ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট সিরিজটি সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ এবং বিতর্কিত মুহূর্তে পূর্ণ। বিশেষত, দুটি দলের মধ্যে চলমান বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পঞ্চম টেস্টে সিডনি টেস্টের প্রথম দিনে এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এবার, বিরাট কোহলির ক্যাচের ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। কোহলি স্লিপে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন বলে দাবি, কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তাকে বাঁচিয়ে দেয়, যাকে ঘিরে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
এই বিতর্কটি ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দলের মধ্যে এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, যা ইতিমধ্যে ক্রিকেট বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী ঘটেছিল সেই মুহূর্তে এবং কীভাবে এই বিতর্কের শিকড় আরও গভীর হয়েছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
সিডনি টেস্টের প্রথম দিনে ক্যাচ বিতর্ক
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পঞ্চম টেস্টে সিডনি টেস্টের প্রথম দিনেই এক নতুন বিতর্কের জন্ম হয়। ভারতীয় দল তাদের দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর বিরাট কোহলি ব্যাটিংয়ে এসে প্রথম ওভারে স্কট বোল্যান্ডের বলেও ক্যাচ দেন। বলটি স্লিপে স্টিভেন স্মিথের কাছে পৌঁছালে তিনি ডান হাতে ঝাঁপিয়ে বল ধরেন, কিন্তু হাতে তা ঠিকভাবে আটকে না থেকে কিছুটা নিচে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে মারনাস লাবুশেন বলটি ক্যাচ হিসেবে তালুবন্দী করেন। এ ঘটনার পর, অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা উল্লাসিত হয়ে কোহলিকে আউট বলে ঘোষণা করতে শুরু করেন।
তবে কোহলি ওই মুহূর্তে ক্যাচ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং মাঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রথম আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠান। তৃতীয় আম্পায়ার, জোয়েল উইলসন, রিপ্লে দেখে দেখার পর কোহলিকে নটআউট ঘোষণা করেন, যেহেতু তার মতে বলটি স্মিথের হাতে ঠিকভাবে জমেনি এবং তা মাটিতে স্পর্শ করেছিল।

স্টিভেন স্মিথের মন্তব্য
কিন্তু, এই ঘটনার পর, স্টিভেন স্মিথ তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে ছাড়েননি। লাঞ্চ বিরতির আগে তিনি ফক্স স্পোর্টসের উপস্থাপক ইশা গুহকে বলেন, “১০০ ভাগ নিশ্চিত ক্যাচ ছিল। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।” স্মিথ আরও যোগ করেন, “বলটি হাতে ঠিকভাবে আসেনি, কিন্তু আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে এটি ক্যাচ ছিল। তবে সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারের।”
আরও পড়ুন: রংপুর রাইডার্স বনাম ফরচুন বরিশাল: সাইফের ফিফটিতে রংপুরের হ্যাটট্রিক জয়
স্টিভেন স্মিথের এই বক্তব্যের পর, আরও কিছু অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বিশ্লেষকও কোহলির আউট হওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। মার্ক ওয়াহ এবং অ্যালান বোর্ডারসহ অনেকেই বলছেন, “আউট ছিল”। ওয়াহ এর কারণ হিসেবে জানান, “বলটি ঘাসের কাছাকাছি ছিল, কিন্তু স্মিথ ইতিমধ্যেই আঙুল দিয়ে তা ধরেছিল। এটি অত্যন্ত নিশ্চিত ক্যাচ ছিল।” বোর্ডারও একমত হন, “বিষয়টি দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে। আমার মতে, স্মিথের আঙুল বলটির নিচেই ছিল, এবং এর প্রমাণ স্পষ্ট।”
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কের মতামত
এমনকি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনও ক্যাচের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি এক্স (আগের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “আমার মতে এটি একটি আউট ছিল।” অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস, যিনি এই ঘটনার পর পরবর্তী সময়ে ক্যাচটি নটআউট বলে মতামত দিয়েছেন, জানিয়েছেন, ক্যাচ হওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিকোলাসের মতে, তৃতীয় আম্পায়ার নটআউট দেন কারণ তাকে যথেষ্ট প্রমাণ দেখানো হয়নি যা ক্যাচ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
আরও পড়ুন
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজ ২০২৫
- বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজ ২০২৫: সময়সূচি, স্কোয়াড ও খেলার আপডেট
- Pakistan vs New Zealand: হার, হতাশা আর এক পেসারের আর্তনাদ
- সাকিব আল হাসান: মুল্যায়নের পর বোলিং করার ছাড়পত্র পেলেন আইসিসিরি
- IND VS NZ ফাইনাল না হলে কার হাতে যাবে ট্রফি? ম্যাচ টাই হলে কী হবে?


ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতামত
ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠানও এর পুনরাবৃত্তি করে জানান, “কোহলিকে সঠিকভাবেই নটআউট দেওয়া হয়েছে।” পাঠান তাদের ভাষায় বলেন, “তৃতীয় আম্পায়ার যেহেতু স্পষ্ট প্রমাণ না পেয়েছেন, তাই সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। কোহলি বেঁচে গিয়েছেন এবং এটি ক্রিকেটের অন্যতম সুন্দর দিক।”
আরও পড়ুন: New Zealand vs Sri Lanka: কুশল পেরেরার রেকর্ড-ভাঙা সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার জয়
আইসিসির বিবৃতি
এদিকে, আইসিসি এই বিতর্ক নিয়ে খুব দ্রুত এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সিডনি টেস্টের ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আইসিসি তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, “তৃতীয় আম্পায়ার জোয়েল উইলসন এমসিসি আইনের ৩৩ ধারা অনুসারে ‘ফেয়ার ক্যাচ’ বিষয়ে নিশ্চিত হননি, যার ফলে কোহলিকে নটআউট ঘোষণা করা হয়েছে।”


কোহলির পরিণতি
যদিও কোহলির ক্যাচ নিয়ে বিতর্ক চলছিল, তিনি জীবিত থাকলেও ইনিংসের পরবর্তী অংশে তেমন কিছু করতে পারেননি। দ্বিতীয় সেশনে তিনি ৬৯ বলে মাত্র ১৭ রান করে স্কট বোল্যান্ডের বলেই স্লিপে ক্যাচ দেন। অভিষিক্ত বো ওয়েবস্টার সেই ক্যাচটি ধরা দেন এবং কোহলি আউট হয়ে যান। ভারতের স্কোর তখন ছিল ৪ উইকেটে ৭২ রান।
আরও পড়ুন: রংপুর বনাম সিলেট- নাহিদ রানার চার উইকেটে রংপুরের টানা ২য় জয়”
সিরিজের বর্তমান পরিস্থিতি
এই ঘটনায় ভারতের অবস্থা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে, কারণ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে। এই ক্যাচ বিতর্কের প্রভাব ম্যাচের শেষ ফলাফলে কীভাবে পড়বে, তা সময়ই বলবে। তবে, এই ঘটনার পর থেকে সিরিজে উত্তেজনা এবং বিরোধ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপসংহার
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ক্যাচ বিতর্ক কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবে এই বিশেষ ঘটনাটি ক্রিকেটের জগতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই বিতর্ক, যা একদিকে কোহলির বেঁচে যাওয়ার কথা বলছে, অন্যদিকে ক্রিকেট বিশ্বে আইনের প্রয়োগের ওপর প্রশ্ন তোলছে, সেটা নিশ্চিতভাবেই আগামী দিনগুলিতে আরও আলোচিত হবে। যতই বিতর্ক হোক, ক্রিকেটের সৌন্দর্য এবং উত্তেজনা কখনই কমবে না, এবং এর মধ্য দিয়েই খেলোয়াড়রা নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করে যান।