রংপুর সিটি করপোরেশনের রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং তার সাথে অপসারিত কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, যদি তাদের এই দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আসন্ন ঈদের পর রংপুরকে অচল করে দেওয়া হবে।
এই ঘোষণার পরপরই রংপুর জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মোস্তফার এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা

জাতীয় পার্টির আল্টিমেটাম এবং মোস্তফার হুংকার
বুধবার দুপুরে এক সমাবেশে রংপুর সিটির অপসারিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আগামী সাত দিনের মধ্যে সিটি পরিষদকে পূর্বের মতো কার্যকর করবেন বলে প্রত্যাশা করি।”
এরপরই তিনি তার কঠোর অবস্থানের কথা জানান, “আর যদি না করেন, তাহলে ঈদের পরে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে মঞ্চ বসিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।” মোস্তফার এই বক্তব্যে তার অনুসারীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা দিলেও, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবির থেকে এর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম: বিকাশ, নগদ বা রকেটে পেমেন্ট

এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের পাল্টা বিক্ষোভ এবং কঠোর হুঁশিয়ারি
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার এই আল্টিমেটামের কয়েক ঘণ্টা পরই রংপুর জুড়ে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রংপুর প্রেস ক্লাব এলাকায় জড়ো হন। তাদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর-দালাল-ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তীব্র স্লোগান দেওয়া হয়।
তাদের প্রধান দাবি ছিল, অপসারিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সাথে, তারা মোস্তফাকে প্রতিহত করতে এবং তার এই ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: ফেসবুক স্টোরি থেকে আয়ের সুযোগ: কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য সুখবর, পারবনে আপনিও
আরও পড়ুন
“আবু সাইদের রংপুরে কীভাবে মিছিল বিক্ষোভ করার সাহস পায়?”
রাত ৯টায় রংপুর প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিলটি নগর ভবনের দিকে অগ্রসর হয়ে পরে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে এসে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের নেতারা তাদের ক্ষোভ ও দাবি তুলে ধরেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর নয়ন তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আঁতাতের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা আজ রংপুরে মিছিল করেছে।
মিছিলে তারা বলেছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের পুনর্বহাল করতে হবে।” আলমগীর নয়ন প্রশাসনকে কঠোর ভাষায় আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, “আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, তারা (জাপা) আবু সাইদের রংপুরে কীভাবে মিছিল বিক্ষোভ করার সাহস পায়? মিছিলে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের দোসর-চামচাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।” তার এই বক্তব্য রংপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
“ফ্যাসিস্টের দোসরদের গ্রেপ্তার করতে হবে, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি তার বক্তব্যে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “খুনি হাসিনা পালিয়ে গেছে। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম দোসর ছিল জাতীয় পার্টি। তারা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে গুম-খুনসহ সকল অন্যায়ের সহযোগী হয়েছিল। সুবিধাভোগী জাতীয় পার্টির রাজনীতি করার আর কোনো অধিকার নেই।”
ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আওয়ামী লীগের মতো অবিলম্বে এই জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিস্টের দোসরদের গ্রেপ্তার করতে হবে।” তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।


এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুশিয়ারি এবং আন্দোলনের ঘোষণায় রংপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঈদের পর নগরীর পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও কৌতূহল কাজ করছে। এই ঘটনা রংপুরের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।