যেসব কারণে ফেসবুক পোস্টের রিচ কমিয়ে দেয় এবং কীভাবে তা বাড়াবেন

ফেসবুক রিচ

ফেসবুক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করে থাকেন। তবে, আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন, তবে হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, এক সময় আপনার পোস্টগুলোতে যে পরিমাণ লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার হতো, বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে অর্ধাৎ ফেসবুক রিচ কমে গেছে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা ফেসবুক অ্যালগরিদমের পরিবর্তন এবং অন্যান্য বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে ঘটে।

যারা ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের জন্য পোস্টের রিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কেন ফেসবুক পোস্টের রিচ কমে যায়? এবং কীভাবে তা পুনরুদ্ধার করা যায়?

এই প্রবন্ধে আমরা বিশদভাবে জানব ফেসবুকের অ্যালগরিদম কীভাবে কাজ করে, কোন কারণে পোস্টের রিচ কমে যায়, এবং কীভাবে সঠিক কৌশল প্রয়োগ করে আপনার পোস্টের রিচ বাড়াতে পারেন। ফেসবুকে সফলতা অর্জন করতে গেলে এই জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন: নারীদের ঘরে বসে আয়ের সুযোগ: সহজে ঘরে বসেই সফলতার পথে


ফেসবুক রিচ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ:

রিচের সংজ্ঞা

ফেসবুক রিচ বলতে বোঝানো হয়, আপনার পোস্ট কতজনের ফিডে পৌঁছাচ্ছে। অর্থাৎএক কথায় কতজন মানুষ আপনার পোস্ট দেখেছে। রিচ বাড়লে আপনার পোস্ট আরও মানুষ দেখতে পায়।

রিচের গুরুত্ব

এটি আপনার পোস্টের কার্যকারিতা এবং প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। যখন ফেসবুক রিচ কমে যায়, তখন আপনার পোস্ট অনেক কম মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং এর ফলে আপনি কম লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার পান। ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত প্রচারণার জন্য এটি বেশ চিন্তার কারণ হতে পারে। তাই রিচ বাড়ালে আপনার ব্যবসায়িক প্রচারণা, ব্র্যান্ড বিল্ডিং, এবং এনগেজমেন্ট বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

অর্গানিক এবং পেইড রিচের পার্থক্য

– ফেসবুক পোস্টের দুটি প্রকার রিচ আছে—অর্গানিক এবং পেইড। অর্গানিক রিচ কমতে শুরু করলেই পেইড রিচের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।


যেসব কারণে ফেসবুক পোস্টের রিচ কমে যায়:

ফেসবুক নিয়মিত তার অ্যালগরিদমে পরিবর্তন আনে এবং নতুন ফিচার সংযোজন করে, যা অনেক ব্যবহারকারীর কাছে অজানা থেকে যায়। দুটি প্রশ্ন সাধারণত সামনে আসে—প্রথমত, ফেসবুকের অ্যালগরিদম আসলে কী? এবং দ্বিতীয়ত, ফেসবুক কীভাবে নির্ধারণ করে কোন পোস্টের রিচ কত হবে?

ফেসবুক চারটি ধাপের মাধ্যমে একটি পোস্টের রিচ নির্ধারণ করে, যা কনটেন্ট বা পোস্ট র‌্যাংকিং নামে পরিচিত। এই ধাপগুলো হলো:

১. কনটেন্টের উৎস: পোস্টটি ব্যবহারকারীর নিজের তৈরি কিনা এবং এর আসল উৎস কী, তা ফেসবুক দেখে। ফেসবুক সাধারণত সেই পোস্টগুলোই ব্যবহারকারীর ফিডে দেখায়, যেগুলো তার ফেসবুক বন্ধু, ফলো করা ব্যক্তি বা পেজ থেকে এসেছে। ফলে ব্যবহারকারী তার ফলো করা পেজ ও বন্ধুরা যা পোস্ট করে, সেগুলোই বেশি দেখতে পায়।

২. কনটেন্টের ধরন: কনটেন্টটি লাইভ, ভিডিও, ছবি, বা স্ট্যাটাস যাই হোক না কেন, ফেসবুক সেসব পোস্টই বেশি দেখায়, যেগুলোতে ব্যবহারকারী বেশি ইন্টার‌্যাক্ট করে। যদি ব্যবহারকারী ভিডিও বেশি দেখে, তাহলে তার ফিডে ভিডিও বেশি দেখাবে। একইভাবে, ছবি বা স্ট্যাটাসের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

৩. কনটেন্ট এনগেজমেন্ট: যে পোস্টগুলোতে বেশি লাইক, কমেন্ট, এবং শেয়ার হয়, সেগুলো ব্যবহারকারীর ফিডে বেশি প্রদর্শিত হয়। বন্ধু বা ফলোয়ারদের পোস্টে বেশি এনগেজমেন্ট হলে, সেই পোস্টগুলোই ফিডে প্রাধান্য পায়।

৪. কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড: ফেসবুকে পোস্ট শেয়ারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা আছে, যেগুলো অমান্য করলে পোস্টের রিচ কমে যায়। ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করলে সেই পোস্টগুলো কম দেখা যায়। ফেসবুক চায়, ব্যবহারকারীরা প্রকৃত এবং তথ্যনির্ভর কনটেন্ট শেয়ার করুক।

চলতি বছর ফেসবুকের অ্যালগরিদম লাইভ ভিডিও, রিলস, ভিডিও, এবং ছবিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, কারণ এসব কনটেন্টের চাহিদা বেশি।

আরও পড়ুন: ফেসবুক স্ট্যাটাস fb status bangla 2024 : প্রোফাইলকে করুন আকর্ষণীয়

এছাড়াও নিম্নলিখিত কারণগুলোও রিচ কমানোর অন্যতম সহায়ক

১. অ্যালগরিদম পরিবর্তন:

ফেসবুকের অ্যালগরিদম নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এটি ব্যবহারকারীর পোস্টের রিচের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। ফেসবুক অ্যালগরিদম ঠিক করে, কোন পোস্ট কাদের ফিডে দেখা যাবে এবং কাদের কাছে পৌঁছাবে।

২. কম এনগেজমেন্ট:

আপনার পোস্টে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার কম হলে ফেসবুক অ্যালগরিদম সেটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং সেই পোস্ট কম মানুষের কাছে পৌঁছায়। বেশি এনগেজমেন্ট হওয়া পোস্টগুলো অ্যালগরিদম বেশি প্রাধান্য দেয়।

৩. লিঙ্কযুক্ত পোস্ট:

যেসব পোস্টে বহিরাগত লিঙ্ক দেওয়া থাকে, যেমন YouTube ভিডিও বা অন্যান্য ওয়েবসাইটের লিঙ্ক, সেগুলোর রিচ কমে যেতে পারে। কারণ ফেসবুক চায় না ব্যবহারকারীরা প্ল্যাটফর্মের বাইরে চলে যাক।

৪. অসময়ে পোস্ট করা:

যদি আপনি এমন সময়ে পোস্ট করেন যখন আপনার অধিকাংশ ফলোয়ার ফেসবুক ব্যবহার করছে না, তবে পোস্টের রিচ কমে যাবে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা অধিকাংশ ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন না।

৫. ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস ভায়োলেশন:

যদি আপনার পোস্ট ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিপরীতে যায়, তবে ফেসবুক সেই পোস্টকে কম প্রাধান্য দেয়। এটি রিচ কমিয়ে দেয় এবং কখনও কখনও পোস্ট সরিয়েও ফেলে।

ফেসবুক পোস্টের রিচ কমিয়ে দেয়ার আরও কিছু কারণ

পোস্টের ধরন অনুযায়ী রিচ: – স্ট্যাটাস, ছবি, এবং ভিডিও পোস্টের রিচ আলাদা হয়। কোন ধরনের পোস্ট কত রিচ পাবে তা নির্ভর করে পোস্টের ধরন ও এনগেজমেন্টের উপর।

পোস্টের ভাষা এবং বিষয়বস্তু: – পোস্টের ভাষা এবং বিষয়বস্তু যদি কম আকর্ষণীয় হয় বা বেশি সাধারণ হয়, তাহলে পোস্টের রিচ কম হতে পারে।

ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভায়োলেশন: – কোনো পোস্ট ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভাঙলে ফেসবুক তা কম প্রাধান্য দিয়ে দেখায়।

ব্যবহারকারীর আচরণ: – ফেসবুকে যদি ব্যবহারকারী আপনার পোস্টের সাথে বেশি ইন্টারেক্ট না করে, তবে সেই ব্যবহারকারীর ফিডে আপনার পোস্টগুলো কম দেখানো হবে।

আরও পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন- কাজ করা খুব সোজা


ফেসবুক রিচ বাড়ানোর কার্যকর উপায়:

১. কনটেন্ট মান উন্নত করুন:

ফেসবুক পোস্টের রিচ বাড়াতে হলে প্রথমেই আপনাকে কনটেন্টের মানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আকর্ষণীয় এবং তথ্যবহুল কনটেন্ট পোস্ট করুন। ভিডিও এবং ছবি ব্যবহার করে পোস্টকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলুন।

২. সঠিক সময়ে পোস্ট করা:

পোস্ট করার সেরা সময় বেছে নিন। সাধারণত সকাল এবং সন্ধ্যার সময়ে পোস্ট করলে আপনি বেশি রিচ পেতে পারেন। বিভিন্ন এনালিটিক্স টুল ব্যবহার করে জানতে পারেন, কখন আপনার ফলোয়াররা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন।

৩. ফেসবুক লাইভ এবং রিলস:

ফেসবুক লাইভ ভিডিও এবং রিলস অ্যালগরিদমে বেশি প্রাধান্য পায়। এই ধরনের কনটেন্ট দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং অর্গানিক রিচ বাড়ায়।

৪. এনগেজমেন্ট বৃদ্ধির স্ট্র্যাটেজি:

পোস্টে প্রশ্ন করুন, কুইজ আয়োজন করুন, এবং কনটেন্টে এমন কিছু যোগ করুন যা ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ বাড়াবে। এতে ফেসবুক অ্যালগরিদম সেই পোস্টকে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

৫. বিজ্ঞাপন ব্যবহার:

ফেসবুক অ্যাড ক্যাম্পেইন ব্যবহার করে আপনি পোস্টের রিচ বাড়াতে পারেন। সঠিকভাবে টার্গেট করা অ্যাড প্রচারণার মাধ্যমে আপনি আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

আরও পড়ুন: অনলাইন আয় করার ১০টি কার্যকর উপায় – ঘরে বসেই টাকা ইনকাম করুন


৬. কনটেন্ট প্ল্যানিং ও স্ট্র্যাটেজি:

ফেসবুকে সাফল্য অর্জন করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কনটেন্ট পরিকল্পনা করতে হবে। আপনাকে জানতে হবে কী ধরনের পোস্ট আপনার ফলোয়াররা পছন্দ করেন এবং কোন সময় পোস্ট করলে সবচেয়ে বেশি এনগেজমেন্ট পাওয়া যায়। গবেষণা করুন এবং প্রতিনিয়ত অ্যানালাইসিস করুন, কীভাবে আপনার পোস্টগুলো রিচ পাচ্ছে এবং কীভাবে তা উন্নত করা যায়।

ভিজুয়াল কনটেন্টের গুরুত্ব: – ফেসবুকে ভিজুয়াল কনটেন্টের শক্তি বিশাল। আকর্ষণীয় ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করুন।

ভিডিও কন্টেন্টের অগ্রাধিকার: – ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে আপনি সহজেই বেশি এনগেজমেন্ট এবং রিচ পেতে পারেন।

লাইভ ভিডিও: – লাইভ ভিডিও এখন ফেসবুকের অন্যতম জনপ্রিয় কনটেন্ট ধরনের মধ্যে পড়ে। লাইভ করলে অর্গানিক রিচ বাড়ে।

পোস্টের টেক্সট সংক্ষিপ্ত রাখা: – পোস্টের টেক্সট সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। কম কথায় অনেক কিছু বলা বেশি কার্যকরী।

পোল এবং প্রশ্নের ব্যবহার: – এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য পোল এবং প্রশ্নের ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকরী।

৭. ফেসবুক পেজ এবং প্রোফাইল অপ্টিমাইজেশন

প্রোফাইল বা পেজ হেলথ বজায় রাখা:– আপনার ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইলকে সক্রিয় এবং পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।

ফলোয়ারদের সাথে ইন্টার‌্যাকশন: – ফলোয়ারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের মতামত নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করুন।

পোস্টের নিয়মিততা বজায় রাখা: – নিয়মিতভাবে পোস্ট করলে ফেসবুক আপনার পেজকে প্রাধান্য দেয় এবং রিচ বাড়ে।


উপসংহার:

ফেসবুক পোস্টের রিচ কমে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে ফেসবুক অ্যালগরিদমের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সঠিক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করে এবং কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার পোস্টের রিচ বাড়াতে পারেন। পোস্টের মান, সঠিক সময়ে পোস্ট করা, এবং এনগেজমেন্ট বৃদ্ধির ওপর ফোকাস করা হলো রিচ বাড়ানোর মূলমন্ত্র। সুতরাং, এই কৌশলগুলো আপনার ফেসবুক মার্কেটিং প্রচেষ্টায় প্রয়োগ করে আপনি আরও সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন