ঢাকা, ২৩ মে ২০২৫ — দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিদিনের রাস্তাজুড়ে আন্দোলন এবং রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার ঘাটতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এসব পরিস্থিতিতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের কথা ভাবছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ক্ষোভ, হতাশা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমি যদি কাজই করতে না পারি, তবে এই পদে থাকার মানে কী?”
এখন অধ্যাপক ইউনুসের পদত্যাগ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা- কি নতুন মোড় আনছে?
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
সহকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা
বৈঠকের পরে উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, অধ্যাপক ইউনূস দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রতিদিনের আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট বিঘ্ন, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ব্যর্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেসব সহযোগিতা প্রয়োজন, তার অভাব প্রবলভাবে টের পাচ্ছেন তিনি। এমন অবস্থায় গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, “যদি আমি সংস্কার করতে না পারি, ন্যায্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারি, তবে এই পদে থাকার মানে কী?” বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা যদি নতুন করে আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে পার, তাহলে আমি সরে যেতে চাই।”
আরো পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট – কোনো ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে আয় শুরু করুন!
ইউনুসের পদত্যাগ নিয়ে নতুন শঙ্কা: নির্বাচন ও ব্যালট ছিনতাই
প্রধান উপদেষ্টা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে সেটি সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, “যদি ব্যালট ছিনতাই হয়, তাহলে পুলিশ বা প্রশাসন তা থামাতে পারবে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান।”
এ প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ভালো নির্বাচন না হলে তার দায়ভার তিনি নিতে চান না। দেশের মানুষ যদি তাঁকে দায়ী করে, সেটি তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত নন।
আরও পড়ুন
পদত্যাগ ভাবনা ও জাতির উদ্দেশে ভাষণের খসড়া
বৈঠকে একপর্যায়ে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ইচ্ছা আরও স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, “আমি থাকতে চাই না, কারণ পরিস্থিতি এমন যে কাজ করাই যাচ্ছে না।” সূত্র জানায়, তিনি জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেওয়ার কথাও বলেন, যেখানে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কাজ করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করবেন। এমনকি ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা প্রচার করা হয়নি। এই বিষয়ে পরবর্তী আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক স্টোরি থেকে আয়ের সুযোগ: কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য সুখবর, পারবনে আপনিও


এনসিপি আহ্বায়কের সাক্ষাৎ ও অনুরোধ
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যান। তিনি অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে একান্ত আলাপ করেন। পরে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে থেকে কী লাভ? আমাকে যেখান থেকে আনা হয়েছে, সেটা ছিল গণ–অভ্যুত্থানের পর। মানুষের আশা ছিল, আমি পরিবর্তন আনব। কিন্তু এখন আমাকে যেভাবে জিম্মি করে রাখা হয়েছে, তাতে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না।”
নাহিদ ইসলাম জানান, তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অনুরোধ করেছেন যেন এখনই পদত্যাগ না করেন। তিনি বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ, জাতীয় নিরাপত্তা—এসব বিবেচনায় তিনি যেন আরও শক্ত থাকেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গঠনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান।”
আরো পড়ুন: 199+ Best স্টাইলিশ ফেসবুক আইডির নাম: আপনার অনলাইন পার্সোনালিটিকে করুন আরও আকর্ষণীয়!
উপদেষ্টা পরিষদের দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যরাও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে যদি সহযোগিতা না থাকে, তাহলে কোনো সরকারই সফল হতে পারে না। এর ফলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ভেঙে পড়ে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়।
তারা মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যদি এই অবস্থায় পদত্যাগ করেন, তবে দেশের অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে যাবে। এক সদস্য বলেন, “এই সংকটে তাঁকে যদি আমরা ধরে রাখতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর এখনও আস্থা রাখে। তারা মনে করেন, তিনি যদি পুরো মেয়াদ দায়িত্বে থাকেন, তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।
আরও পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম: বিকাশ, নগদ বা রকেটে পেমেন্ট


পথ সামনে কী?
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আনতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছে। কেউ বলছে, এটা সরকারের ব্যর্থতা, কেউ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তবে সাধারণ মানুষের মনে এখন একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—আবার কি এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে দেশ?
সবার দৃষ্টি এখন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে। তিনি কি সত্যিই পদত্যাগ করবেন, নাকি সকল বাধা অতিক্রম করে সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে যাবেন—এই প্রশ্নের উত্তর জানার অপেক্ষায় আছে পুরো জাতি।
এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী বৈঠকে হয়তো কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আর তখনই পরিষ্কার হবে, দেশের অন্তর্বর্তী রাজনীতির রূপরেখা কী হতে চলেছে।
সুশীল সমাজের মন্তব্য:
✧ “আমি মনে করি, ইউনূস স্যারের মতো একজন নিরপেক্ষ মানুষ দেশের জন্য শেষ ভরসা। উনার যদি পদত্যাগ করতে হয়, তবে দেশে গণতন্ত্রের আশা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।” — রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর
✧ “নেতা নয়, একটা সিস্টেম দরকার। ইউনূস স্যার সৎ হতে পারেন, কিন্তু যদি কেউ কাজ করতে না দেন, তাহলে তিনিও কিছুই করতে পারবেন না।” — তানভীর হোসেন, বরিশাল
✧ “সরকার, প্রশাসন আর রাজনীতিকরা যদি একত্রে না থাকে, তাহলে একজন ইউনূস কিছুই করতে পারবেন না। তাকে জিম্মি করার মানে, জাতিকে জিম্মি করা।” — রুবিনা সুলতানা, খুলনা
✧ “দেশের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্থিতিশীলতা। আন্দোলন আর হানাহানি থামাতে হবে আগে।” — আবদুল্লাহ আল নোমান, নারায়ণগঞ্জ
✧ “প্রধান উপদেষ্টার এই অসহায়ত্বের কথা শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু সত্যি কথা, যদি কাজ করতে না পারেন, তাহলে তাঁর সরে যাওয়া উচিত।” — সামিয়া রহমান, ঢাকা
✧ “একজন নোবেলজয়ীর এভাবে প্রকাশ্যে হতাশা প্রকাশ করা দেশের জন্য ভালো নয়। আশা করি তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবদিক ভাববেন।” — মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম
আপনার মন্তব্য কি? আপনি কি প্রধান উপদেষ্টা থাকুক, নাকি পদত্যাগ করুক? আপনার কমেন্টে জানাতে একদম ভুলবেন না?
পাঠকের মন্তব্য:
এই খবরটি পড়ে আপনার কী মতামত? আপনি কি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের পক্ষে, না বিপক্ষে? চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধি কী?
নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না।
আপনার মন্তব্য কি? আপনি কি চান প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্বে থাকুন, নাকি পদত্যাগ করুন? আপনার মতামত আমাদের জানাতে একদম ভুলবেন না!