শেখ হাসিনা কবে বাংলাদেশে ফিরবেন, রয়টার্সকে যা বললেন জয়

শেখ হাসিনা কবে বাংলাদেশে ফিরবেন: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন। সেখানে তাঁকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং বাংলাদেশে তাঁর ফিরে আসার তারিখ সম্পর্কে এখনও নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেই। জয় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শেখ হাসিনার দেশে ফেরা পুরোপুরি তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনা কবে বাংলাদেশে ফিরবেন এমন প্রশ্নে বলেন, “এটি তাঁর (শেখ হাসিনা) ওপর নির্ভর করবে। আমি এই মুহূর্তে আমার দলের নেতাকর্মীদের নিরাপদ রাখতে চাই এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।” জয় আরও বলেন, “আমার দলকে রক্ষা করাই আমার এখনকার প্রধান লক্ষ্য।”

আরও পড়ুন: হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের কাছে কী চায় ভারত, জানালেন জয়শঙ্কর

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আওয়ামী লীগের প্রাক্তন নেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে পরিবর্তন এসেছে, তা নিয়ে শেখ হাসিনা বর্তমানে বিদেশে আছেন। রয়টার্সের সাংবাদিকেরা জয়কে আরও প্রশ্ন করেন যে, শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরে আসবেন এবং ভবিষ্যতে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন কি না। উত্তরে জয় বলেন, “আমার মা তাঁর বর্তমান মেয়াদের পরে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন। তবে এর আগে, তিনি বাংলাদেশে ফিরে বিচার ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত।”

২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে তুলনা

জয় আরও উল্লেখ করেন যে, এটি প্রথমবার নয় যে বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরণ টেনে জয় বলেন, “আমরা এই নাটক আগেও দেখেছি। ওই সময়ও সরকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু পরে দেখা যায়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।”

২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই তৎকালীন রাজনৈতিক সংকটের সমাধান চেয়েছিল। তবে সেই সময়ের অনির্বাচিত সরকার বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরিস্থিতি শান্ত হতে অনেক সময় লেগেছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করার পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছিল।

আরও পড়ুন: নেতারা ভোগের পণ্য মনে করতেন, অভিযোগ যুব মহিলা লীগ নেত্রীর

বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন

গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তিন মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন দাবি করে। শেখ হাসিনার সরকারকে অপসারণের পর থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আমি খুশি যে এখন আমাদের সামনে কিছু সময়সীমা রয়েছে। তবে আমি আগেও দেখেছি, যেখানে অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার কর্মকাণ্ড আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।”

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এই সরকার এখনও নির্বাচনের সঠিক তারিখ এবং বিচার বিভাগের সংস্কারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। এই অবস্থায় শেখ হাসিনার দেশে ফেরা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কারের উপর জোর দিচ্ছে। তবে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।

আর ওপড়ুন: ১ কেজি পেঁয়াজের দাম কত : আজকের পেঁয়াজের বাজার দর

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

সজীব ওয়াজেদ জয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারের নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন হয়। জয় বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, কীভাবে আমাদের দল ও নেতাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালানো হচ্ছে।”

শেষ কথা

শেখ হাসিনার দেশে ফেরার প্রশ্নে এখনো নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তার দেশে ফেরা এবং পরবর্তী রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা থাকলেও আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকদের আশা, বর্তমান সংকটের দ্রুত সমাধান হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Leave a Comment