রংপুর বেড়েছে ডিমের দাম, সবজি-মুরগি স্থিতিশীল

নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুরের খুচরা বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পোলট্রি ডিমের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমে গড়ে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে সবজি ও মুরগির দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। দাম না বাড়লেও আগাম বৃষ্টির কারণে ভবিষ্যতে কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা।

বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক পণ্যের দাম আগের অবস্থানে থাকলেও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে আয় বাড়ছে না, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা

ডিমের দাম বাড়ায় চিন্তায় ভোক্তা, চাপ বিক্রেতারও

রংপুর শহরের হাট-বাজারে গেলেই চোখে পড়ছে ডিম নিয়ে মানুষের হিসাব-নিকাশ। সপ্তাহখানেক আগেও যেই ডিম ৪৬ টাকা হালি ছিল, এখন তা ৪৮ টাকার নিচে মিলছে না।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মুলাটোল আমতলা বাজারের ডিম বিক্রেতা হেলাল মিয়া জানালেন,

“আগে ৪৬ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে নিতে হচ্ছে। তাই কমে দিতে পারছি না।”

লালবাগ বাজারের আরেক বিক্রেতা মাহবুব হোসেন বললেন,

“ফিডের দাম বেড়েছে। খামারিরা যেভাবে বাড়তি দামে দিচ্ছে, আমাদেরও কিছু লাভ রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে।”

বর্তমানে বাজারে:

  • পোলট্রি ডিম: হালি ৪৮ টাকা
  • হাঁসের ডিম: হালি ৭০–৭৫ টাকা

ডিম কিনতে এসেছেন সেনপাড়ার বাসিন্দা অপু। তার কণ্ঠে ক্ষোভ আর হতাশা—

“সপ্তাহখানেক আগেই ৪৬ টাকায় নিয়েছি। আজ বলছে ৪৮! প্রতিদিন তো ডিম লাগে, বাদও দিতে পারছি না।”

দাম সামান্য বাড়লেও অনেক পরিবারের জন্য সেটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে যাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ডিম থাকেই।

আরো পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট – কোনো ইনভেস্ট ছাড়াই ঘরে বসে আয় শুরু করুন!

সবজিতে স্বস্তি
সবজিতে স্বস্তি

সবজি-মুরগির বাজারে স্বস্তির হাওয়া, দাম প্রায় আগের মতোই

রংপুরের বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে ঠিকই, তবে সবজি আর মুরগির দামে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বেশিরভাগ সবজিই বিক্রি হচ্ছে আগের দামে, শুধু গাজরের দাম কিছুটা বেড়ে কেজিপ্রতি ৯০–১০০ টাকায় পৌঁছেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঝিঙা, করলা, পটোল, কাঁকরোল, শসা, লাউ, কচুর লতি—এসব সবজি এখনও আগের দরেই মিলছে। এতে করে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছে।

➡️ কিছু সবজির বর্তমান বাজারদর (প্রতি কেজি):

  • টমেটো: ৩৫–৪০ টাকা
  • গাজর: ৯০–১০০ টাকা
  • কাঁকরোল: ৬০–৭০ টাকা
  • ঝিঙা: ৩০–৩৫ টাকা
  • চাল কুমড়া: ২৫–৩০ টাকা
  • কাঁচকলা (হালি): ২৫–৩০ টাকা
  • সজনে: ৯০–১০০ টাকা
  • করলা: ৩০–৩৫ টাকা
  • শসা: ৩৫–৪০ টাকা
  • লাউ: ৪০–৫০ টাকা
  • কচুর লতি: ৩০–৪০ টাকা
  • ধনেপাতা: ১২০–১৫০ টাকা
  • কাঁচা মরিচ: ৪০–৫০ টাকা
  • আদা: ১৪০–১৫০ টাকা
  • দেশি রসুন: ১৪০–১৫০ টাকা

এছাড়া পুঁইশাক, লালশাক, পালং, কলমিশাকসহ নানা ধরনের শাকপালা পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০–২০ টাকায় আঁটি দরে।

একজন বিক্রেতা বলেন,

“বৃষ্টির কারণে জমি কাদায় ভরে গেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো জোগান কমেনি। তাই দামও তেমন বাড়েনি।”

সবজি বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকায় নিত্যদিনের বাজার করতে আসা মানুষদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে।

আরও পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম: 2025 সালের সেরা Apps ও ওয়েবসাইট

মুরগির বাজারে বড় কোনো পরিবর্তন নেই, দাম আগের মতোই

রংপুরের বাজারে যেখানে ডিমের দাম বাড়তির দিকে, সেখানে মুরগির বাজারে এখনো তেমন কোনো ঝাঁকুনি দেখা যায়নি। ব্রয়লার থেকে শুরু করে সোনালী বা দেশি মুরগি—সবই বিক্রি হচ্ছে আগের দরে।

বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা মোটামুটি থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম বাড়েনি। ফলে ডিমের তুলনায় মুরগির বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল।

➡️ বর্তমানে মুরগির বাজারদর (প্রতি কেজি):

  • ব্রয়লার মুরগি: ১৬০–১৭০ টাকা
  • পাকিস্তানি সোনালী: ২৫০–২৬০ টাকা
  • হাইব্রিড সোনালী: ২৪০–২৫০ টাকা
  • দেশি মুরগি: ৫০০–৫৮০ টাকা

স্থানীয় এক বিক্রেতা বলেন,

“মুরগির দাম বেশি ওঠানামা করছে না। এখনো সবাই আগের রেটেই নিচ্ছেন। ক্রেতারা দাম শুনে খুব একটা বিরক্ত হচ্ছেন না।”

অন্যদিকে বাজারে আসা এক ক্রেতা জানান,

“ডিমের দামের তুলনায় মুরগি এখন তুলনামূলক সস্তা মনে হয়। সপ্তাহে একদিন হলেও মুরগি কিনে নিচ্ছি।”

সবমিলিয়ে মুরগির বাজারে এখনো স্বস্তির বাতাস বইছে, তবে বৃষ্টির প্রভাবে সামনে সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

মাছ-মাংস, চাল-ডাল ও তেলের বাজারে এখনো আগের দামই

রংপুরের বাজারে মাছ, মাংস, চাল-ডাল কিংবা তেলের দামেও বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন—এই পণ্যে এখনো “আগের মতোই” লেখা দামই দেখতে পাচ্ছেন।

মাছের বাজারে রুই, কাতল, তেলাপিয়া থেকে শুরু করে পাঙাশ—সবই মিলছে স্থিতিশীল দামে।

➡️ মাছের বাজারদর (প্রতি কেজি):

  • রুই: ২৭০–৩৫০ টাকা
  • মৃগেল: ২২০–২৫০ টাকা
  • তেলাপিয়া: ১৪০–১৬০ টাকা
  • পাঙাশ: ১৫০–১৬০ টাকা
  • কাতল: ৪০০–৪৫০ টাকা
  • শিং: ৩০০–৪০০ টাকা

মাংসের দামেও তেমন কোনো পরিবর্তন নেই।

  • গরুর মাংস: ৭২০–৭৫০ টাকা
  • খাসির মাংস: ১০০০–১২০০ টাকা

চাল-ডালের বাজারেও দামের তালিকায় এখনো কোনো বড় চমক নেই।
➡️ চাল ও ডাল:

  • মিনিকেট: ৯০–৯৫ টাকা
  • নাজিরশাইল: ৯০ টাকা
  • মুগডাল: ১৬০–১৮০ টাকা
  • মসুর ডাল: ১৩০–১৪০ টাকা
  • বুটের ডাল: ১২০–১৪০ টাকা

তেল ও চিনির দামেও কোনো হঠাৎ পরিবর্তন আসেনি।

  • বোতলজাত সয়াবিন: ১৮০–১৯০ টাকা
  • খোলা সয়াবিন: ১৮০–২০০ টাকা
  • চিনি: ১২০ টাকা

বৃষ্টির কারণে বাজারে ভবিষ্যৎ দামের শঙ্কা

সবজির দাম এখনও স্থিতিশীল থাকলেও, বিক্রেতারা ভবিষ্যতের বাজার নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।
লালবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আজিজ বলেন,

“প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। জমি ভিজে থাকে, ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে কষ্ট হয়। অনেক সময় পচেও যায়। এসব কারণে সামনে সবজির দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে।”

বৃষ্টির কারণে পরিবহন, সংরক্ষণ ও সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে শুধু সবজি নয়, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দামেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিমের বাজার
ডিমের বাজার

ডিমের দাম বাড়ার কারণ কী? যা বলছেন বিক্রেতা ও বিশেষজ্ঞরা

রংপুরের বাজারে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বাজারের বিক্রেতা থেকে শুরু করে খামারি ও বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন—এটা একদিনে হয়নি, ধীরে ধীরে অনেক কিছুর প্রভাব মিলে এই দাম বেড়েছে।

➡️ ১. পোলট্রি ফিডের দাম বেড়েছে

মুরগিকে খাওয়ানোর খাবার—যেমন ভুট্টা, সয়াবিন, খৈল—এসবের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে খামারিরা প্রতিটি ডিম উৎপাদনেই বেশি খরচ করছেন। খরচ বাড়লে বিক্রির দাম তো বাড়বেই।

➡️ ২. টানা বৃষ্টিতে সমস্যা

বৃষ্টির কারণে অনেক খামারে মুরগির মৃত্যু হয়েছে বা ডিম দেওয়া কমে গেছে। গরম, ভেজা আবহাওয়া মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে ডিমের উৎপাদন কমেছে, সরবরাহ কমে গেছে বাজারে।

➡️ ৩. সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

পাইকারি পর্যায়ে কিছু ব্যবসায়ী একসাথে দাম বাড়িয়ে দেন, যা সাধারণ ভোক্তার পকেটে বাড়তি চাপ ফেলে। এই সিন্ডিকেট ভাঙা না গেলে দাম বাড়ার প্রবণতা থাকবেই।

➡️ ৪. সরবরাহ কম, চাহিদা বেশি

মাঠপর্যায়ে ডিম যতটা চাহিদা আছে, তার তুলনায় সরবরাহ কম। পাইকারি বাজারেও ডিমের সরবরাহ নিয়মিত না হওয়ায় দাম বাড়ছে।

➡️ ৫. প্যাকেটজাত ফিডের উপর নির্ভরতা

দেশি বা স্থানীয় বিকল্প ফিড ব্যবহারে খামারিরা আগ্রহ পাচ্ছেন না, কারণ মান নিশ্চিত নয়। ফলে তারা দামি ব্র্যান্ডের ফিডের উপরই নির্ভর করছেন, যা আরও ব্যয়বহুল।

সব মিলিয়ে এইসব কারণ একত্রে কাজ করছে ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে। বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত সমাধান না হলে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।

ডিমের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

ডিমের দাম বাড়ছে, আর এর চাপ গিয়ে পড়ছে সবচেয়ে বেশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষদের ওপর। প্রতিদিনের খাবারে যেখানে ডিম অপরিহার্য, সেখানে এখন সেটাই হয়ে উঠছে হিসাবের বিষয়।

সেনপাড়ার বাসিন্দা এবং স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আবু হেনা বলেন,

“আমরা পরিবারের চারজন প্রতিদিন একটা করে ডিম খাই। এখন তো প্রতি ডিম ১২ টাকা করে পড়ে। মাসে শুধু ডিমেই প্রায় দেড় হাজার টাকা চলে যাচ্ছে। এটা আমাদের মতো পরিবারের জন্য বড় বোঝা।”

বাজারে এমন অনেকেই আছেন যারা সপ্তাহে ডিম কিনতেন দু’বার, এখন সেখানে একবার করেও কষ্টে চলছেন।

বিশেষজ্ঞদের মত: নিয়ন্ত্রণে না এলে আরও বাড়তে পারে দাম

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তাদের বক্তব্য:

  • পোলট্রি উৎপাদনের খরচ না কমলে দামও কমবে না
  • সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে দরকার কঠোর মনিটরিং
  • সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকান কার্যকরভাবে চালু করতে হবে

তারা আরও বলেন, শুধু দাম ঘোষণা করলেই হবে না, সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না—তা মাঠপর্যায়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাধানে যা করা যেতে পারে

বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশেষজ্ঞ ও বিক্রেতাদের দেওয়া কিছু বাস্তবসম্মত পরামর্শ হলো:

  1. ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করা
    যেখানে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য, বিশেষ করে ডিম-তেল-চাল-ডাল, নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে।
  2. ভর্তুকিমূল্যে পোলট্রি ফিড সরবরাহ
    ছোট খামারিরা যেন কম দামে ফিড পায়, তাহলে তারা কম খরচে ডিম উৎপাদন করতে পারবে।
  3. মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনা
    খামারিরা যেন সরাসরি পাইকার বা ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।
  4. বাজার মনিটরিং বাড়ানো
    সরকারি টিম নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করলে অনিয়ম কমে যাবে।

সবমিলিয়ে, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে সরকারের পাশাপাশি খামারি, বিক্রেতা আর ভোক্তা—সবারই সচেতনতা জরুরি।

উপসংহার:

রংপুরের বাজারে ডিমের দাম বাড়লেও সবজি ও মুরগির বাজার এখনো স্থিতিশীল রয়েছে, যা আপাতত স্বস্তির খবর। তবে চলমান বৃষ্টিপাত, পরিবহন সমস্যার আশঙ্কা ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে সামনে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

বিশেষ করে মৌসুমি সবজির ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও নজরদারি ও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সরকার, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সম্মিলিতভাবে সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা না নিলে সাধারণ মানুষের নিত্যপণ্যের চাপে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

2 thoughts on “রংপুর বেড়েছে ডিমের দাম, সবজি-মুরগি স্থিতিশীল”

Leave a Comment