বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাদের সাম্প্রতিক সফরের শুরুটা হয়েছিল লাল বলের খেলা দিয়ে, টেস্ট সিরিজে ড্র নিয়ে। মাঝে ওয়ানডেতে তিন ম্যাচেই হেরে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। সেই দলই কিনা মারদাঙ্গা ক্যারিবীয়দের পছন্দের ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে ঐতিহাসিক জয় পেল। তিন ম্যাচের এই সিরিজে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) প্রথমবার বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ধবলধোলাই করেছে। আর এই জয়ে সিরিজে একটি বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন তাসকিন-মেহেদীরা।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সাফল্য
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্যারিবীয় দল বরাবরই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তবে এবারের সিরিজে লিটন দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জের সামনে দারুণভাবে দাঁড়িয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সেন্ট ভিনসেন্টে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৮০ রানের বড় জয় তুলে নেয়। এ জয় দিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করেছে টাইগাররা।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ১৮৯ রান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানে গুটিয়ে যায়। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে এমন একটি নজির স্থাপন করল, যা অতীতে কোনো দলই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসানের বোলিং নিষিদ্ধ: আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় ধাক্কা
বিশ্বরেকর্ড গড়ার গল্প
এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের বোলাররা তাদের দক্ষতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের পুরো ৩০টি উইকেট শিকার করে বাংলাদেশ গড়েছে এক অনন্য বিশ্বরেকর্ড। এর আগে কোনো দলই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এমন কীর্তি গড়তে পারেনি।
গত মাসে অস্ট্রেলিয়া তাদের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এই সিরিজে ৩০ উইকেট নিয়ে সেই রেকর্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথমবার কোনো দল প্রতিপক্ষের শতভাগ উইকেট নেওয়ার নজির গড়েছে।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ : বাঁধা পেরিয়ে ভারতকে কাঁদিয়ে শিরোপা জয় বাংলাদেশের
বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্য
বাংলাদেশের এই বিশ্বরেকর্ডে বোলারদের অবদান অনস্বীকার্য। শেখ মেহেদী, তাসকিন আহমেদ, এবং রিশাদ হোসেনের বোলিং নৈপুণ্য ক্যারিবীয়দের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। শেখ মেহেদী এই সিরিজে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন। পেসার তাসকিন আহমেদ শিকার করেছেন ৭ উইকেট, এবং তরুণ লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন তুলে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
বোলারদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টাইগাররা ক্যারিবীয়দের প্রতিটি ম্যাচে চেপে ধরতে সক্ষম হয়। তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশের ঘূর্ণি আর গতির সামনে পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়ে।
আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস
বাংলাদেশ এর আগেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো বোলিং পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে, এবং ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি সিরিজে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২২টি উইকেট নিয়েছিল। তবে এবার সেই রেকর্ড ভেঙে ৩০ উইকেট নেওয়ার অসাধারণ কীর্তি গড়ে তারা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: কঠিন সিদ্ধান্তে বিসিবি, সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি?
বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই সিরিজে বাংলাদেশের সাফল্য শুধু একটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে নয়, বরং দল হিসেবে তাদের আত্মবিশ্বাসকেও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। ওয়ানডে সিরিজে হারের পরও তারা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য অর্জন করেছে, তা দলের মানসিক শক্তি এবং দক্ষতার প্রমাণ।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের এই জয় শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা। বোলারদের এমন পারফর্মেন্স এবং ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা যদি ধরে রাখা যায়, তবে টাইগাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও অনেক মাইলফলক স্পর্শ করবে।
আরও পড়ুন: আইপিএল: বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতির নেপথ্যে কারণ কী?
বাংলাদেশের এই জয় প্রমাণ করে, সংকটের মুখেও ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিক শক্তি এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকলে যে কোনো বাধা জয় করা সম্ভব। এই বিশ্বরেকর্ড টাইগারদের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।
2 thoughts on “ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করে যে বিশ্বরেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ”