বাংলাদেশের কনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব আবারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি সাহসী এবং নীতিগত অবস্থান নিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন যে মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা শুধু কথা নয়, এটি কর্মেও ফুটে ওঠে।
আরও পড়ুন: জাপানে চলতি বছর বাড়িতে একাকী মারা গেছেন ৪০ হাজার মানুষ
ফিলিস্তিনের জন্য রাজীবের মানবিক অবস্থান
ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বর্বর হামলার প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজীব। গত কয়েক বছরে ইসরায়েলের হামলা বেড়েছে বহুগুণে, যার ফলে অগণিত ফিলিস্তিনি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। রাজীব এই মানবতাবিরোধী হামলার প্রতিবাদে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে চলমান বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
দাবা অলিম্পিয়াডে ইসরায়েলকে বয়কট
বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ইসরায়েল। শনিবার অনুষ্ঠিত ম্যাচে তৃতীয় বোর্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে রাজীবের খেলার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ ইসরায়েল হওয়ায় তিনি এই ম্যাচে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: ২৫ বছরে বিয়ে না করলেই জনসম্মুখে শাস্তি!
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ
রাজীবের এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে শক্তিশালী রাজনৈতিক এবং মানবিক বার্তা রয়েছে, তা তিনি স্পষ্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। গতকাল হাঙ্গেরির স্থানীয় সময় মধ্যরাতে রাজীব নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, “২০২২ সালের চেন্নাই দাবা অলিম্পিয়াড ও ২০২৪–এর হাঙ্গেরি দাবা অলিম্পিয়াডে রাশিয়া ও বেলারুশ দল হিসেবে অংশ নিতে পারেনি। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে? কালকে তাদের খেলা বাংলাদেশের সঙ্গে পড়েছে। আমি বয়কট করলাম।” এই পোস্টের সাথে তিনি #BoycottIsrael এবং #StandWithJustice হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
রাজীবের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একটি ম্যাচ বয়কট নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি তার মানবিকতার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। তিনি ইসরায়েলের বিপক্ষে না খেলে দাবা বোর্ডে সাহসিকতার এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তার এই সাহসী সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই রাজীবের এই পদক্ষেপকে মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসী উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
আরও পড়ুন: মোজায় ‘আল্লাহ’ লেখা, দোকানে ককটেল হামলা
বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা
রাজীবের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অন্য খেলোয়াড়দের জন্যও একটি বার্তা। যেখানে খেলার মাঠে শুধুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং নৈতিকতার গুরুত্বও সমান। তিনি দেখিয়েছেন, খেলার মধ্য দিয়েও বিশ্ববাসীর কাছে জোরালো বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
মানবিক মূল্যবোধের জয়
রাজীবের এই সাহসী পদক্ষেপ কেবল তার নৈতিকতার উদাহরণ নয়, এটি আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষা। ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থন এবং ইসরায়েলের বিরোধিতা ভবিষ্যতে আরও খেলোয়াড়দের মানবিক অবস্থান নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
উপসংহার
এনামুল হোসেন রাজীবের এই প্রতিবাদ তার সাহসিকতা, মানবিকতা এবং নৈতিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তার এই অবস্থান থেকে আমরা শিখতে পারি যে খেলার বাইরেও আমরা আমাদের মূল্যবোধের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে পারি। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাজীবের এই অবস্থান অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন