগে গাঙ্গুলি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, হেডকে আটকাতে বরুণের ভেলকি কাজে লাগাতে পারে। রোহিত শর্মা সেই পরামর্শ কাজে লাগিয়ে সঠিক সময়ে বরুণকে বোলিংয়ে আনেন, যা ফলপ্রসূ হয়।
আরো পড়ুন: Top Bangladeshi App প্রতিদিন 1000 টাকা ইনকাম পেমেন্ট বিকাশ
ভারতের বোলিং কৌশল
ভারতীয় বোলিংয়ের সাফল্যের পিছনে রয়েছে সুচিন্তিত কৌশল। দুবাইয়ের পিচে স্পিনারদের সুবিধা থাকবে জেনে ভারত চারজন স্পিনার নিয়ে নেমেছিল – বরুণ চক্রবর্তী, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেল।
এই চার স্পিনার মিলে ৩৩.৩ ওভার বোলিং করে ১৪৯ রান দিয়ে ৭ উইকেট তুলে নেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী, যিনি ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।
পেস বোলিংয়ে মোহাম্মদ শামি ও জসপ্রীত বুমরাহও ভালো বোলিং করেন। শামি ৯ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, আর বুমরাহ ৭ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট তোলেন।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ব্যর্থতা
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপ এদিন তেমন দাপট দেখাতে পারেনি। ট্রাভিস হেড ৩৯, স্টিভ স্মিথ ৭৩ ও অ্যালেক্স ক্যারি ৩৯ রান করা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।
মার্নাস লাবুশেন (২২), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৮) ও মার্কাস স্টোইনিস (১৭) – এই তিন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ভালো শুরু পেয়েও বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ হন। ফলে অস্ট্রেলিয়া ৩০০+ রানের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে থেকে যায়।


ভারতের রান তাড়া
২৬৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছে ভারত। রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল ওপেনিংয়ে নেমে দ্রুত রান তুলছেন। প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৫ রান তুলেছে ভারত।
রোহিত ২৮ বলে ৩৫ ও গিল ৩২ বলে ২৮ রান করে খেলছেন। দুজনেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলছেন, যা ভারতকে এগিয়ে রাখছে।
অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা এখনও কোনো সুযোগ পাননি। প্যাট কামিন্স, জশ হেজলউড ও মিচেল স্টার্ক – তিন পেসারই রান রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাও এখনও কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি।
আরো পড়ুন: নারীদের ঘরে বসে কাজ: 2025 সালের সেরা ১০টি সহজ উপায়
সামনের চ্যালেঞ্জ
ভারতের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই ভালো শুরুকে কাজে লাগিয়ে জয় নিশ্চিত করা। মধ্য ওভারগুলোতে বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার ও কেএল রাহুলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য হবে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তোলা। তাদের মূল আশা স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা, যিনি মধ্য ওভারগুলোতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ভালো বোলিং করে থাকেন।
উপসংহার
বরুণ চক্রবর্তীর অসাধারণ বোলিং ও ভারতীয় স্পিনারদের দাপটে অস্ট্রেলিয়াকে ২৬৪ রানে সীমিত করা ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য। এখন ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু পেয়ে গেছে ভারত। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে এখনও অনেক পথ বাকি।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল যদি এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এখন ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় রয়েছে ফাইনালে ভারতের পারফরম্যান্স দেখার জন্য।