গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েল বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র সমালোচনা করেছেন মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ড, ফিলিস্তিনের জনগণের উপর দীর্ঘমেয়াদী নিপীড়ন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন তারা। মুসলিম দেশগুলোর নেতারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন: হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের কাছে কী চায় ভারত, জানালেন জয়শঙ্কর
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
অধিবেশনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের নেতারা ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা উল্লেখ করেন যে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে বসতি স্থাপন করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এছাড়াও, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের সহিংসতা এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, “ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং জাতিসংঘের চার্টার লঙ্ঘন করছে। ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে না দিলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।” তার এই বক্তব্য বিশ্বজুড়ে অনেক সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে।
আরও পড়ুন: মুম্বাই ঘেরাও: হাজার হাজার মুসল্লিদের পদযাত্রা
মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান তার বক্তব্যে ইসরায়েলকে “দখলদার রাষ্ট্র” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি অবমাননা এবং মানবাধিকারের প্রতি চরম অবহেলা হিসেবে তুলে ধরেন। এরদোগান আরও বলেন, “ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন বন্ধ না হলে, ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে না এবং এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।” তিনি মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং সংহতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর একতাবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
অধিবেশনে উপস্থিত দেশগুলোর অনেকেই ইসরায়েলের প্রতি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে মুসলিম নেতাদের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ড এবং ফিলিস্তিনের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানোর পর, বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের সমালোচনা করলেও তারা কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ করেনি।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডের সমর্থক, মুসলিম নেতাদের বক্তব্য বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার কর্মী এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে নতুন করে আলোচনা জাগিয়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর যে মানবিক সংকট চলছে তা আরও প্রকাশ্যে এসেছে।
আরও পড়ুন: ‘ভার্জিন’ মেয়ে পছন্দ কিমের, প্রতি বছর ২৫ কিশোরীকে বাছাই করেন ‘ফূর্তি’র জন্য
ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য
অধিবেশনে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরাও ইসরায়েলের আক্রমণের নিন্দা জানান। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবিতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ করেন। ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি বলেন, “ইসরায়েলের এই বর্বর আচরণ আর সহ্য করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”
ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা আরও বলেন, ইসরায়েল যেভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে তা শুধু ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য নয়, বরং বিশ্বের শান্তির জন্যও হুমকিস্বরূপ। তারা জাতিসংঘকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ইসরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার মাধ্যমে মুসলিম নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য তাদের সংগ্রাম আরও তীব্রতর হচ্ছে। তারা ইসরায়েলকে তুলোধুনো করে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এই আগ্রাসনের অবসান হওয়া উচিত। ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন, বিশেষ করে জাতিসংঘের মত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন