আজ ১৯ নভেম্বর, মঙ্গলবার, পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ২০২৪। এটি এমন একটি দিন যা লিঙ্গভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের গুরুত্ব এবং সমাজে তাদের ইতিবাচক ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে উদযাপন করা হয়। ১৯৯৪ সালে এই দিবসটি পালনের প্রস্তাব করা হলেও, পুরুষদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশেষ দিবস পালনের ধারণা আরও অনেক পুরোনো।
আরও পড়ুন: আজ আনফ্রেন্ড দিবস – কাকে আনফ্রেন্ড করবেন ?
১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে’ নামে এক বিশেষ দিন পালিত হতো, যা পুরুষদের বীরত্ব ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উৎসর্গ করা হয়েছিল। পরে এ দিবসটির নাম পরিবর্তন করে ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’ রাখা হয়, যা আজও রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। আধুনিক আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের ধারণা আসে ১৯৯৯ সালে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ড. জেরোম তিলক সিংয়ের উদ্যোগে, যা পরে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরও অনেক দেশ। নারী দিবসের মতো, এই দিবসটির উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতা নয়, বরং পুরুষদের ভূমিকা ও অভিজ্ঞতাগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরা। পরিবার, সমাজ এবং দেশের উন্নয়নে পুরুষদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সমতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য।
পুরুষ দিবস এর মূল উদ্দেশ্য ও প্রতিপাদ্য
পুরুষ দিবসের ছয়টি প্রধান প্রতিপাদ্যের মধ্যে আছে:
- ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের প্রচারণা।
- সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশুর যত্নে পুরুষদের অবদান উদযাপন।
- পুরুষদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য সচেতনতা।
- পুরুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক সামাজিক নিয়ম ও আইনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি।
- নারী ও পুরুষের আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন ও সমতার প্রসার।
- সকলের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধিশীল পৃথিবী গড়ে তোলা।
পুরুষদের প্রতি বৈষম্য: এক নীরব বাস্তবতা
দাম্পত্য সম্পর্ক ও পরিবারের ক্ষেত্রে অনেক পুরুষ আজ বিভিন্ন সামাজিক ও আইনি বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার পুরুষরা সামাজিক মর্যাদা ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নীরব থেকে যাচ্ছেন। অনেক পুরুষই আইনি সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করলেও পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে কোনো নির্দিষ্ট আইন না থাকায় তারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।
নারী ও শিশু সুরক্ষার জন্য দেশে অনেক আইন থাকলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব আইন পুরুষদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। আইন ও সমাজে পুরুষদের জন্যও নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে।
আরও পড়ুন: ইন্টারনেট দুনিয়ার অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখবে কাহফ
পুরুষ দিবস এর গুরুত্ব
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সমাজে প্রচলিত একাকীত্ব পুরুষদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই দিবসটি পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস শুধু পুরুষদের নয়, বরং নারী-পুরুষ একসাথে একটি সুস্থ, সমৃদ্ধিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সবার মাঝে সমতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার বার্তা নিয়ে আসে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন