সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ও অবসরের সময় বাড়ছে

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা

বিভিন্ন মহল থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। অবশেষে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য আসছে সুখবর—বাড়ছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা। পাশাপাশি অবসরের বয়সও বাড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ চলছে এবং সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান কীভাবে সংশোধন করা হবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স যথাক্রমে ৩৫ ও ৬৫ নির্ধারণ করার দাবি উঠলেও মানুষের গড় আয়ু বিবেচনায় নিয়ে বয়সসীমা চূড়ান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চাকরিতে আবেদনের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৩২ এবং অবসরের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৬২ নির্ধারণ করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: এক্স মানে কি গুগল? না জানলে জেনে নিন এর বিভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পরিবর্তনের প্রস্তাব

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণের দাবি উঠলেও, গড় আয়ু বিবেচনায় প্রস্তাবিত বয়সসীমা চূড়ান্ত হতে পারে। প্রাথমিক প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর এবং অবসরের বয়স ৩ বছর বাড়িয়ে ৬২ বছর করা হতে পারে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। জনপ্রশাসন সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, তার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বে আছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। এই কমিশন চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করতে পারে।

আরও পড়ুন: 143 মানে কি? না জানলে জেনে নিন

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থা ও বাধা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক সময় অভিজ্ঞ লোকের অভাবজনিত কারণে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যেখানে বয়সসীমা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগে বাধা এড়াতে এবং নতুন প্রকল্পের প্রয়োজনে, যেমন—পরমাণু গবেষণা ও মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে, বয়সসীমা শিথিল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

চাকরির বয়স বৃদ্ধি 2024 -এ খরচ বৃদ্ধির সম্ভাবনা

সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বাড়ালে সরকারের খরচ বেড়ে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তিন বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ালে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: এবার রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

বিভিন্ন দেশ ও বিভাগ অনুযায়ী চাকরির বয়সসীমা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে ৬৫ বছর এবং উচ্চ আদালতের বিচারকরা ৬৭ বছর পর্যন্ত চাকরি করেন। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ৬৫ বছর বয়সসীমার দাবি করলেও, সরকার আপাতত সর্বোচ্চ ২-৩ বছর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং চাকরির ধরন অনুযায়ী আবেদনের বয়সসীমা ভিন্ন, প্রশাসনিক চাকরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। শ্রীলঙ্কায় সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪০ বছর এবং নেপালে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ রয়েছে। পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাংলাদেশের মতোই ৩০ বছর।

আরও পড়ুন: ইউনূসের ‘মেগাফোন কূটনীতি’ ভারতের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি

বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর, যেখানে ১৯৯১ সালে গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫৭ বছর। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবি যৌক্তিক বলে মনে করছেন অনেকেই। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের সংগঠনগুলোও এই দাবি তুলেছে।

প্রতিযোগিতামূলক সময়ে শিক্ষার্থীরা অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ৩০ বছরের সীমা পার হয়ে যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের কারণে এই সীমা আরো সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় অনেকের জন্য সরকারি চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এবং বেকারত্বের হারও বাড়ছে।

আরও পড়ুন: 2024 সালে ফ্রি টাকা ইনকাম করার সেরা Apps এবং সাইট

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বিশেষজ্ঞদের মতামত

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, বিসিএসের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা যথার্থ। বয়স হঠাৎ বাড়িয়ে দিলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা জটিল হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত দুই থেকে তিন বছর বাড়ানো যৌক্তিক। সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি বা কমিশন গঠন করা উচিত।

সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর এই প্রক্রিয়া যদি চূড়ান্ত হয়, তবে তা বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী এবং চাকরিজীবীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি করবে।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন