বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) আজকাল অর্থনৈতিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বর্তমানে, এই সেবা শুধু আর্থিক লেনদেনের জন্যই নয়, বরং বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, রেমিট্যান্স পাঠানো এবং আরও অনেক কিছু জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এ প্রযুক্তি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এর মাধ্যমে আর্থিক সেবা নেওয়া এখন অনেকের জন্য সহজ এবং দ্রুত যার ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে।
আরও পড়ুন: আজকের টাকার রেট 2024 – আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (১৩ ডিসেম্বর)
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, যা একক মাসের হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ। এর আগে, জুন মাসে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা ছিল একক মাসের সর্বোচ্চ লেনদেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
অথচ, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, যেখানে আগস্টে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক মাসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।
এছাড়া, জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে আরও বৃদ্ধি পায়।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা এবং প্রসার
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। প্রথমে বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংক (রকেট) এই সেবা চালু করেছিল। এরপর বিকাশ, মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা শুরু করে। বর্তমানে, ডাক বিভাগের নগদও এই সেবা প্রদান করছে।
আজকাল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শুধু টাকা পাঠানো নয়, একাধিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ সহ অনেক ধরনের লেনদেন খুব সহজেই করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিল
গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেনের পরিমাণই নয়, গ্রাহক সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। তবে, চলতি বছরের অক্টোবরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭১৩-এ, যা পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যত
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, বিশেষ করে এমএফএস, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর সহজলভ্যতা এবং দ্রুততার কারণে গ্রাহকরা এখন ব্যাংকিং সেবার জন্য ব্যাংক শাখায় না গিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সব ধরনের লেনদেন করতে পারছেন।
এমএফএস সেবা গ্রাহকদের জন্য খুবই সুবিধাজনক, কারণ এটি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি লেনদেনের সময়ও অনেক দ্রুত করেছে। পাশাপাশি, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, প্রান্তিক জনগণের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা, কারণ তারা এখন ব্যাংকিং সেবা সহজেই গ্রহণ করতে পারছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের পরিমাণ একে একে বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে এবং জুন) মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকে তা ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে, এরপর থেকে প্রতিমাসে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে।
এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু বড় শহরগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি সাধারণ মানুষের জন্য তাদের আর্থিক লেনদেনকে সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত করেছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এর মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণও আশাব্যঞ্জক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নিজেদের দৈনন্দিন আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে পারছেন, যা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষ এই সেবা গ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।