প্রকৃতি বিরূপ রংপুরে সূর্যের দেখা যায়নি: বাড়ছে জনদুর্ভোগ

যুগের ডেস্ক: প্রকৃতি বিরূপ আচরণ শুরু করেছে। রংপুরে সূর্যের দেখা যায়নি। রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বর্তমানে প্রকৃতির এই অস্বাভাবিক আচরণে বিপর্যস্ত। গত কয়েকদিন ধরেই এই অঞ্চলের প্রকৃতি ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেছে, যা জনজীবনে নেমে এসেছে এক বিরূপ অবস্থা। বিশেষ করে শীতের তীব্রতা এবং হিমেল হাওয়ার ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময়ের মধ্যে রংপুরের আবহাওয়ার পরিবর্তন জনমনে এক অস্বস্তি তৈরি করেছে।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

শীতের তীব্রতা, ঘন কুয়াশা এবং হিমেল বাতাসে পুরো শহর তথা গ্রামাঞ্চলের মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। ভর দুপুরে যানবাহনও লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শহরের রাস্তাঘাটে যানজট এবং চলাচলের অসুবিধা প্রবল হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ যেমন অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন, তেমনি শ্রমজীবী মানুষও কাজের অভাবে বেকায়দায় পড়েছেন। দিনে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় থাকলেও, রাতের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছে। সোমবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শীতের প্রকোপের স্পষ্ট প্রতীক।

এদিকে, শীতের কারণে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দোকানে ক্রেতার সমাগম কমে যাওয়ায় বেচাকেনা প্রায় থেমে গেছে। শীতের কারণে খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণি কাজ না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষ করে কৃষক, দিনমজুর ও শ্রমিকরা যাঁরা সাধারণত বাইরের কাজ করেন, তাঁরা শীতের কারণে অনেকাংশে কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে নামাজরত নারীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

রংপুর জেলা প্রশাসন শীতার্তদের সহায়তার জন্য এক লাখ ৪ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠিয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১ হাজার ৬০০ পিছ শীতবস্ত্র, যা পুরো এলাকার চাহিদার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না। ফলস্বরূপ, শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং ত্রাণ অফিসের পক্ষ থেকে দ্রুত শীতবস্ত্র সরবরাহের চেষ্টা চলছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ শীতবস্ত্র আসেনি। এই অবস্থায়, সময়মতো শীতবস্ত্র না পৌঁছালে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি কষ্টে পড়তে হবে।

প্রকৃতি

প্রকৃতি বিরূপ উত্তরাঞ্চলের অন্য জেলা যেমন পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় শীতের প্রভাব আরও তীব্র হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ শহরের তুলনায় অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষত, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য শীত একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক দিনমজুর এবং কৃষক শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না, যা তাদের আর্থিক সঙ্কট বাড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন: সব সরকারি চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা

এছাড়া, শীতের কারণে গবাদিপশুদেরও বেশ ক্ষতি হচ্ছে। গরু, ছাগল, ভেড়া এসব পশুদের শীতের প্রকোপে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে, যা কৃষকদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের কারণে পশুদের খাবার ও চিকিৎসা সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, ফলে পশু পালনকারী কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এবং সর্বোপরি, এই শীতকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আবহাওয়া অফিসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি আরো বাড়তে পারে, যা শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে, যা দীর্ঘমেয়াদে মানুষের জীবনে আরো বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন: ‘বেস্ট ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন রংপুরের মেহেদী হাসান রাব্বি

শীতের এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। শীতবস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি, ত্রাণ কার্যক্রমের গতি বাড়ানো এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই শীতকালীন দুর্ভোগ কমানো সম্ভব। শুধু প্রশাসনিক সহায়তা নয়, ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনগুলোরও সহায়তা শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

1 thought on “প্রকৃতি বিরূপ রংপুরে সূর্যের দেখা যায়নি: বাড়ছে জনদুর্ভোগ”

Leave a Comment