‘রাজাকার’ ইস্যুতে উত্তাল ভারতের রাজনীতি, চলছে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ

ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘রাজাকার’ ইস্যু নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষত, বিজেপি নেতা ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গের মধ্যে এই ইস্যুতে তীব্র বাকবিতণ্ডা ও পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলছে। সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য নিয়ে এই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে এবং এতে অংশ নিয়েছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী প্রিয়ঙ্ক খাড়গেও।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যোগী আদিত্যনাথ ‘রাজাকার’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের প্রতি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। যোগী বলেন, খাড়গে তার মা ও বোনের মৃত্যুর ব্যাপারে কখনো কিছু বলেন না, কারণ তাদের মৃত্যু ঘটে রাজাকারদের আক্রমণে। তার দাবি, মুসলিম ভোট হারানোর ভয়ে খাড়গে এই বিষয়ে কথা বলেন না। আদিত্যনাথের এমন মন্তব্যে কংগ্রেসে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন: ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান, দেশবাসীকে নামাজ পড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

যোগীর আক্রমণের পর কংগ্রেস নেতা প্রিয়ঙ্ক খাড়গে পাল্টা জবাব দেন। তিনি বলেন, তার বাবা কখনো রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিকে ব্যবহার করেননি এবং তিনি কখনোই ‘ভিকটিম কার্ড’ খেলার চেষ্টা করেননি। প্রিয়ঙ্ক খাড়গে আরও বলেন, তার বাবা মল্লিকার্জুন খাড়গে সবসময় তার মর্যাদা বজায় রেখে রাজনীতি করেছেন এবং নিজের ব্যক্তিগত দুঃখকে কখনোই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেননি। তিনি যোগ করেন যে, খাড়গে পরিবার রাজাকারদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, তবে এর জন্য পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দোষারোপ করা উচিত নয়। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, প্রতিটি সম্প্রদায়েই কিছু খারাপ মানুষ থাকে, কিন্তু এর জন্য সমগ্র সম্প্রদায়কে দোষী করা উচিত নয়।

এই বিতর্কে কংগ্রেস নেতা প্রিয়ঙ্ক খাড়গে তার বাবার বুদ্ধ, বাসবন্না এবং আম্বেদকরের মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ৮২ বছর বয়সী মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবিধান রক্ষা ও দেশের মানুষের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তার মতে, খাড়গে সবসময়ই সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় অবিচল থেকেছেন।

আরও পড়ুন:  বিয়ের বাস নদীতে পড়ে নিহত ১৪, বেঁচে আছেন নববধূ

যোগী আদিত্যনাথের সাম্প্রতিক ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ মন্তব্য নিয়ে মল্লিকার্জুন খাড়গে বিজেপির এই ধরনের বিভাজনমূলক কথাবার্তার তীব্র সমালোচনা করেন। খাড়গে মন্তব্য করেন যে, অনেক রাজনৈতিক নেতা সাধুর ছদ্মবেশে থাকেন এবং পরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি বিশেষভাবে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘অনেকে মুখ্যমন্ত্রীও হয়ে যান, তারা গেরুয়া কাপড় পরেন, মাথায় তাদের চুল থাকে না, অথচ একই সঙ্গে বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিভাজনের ডাক দেন।’’

খাড়গে আরও বলেন, তিনি এই ধরনের নেতাদের উদ্দেশে বলতে চান, ‘‘যদি সন্নাসী হন, তবে রাজনীতি থেকে সরে যান। রাজনীতিতে থেকে জনগণকে বিভাজিত করা এবং বিদ্বেষ ছড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’ তার মতে, এই ধরনের নেতারা কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মীয় পরিচয়কে ব্যবহার করছেন, যা অত্যন্ত বিভাজনমূলক ও দেশের জন্য ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পর্যটক কম, কলকাতার ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

এই বিতর্ক এবং পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের মাধ্যমে দেখা যায়, ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়েছে এবং রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতপাতের প্রসঙ্গ যেন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

রাজাকার দের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের বক্তব্যে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছেন, তবে এই বিতর্কে কোনো সিদ্ধান্তমূলক সমাধান আসেনি।

Juger Alo Google News যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

2 thoughts on “‘রাজাকার’ ইস্যুতে উত্তাল ভারতের রাজনীতি, চলছে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ”

Leave a Comment