রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল মিয়ানমার

আজ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি, ২০২৫) সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে মিয়ানমারে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে, যার প্রভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.০। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

ভূমিকম্পের প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি

প্রভাবিত এলাকাসমূহ
ভূমিকম্পের প্রভাবে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট এবং এর আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়েছে[3]। বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রায় ১.৫ লক্ষ ভবন ধ্বংস হতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতি
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঘটনা বেড়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একাধিক ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ২৮৯ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে ৩.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

আরও পড়ুন: প্রকৃতি বিরূপ রংপুরে সূর্যের দেখা যায়নি: বাড়ছে জনদুর্ভোগ

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

বিগত দশকের বড় ভূমিকম্পসমূহ
বাংলাদেশের কাছাকাছি অঞ্চলে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি, যার মাত্রা ছিল ৬.৭। এটি সিলেট থেকে ১৮০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ছিল। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৫ মাত্রার ঊর্ধ্বে ৬টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।

ভূমিকম্প

ঝুঁকি ও প্রস্তুতি

ঢাকার ঝুঁকি
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের ৬৫ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজউকের এক জরিপ অনুযায়ী, মাধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরে প্রায় ৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ভবন ধ্বসে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র শীত: তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রিতে, ভোগান্তিতে কৃষক ও শ্রমিকরা

প্রস্তুতির অভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুত নয়। অপরিকল্পিত নগরায়ন, অনিরাপদ ভবন নির্মাণ এবং নিম্নভূমি বা জলাভূমি ভরাট করে শহর সম্প্রসারণের কারণে ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

সুরক্ষা ব্যবস্থা

বিল্ডিং কোড
বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০ এবং ঢাকা বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন রুলস ২০০৮ থাকা সত্ত্বেও অনেক ভবন নির্মাণে এর নিয়ম মানা হয় না। রাজউকের এক জরিপে দেখা গেছে, ১.৯৫ লক্ষ ভবনের মধ্যে ৬৭ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছে।

করণীয়

বিশেষজ্ঞরা সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ করেছেন:

  • বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন
  • নিম্নভূমিতে শহর সম্প্রসারণ নিষিদ্ধকরণ
  • পরিকল্পনা নির্দেশিকা ও ভবন নির্মাণ বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ
  • বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে উপযোগিতা সেবা ও সুযোগ-সুবিধা যাতে ধ্বসে না পড়ে সে বিষয়ে পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ

Leave a Comment