ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার জন্য উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এক সুখবর এসেছে। ঢাকা রংপুর মহাসড়কের মূল চার লেন খুলে দেওয়া হয়েছে, যা এখন উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য যাত্রার সময় কমিয়ে এনে স্বস্তির সঞ্চার করবে। বিশেষ করে, ঈদুল ফিতর এবং অন্যান্য উৎসবের সময় ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য এটি একটি বিশাল উপকারে আসবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
যাত্রাপথে সময়ের কমতি ও স্বস্তি
গত শুক্রবার, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের ছয় লেন খুলে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে যাত্রীদের যাত্রাপথের সময় অন্তত দুই ঘণ্টা কমে যাবে। দীর্ঘসময় ধরে যাত্রা করতে হওয়া উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জন্য এটি একটি প্রশান্তি। সড়কের উন্নতি ও সচলতা তাদের ভোগান্তির মাত্রা কমিয়ে ফেলবে, বিশেষ করে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য। সড়কপথে আসা যাত্রীরা আর যানজটের সমস্যায় পড়বেন না, এমন আশা দেখা দিয়েছে, এবং এর মাধ্যমে তারা অনেকটাই আরামদায়ক যাত্রার সুযোগ পাবেন।
ঈদের সময়ে সময়সীমা ২০ ঘণ্টায় চলে যাওয়ার অবসান
এক সময় ঢাকা রংপুর রুটে সড়কপথে যাতায়াতের সময় ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। ৩২২ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য যাত্রীদের গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় লাগত। তবে, ঈদের সময় এটি প্রায় ২০ ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকত। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এর মতো অন্যান্য উত্তরাঞ্চলীয় জেলার সঙ্গেও একই ধরনের যাতায়াতের সমস্যা ছিল।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়
তবে, এই নতুন চার লেন সড়ক খুলে দেওয়ার মাধ্যমে পুরো অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো সম্ভব হবে। সড়কপথের এই যাত্রা অতীতে যেমন ছিল সময়সাপেক্ষ এবং অস্বস্তিকর, এখন তার আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
আরও পড়ুন


ঢাকা রংপুর মহাসড়ক চার লেন বিমসটেক প্রকল্পের অবদান
এই সড়কটি খুলে দেওয়ার মধ্যে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্প। নাশিদ হাসান সিরাজী, সাসেক-২ প্রকল্পের উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক-৮ জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সড়কপথে যাতায়াতের সময় যে ভোগান্তি ছিল, সেই সমস্যা এখন অনেকটাই সমাধান হয়েছে। সড়কপথের এই উন্নতি তাদের যাত্রাকে আরও সুরক্ষিত ও সাশ্রয়ী করে তুলবে।
এছাড়া, ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন এর কাজও খুব শিগগিরই শেষ হবে, যার ফলে সড়কপথের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার
এই সড়কের চার লেন চালু হওয়ার ফলে শুধু যাত্রাপথের উন্নতি হবে না, বরং আরও বড় উপকার আসবে। উত্তরাঞ্চল এবং ঢাকার মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এখানকার শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে, এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। এই যোগাযোগের উন্নতি শ্রমবাজারের জন্যও সহায়ক হবে, যার ফলে অঞ্চলটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এছাড়া, সড়কের উন্নতির ফলে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে মানুষের মুখি হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে, এবং আরো সুষম উন্নয়ন হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, এবং ঢাকায় অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ কমবে।
ঢাকা রংপুর হাইওয়ে চার লেন সড়কের কাজের ইতিহাস
এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন সড়কটির কাজ ২০১৯ সালের জুনে শুরু হয়। তখন থেকে একাধিক সমস্যা ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যেমন করোনা মহামারি, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, বন্যা – এসবের কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুটা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।
তবে, এখন ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং এটি উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া, হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক এর কাজ শেষ হলে ঢাকা-রংপুর যোগাযোগব্যবস্থায় এক মৌলিক পরিবর্তন আসবে, যা পুরো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নতুন সম্ভাবনা
এ সড়কটির উন্নতির ফলে কেবল উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থারই পরিবর্তন হবে না, বরং দেশীয় অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে।
উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষ, যারা ঢাকায় গিয়ে কাজ করতেন, তাদের জন্য ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। এর ফলে সারা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুষমভাবে বিভাজিত হবে, এবং এটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে।
বিমসটেক-এর মতো একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোটের সদস্য হয়ে, বাংলাদেশের এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলি দেশটির বিশ্বব্যাপী স্থান আরও শক্তিশালী করবে।
ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোই নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চার লেন সড়কটি খুলে দেওয়ার মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। এই সড়কটির উন্নতি শুধু যাত্রার সময় কমাবে না, বরং দেশের অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
ইতিমধ্যে, এই সড়কটি খুলে দেওয়ার ফলে মানুষের যাত্রা আরও নিরাপদ, আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, এটি দেশের অবকাঠামো খাতে একটি বড় অর্জন এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে।
1 thought on “খুলে দেওয়া হলো ঢাকা রংপুর মহাসড়কের চার লেন- যাত্রাপথে সময় কমবে ২ ঘণ্টা”