বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বিশ্বব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ১১৬ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে। এই অর্থ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে, যা স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন এবং সবুজায়ন ও জলবায়ুসহনশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়। এই প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, দূষণের ক্ষতি হ্রাস করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।
সবুজায়ন ও জলবায়ুসহনশীলতা উন্নয়ন প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার
বিশ্বব্যাংকের সবুজায়ন এবং জলবায়ুসহনশীলতার জন্য ৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ুস্থিতিস্থাপক কার্যক্রমের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং অর্থায়ন উন্নত করবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন নীতিমালা এবং কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হবে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী সরকারের ভুমি উপদেষ্টা হাসান আরিফ আর নেই
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এবং দূষণ প্রতিরোধে এই অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক।” তিনি আরও যোগ করেন, এই প্রকল্পটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলবে।
স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা খাতে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার
বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থায়ন ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা খাতে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় এই অর্থ ব্যয় হবে। এর লক্ষ্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমানো।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ: সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের স্বীকারোক্তি
এই প্রকল্পটি সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগে স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সহায়তা করবে। প্রায় ৫১ লাখ মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এটি বিশেষত সিজারিয়ান সেকশন ও স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধার মাধ্যমে নবজাতক ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।
চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার
তৃতীয় প্রকল্পটি চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রায় ১০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি পাবেন। নতুনভাবে দুই লাখ পরিবারকে পানির সংযোগ দেওয়া হবে এবং নিম্ন আয়ের এক লাখ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি
এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক কর্মসূচির একটি অংশ, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষকে পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন–সেবা প্রদানের জন্য কাজ করছে।
বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
বিশ্বব্যাংকের এই অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে, তেমনই জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন–সেবার উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে।
বিশ্বব্যাংকের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নীতিসংস্কারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।