বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে বড় পরিবর্তন: বয়সসীমা তুলে দিল সরকার

বাংলাদেশের লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী যারা শিক্ষক হতে চেয়েও শুধুমাত্র বয়সসীমার কারণে সুযোগ হারাচ্ছিলেন, তাদের জন্য এসেছে এক বিশাল সুখবর।
সরকার এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমার বাধা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

এখন থেকে শুধুমাত্র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সময় বয়স বিবেচনায় নেওয়া হবে, কিন্তু যাদের হাতে সনদ থাকবে তারা পরে যেকোনো বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন, বয়সসীমা যাই হোক না কেন।

আরো পড়ুন: মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করার উপায় খুঁজছেন? রইলো ১০টি পরীক্ষিত সহজ পথ

✅ এতদিন যা হচ্ছিল

বাংলাদেশে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে হলে এনটিআরসিএর (NTRCA) মাধ্যমে নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষায় পাস করলে মেলে একটি সনদ।

তবে সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। যারা সেই নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করতেন, তারা অনেক সময় পরে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে বয়সসীমা অতিক্রম করায় আর আবেদন করতে পারতেন না।

এতে সনদ হাতে থাকলেও চাকরির সুযোগ হারিয়ে যেত। বিষয়টি ছিল অনেকের জন্য হতাশাজনক।

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ

✅ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে বড় পরিবর্তন: নতুন কী হলো?

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ রবিবার (২৫ মে) এক সভায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় জানানো হয়—

“শুধু নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদন করার সময় প্রার্থীর বয়স বিবেচনায় নেওয়া হবে। পরবর্তীতে যখন গণবিজ্ঞপ্তি আসবে, তখন বয়স যাই হোক না কেন, আবেদন করা যাবে।”

এই সিদ্ধান্তকে বলা হচ্ছে গেম চেঞ্জার

✅ কেন এই পরিবর্তন?

সরকারের কর্মকর্তারা নিজেরাই বলছেন— আগে দুই জায়গায় বয়সসীমা চেক করা হতো। নিবন্ধনের সময়ও, আবার গণবিজ্ঞপ্তির সময়ও।

এই দ্বিচক্র পদ্ধতিতে অনেক যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়ে যেতেন, যাদের শুধু বয়সের কারণে আর আবেদন করার সুযোগ থাকত না।

একজন কর্মকর্তা বলেন:

“নিবন্ধন পরীক্ষায় যিনি পাস করেছেন, তিনি তো তখন বয়সসীমার মধ্যে ছিলেন। তাহলে পরে কেন তার বয়স বড় হয়ে যাওয়ার কারণে চাকরির দরজা বন্ধ হবে?”

এই প্রশ্নের বাস্তব উত্তর দিতে গিয়েই বয়সসীমার দ্বৈত যাচাইয়ের প্রথা বাতিল করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: মেয়েদের ঘরে বসে আয় করার উপায়: সময় এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর

✅ কারা সবচেয়ে উপকৃত হবেন?

১. যারা আগে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, কিন্তু বয়সের কারণে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেননি।
২. যারা পড়াশোনা শেষে কিছুদিন পর চাকরির চিন্তা শুরু করেন এবং সময় চলে যায়।
৩. যারা দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাকর্মক্ষেত্রে প্রবেশের স্বপ্ন দেখছিলেন, কিন্তু বয়স ছিল প্রধান বাঁধা।

❓ এখন থেকে কীভাবে প্রক্রিয়া চলবে?

  1. নিবন্ধন পরীক্ষার সময় – বয়সসীমা প্রযোজ্য থাকবে (সাধারণত ৩৫ বছর)।
  2. নিবন্ধনে পাস করলে – হাতে সনদ থাকবে, সেটির মেয়াদ থাকবে অনির্দিষ্টকাল।
  3. গণবিজ্ঞপ্তি এলে – আপনি যদি নিবন্ধন পাস করে থাকেন, তবে বয়স যাই হোক না কেন, আবেদন করতে পারবেন।

অর্থাৎ নিবন্ধন পাস করলেই আপনি ভবিষ্যতের যেকোনো নিয়োগে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।

❓ এখন বিধিমালা কোথায় দাঁড়িয়েছে?

বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি সংশোধিত বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে।
➡️ সেটি প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
➡️ পরে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হবে।
➡️ সবুজ সংকেত মিললেই এটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হবে

তবে মন্ত্রণালয় পরিষ্কার জানিয়েছে — বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো নতুন গণবিজ্ঞপ্তি পুরোনো নিয়মেই চলবে

✅ চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

এই খবর সামনে আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
অনেকে লিখেছেন—

“এই সিদ্ধান্ত আরও ৫ বছর আগে হলে হয়তো আমি আজ শিক্ষক হতাম।”
“নিবন্ধন পাস করেও ৩ বছর বসে আছি। অবশেষে সঠিক সিদ্ধান্ত!”

অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন— “যোগ্যতা থাকলে সুযোগ পাওয়া উচিত, বয়স দিয়ে থামিয়ে দেওয়া ঠিক না।”

✅ ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা

✔️ নিবন্ধন পাস করা প্রার্থীদের জন্য একটা ডাটাবেইস তৈরি করা উচিত, যাতে বয়সের ভিত্তিতে কাউকে বাদ না দেওয়া হয়।
✔️ নিয়মিত ও দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা দরকার, যাতে অপেক্ষাকৃত কম বয়সেই সবাই সুযোগ পান।
✔️ বয়স নয়, বরং মেধা ও যোগ্যতা নিয়োগের মূল মাপকাঠি হওয়া উচিত — সেটিই এই সিদ্ধান্তের মূল বার্তা।

আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা

✅ নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য

বাংলাদেশে এনটিআরসিএর নিবন্ধন পরীক্ষা মোটামুটি দুই ধাপে হয়ে থাকে— লিখিত ও মৌখিক। প্রতি বছর লাখ লাখ প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেন।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আলাদা আলাদা বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় পাস করলেই মেলে নিবন্ধন সনদ, যা শিক্ষকতার জন্য একটি অপরিহার্য প্রমাণপত্র।

এখন পর্যন্ত ১-১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রায় ১০ লাখের বেশি প্রার্থী পাস করেছেন, কিন্তু চাকরি পেয়েছেন মাত্র কয়েক শতাংশ। এর বড় কারণ ছিল সীমিত গণবিজ্ঞপ্তি এবং বয়সসীমা।

✅ অন্যান্য দেশের উদাহরণ

অনেক দেশেই শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা কড়াকড়ি হয় না। যেমন:

  • যুক্তরাজ্য: শিক্ষকতার জন্য বয়সের নির্দিষ্ট সীমা নেই।
  • কানাডা: যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণই মূল বিবেচ্য।
  • ভারত: কিছু রাজ্যে বয়সসীমা থাকলেও পাস করা সনদের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল।

বাংলাদেশে নতুন এই নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

✅ শেষ কথা

বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবসমাজ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে।
এমন একটি সময়েই সরকারের পক্ষ থেকে বয়সসীমা সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যারা শিক্ষকতা করতে চান, তারা এখন থেকে আর শুধু বয়সের জন্য থেমে যাবেন না।
নিবন্ধন পাস করলেই ভবিষ্যতের যেকোনো নিয়োগে আপনি থাকবেন প্রতিযোগিতায়।

সত্যিই বলা যায়— শিক্ষকের স্বপ্ন এখন আর বয়সে আটকে নেই।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ অনুসরণ করুন

Leave a Comment