একটা সময় ছিল যখন ফেসবুক মানেই ছিল বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করা, ছবি আপলোড দেয়া আর মাঝে মাঝে লাইক গোনা। এখন সময় বদলেছে। এখন ফেসবুক মানে টাকা! হ্যাঁ, একদম সত্যি। অনেকেই এখন ফেসবুক থেকে আয় করছেন—বাড়িতে বসেই, মোবাইল হাতে, মজা করে ভিডিও বানিয়ে বা কিছু লিখে পোস্ট করে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, “ফেসবুকে ১০০০ ফলোয়ার হলে কত টাকা পাওয়া যায়?”
এই প্রশ্নটা আমরা প্রায় সবাই ভাবি। অনেকেই মনে করে, “১০০০ ফলোয়ার হলেই তো ফেসবুক টাকা পাঠিয়ে দেবে।” কিন্তু ব্যাপারটা আসলে কি এতটাই সোজা?
চলুন, একদম জিরো লেভেল থেকে পুরো বিষয়টা বুঝে নিই। আর হ্যাঁ, এই লেখাটা একদম সহজ ভাষায়, যাতে ক্লাস ফাইভের ভাইয়াও বুঝতে পারে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক কীভাবে আপনাকে অসুখী মানুষে পরিণত করছে, আপনি জানেন?
ফলোয়ার বাড়লে কি ফেসবুক টাকা দেয়?
সোজা কথায়, না। শুধু ফলোয়ার বাড়লেই ফেসবুক আপনাকে টাকা দেবে না।
একটা ভুল ধারণা আছে যে, “যত ফলোয়ার, তত টাকা।” কিন্তু ফেসবুকের পলিসি একটু আলাদা। এখানে ফলোয়ার গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু একমাত্র বিষয় না। বরং, আপনি কেমন কনটেন্ট দিচ্ছেন, কে দেখছে, কতবার দেখছে, সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ফেসবুক আয় করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ঠিক করে দিয়েছে। এগুলো মানলেই কেবল আয় সম্ভব।

ফেসবুক থেকে টাকা আয়ের সিস্টেমগুলো কী কী?
আপনি যদি ফেসবুক থেকে আয় করতে চান, তাহলে Meta (ফেসবুকের কোম্পানি) আপনাকে কিছু পথ দেখায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা জনপ্রিয় উপায় হলো:
আরও পড়ুন
১. ইন-স্ট্রিম অ্যাড (In-Stream Ads)
ভিডিওর মাঝে যে অ্যাড চলে, সেটা থেকেই সবচেয়ে বেশি আয় হয়। কিন্তু এর জন্য কিছু শর্ত মানতে হয়:
- আপনার ফেসবুক পেজে ১০,০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে
- গত ৬০ দিনে ৬০,০০০ মিনিট ভিডিও ভিউ থাকতে হবে
- ভিডিও কনটেন্ট ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে
মানে, আপনি যদি রেগুলার ভিডিও দেন, এবং তা হাজার হাজার মানুষ দেখে, তাহলে ইনস্ট্রিম অ্যাড থেকে আপনি মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
২. ফ্যান সাবস্ক্রিপশন (Fan Subscription)
এখানে ভক্তরা আপনাকে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা দেয় সাবস্ক্রাইব করার জন্য।
- মাসে ৪.৯৯ ডলার (বা আপনার ঠিক করা পরিমাণ)
- একেকটা সাবস্ক্রাইবার মানে মাসে ৫০০ টাকা প্রায়
আপনার যদি ১০০ জন সাবস্ক্রাইবারও থাকে, তাহলে মাসে ৫০,০০০ টাকা ইনকাম হতে পারে!
৩. ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ (Brand Sponsorship)
যদি আপনার পেজে ১০০০ ফলোয়ার থাকে, আর কনটেন্ট রেগুলারলি ভালো চলে (ভিউ/রিচ ভালো হয়), তাহলে ব্র্যান্ডরা আপনাকে টাকা দিয়ে তাদের প্রোডাক্ট প্রোমোট করতে বলবে।
এখানে ফেসবুক টাকা দিচ্ছে না, ব্র্যান্ড দিচ্ছে।
৪. Facebook Reels Bonus
ফেসবুক মাঝেমাঝে কিছু বিশেষ নির্মাতাকে রিলস বানানোর জন্য বোনাস দেয়। এর জন্যও কিছু শর্ত থাকে। যারা অনেক রিলস দেয় আর ভাইরাল হয়, তারা এই বোনাস পেতে পারে।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোন চার্জ দেওয়ার সময় ভুলেও যে ৫টি কাজ করবেন না, করলেই বিপদ!
ফেসবুকে ১০০০ ফলোয়ারে কিছুই হয় না?
একদম না! যদি আপনার কনটেন্ট ধামাকা টাইপ হয়—মানে ভাইরাল, রিলেটেবল, শেয়ারযোগ্য—তাহলে ১০০০ ফলোয়ার থেকেও আপনি আয় করতে পারেন। কিভাবে?
✅ ব্র্যান্ড ডিল
ছোট ছোট ব্র্যান্ড, অনলাইন শপ, নতুন পেইজের প্রোমো করতে গিয়ে অনেকসময় ছোট ইনফ্লুয়েন্সারদের খোঁজে। আপনি যদি ১০০০ ফলোয়ারের মধ্যেই অনেক রিচ আনতে পারেন, তাহলে আপনার কাছে ব্র্যান্ড আসবেই।
একেকটা পোস্ট প্রমোশনে ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
✅ Affiliate Marketing
আপনি Amazon, Daraz বা অন্য কোনো ওয়েবসাইটের প্রোডাক্টের লিংক শেয়ার করতে পারেন। কেউ যদি সেই লিংক ধরে কিনে, আপনি কমিশন পাবেন।
ফলোয়ার ১০০০ হলেও, আপনি যদি প্রতি পোস্টে ১০ জনকে কনভিন্স করতে পারেন, তবুও ইনকাম হবে।
কিভাবে ফলোয়ার বাড়াবো? কিছু রিয়েল টিপস!
১. রেগুলার পোস্ট করুন – সপ্তাহে অন্তত ৩–৫টি কনটেন্ট দিন
২. ট্রেন্ডিং টপিকে ভিডিও বানান – রিলস এখন ভাইরাল হচ্ছে
৩. ENGAGEMENT বাড়ান – কমেন্টের রিপ্লাই দিন, পোল দিন
4. নিজের চেহারা বা কণ্ঠ ব্যবহার করুন – মানুষ মানুষকেই বিশ্বাস করে
5. ভালো থাম্বনেইল দিন, ক্যাপশন কল্পনাপ্রবণ রাখুন
আপনি কি জানতেন?
একজন বাংলাদেশি কনটেন্ট ক্রিয়েটর মাত্র ২০০০ ফলোয়ারে শুরু করেছিলেন। আজ তার ফলোয়ার ৫ লাখ+, ইনকাম মাসে ১ লাখ টাকার ওপরে! কীভাবে? কারণ তিনি ভিডিও বানিয়েছেন গল্প করে, মানুষের সমস্যা নিয়ে, কমেন্টে রিপ্লাই দিয়েছেন, মানুষকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
শুধু ফলোয়ার না, মানুষ চাই আপনার কাছ থেকে real value।


তাহলে কি আপনার ফলোয়ার ১০০০ হলে কিছুই হবে না?
না। হবে। কিন্তু ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা দেবে না।
আপনার কনটেন্ট ভালো হলে, স্পনসর পাবেন, ব্র্যান্ড আসবে, লোকেরা আপনার কথা শুনবে। আর আপনি ধীরে ধীরে যাবেন ১০ হাজার, ৫০ হাজার, এক লাখ ফলোয়ারের দিকে।
১০০০ ফলোয়ার হলো শুরু। এটা শেষ না।
আরও পড়ুন: ৭ লক্ষণ- যা বলতে পারে আপনার স্মার্টফোন হ্যাকিং হচ্ছে কি না
কিছু কমন প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: আমি শুধু ছবি দেই, তাহলে ইনকাম হবে?
উত্তর: ছবি দিয়েও আয় করা সম্ভব, তবে সেটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে তা উপস্থাপন করছেন। রিলস বা ভিডিও করলে আয় বেশি হয়।
প্রশ্ন: প্রোফাইল থেকে কি আয় হয়, না পেজ লাগবে?
উত্তর: পেজ থেকে ইনকাম হয়। আপনি চাইলে প্রোফাইলকে পেজে কনভার্ট করতে পারেন।
প্রশ্ন: আমি লেখালেখি করি। শুধু লিখে ফেসবুকে ইনকাম করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে আপনি যদি লেখার সাথে ভিডিও বা লাইভ যোগ করেন, তাহলে বেশি রিচ পাবেন।
প্রশ্ন: ফেসবুক অ্যাড ব্রেক চালু করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর: একদম ফ্রি। শুধু ফেসবুকের শর্তগুলো পূরণ করলেই হবে।
প্রশ্ন: ফেসবুকে কিভাবে ফলোয়ার বাড়ে?
উত্তর: ফলোয়ার বাড়াতে হলে নিয়মিত ভালো কনটেন্ট পোস্ট করতে হবে। ছবি, ভিডিও, রিল বা লাইভ দিলে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে পোস্ট করলে আরও ভালো। নিজের প্রোফাইল বা পেজকে পাবলিক করে রাখলে নতুন মানুষ সহজেই ফলো করতে পারে।
প্রশ্ন: ফেসবুকে ফলোয়ার চেনার উপায় কী?
উত্তর: আপনার প্রোফাইলে গিয়ে “ফলোয়ার” সেকশন দেখলেই জানা যাবে কে কে আপনাকে ফলো করছে। যদি সেটিংস পাবলিক থাকে, তাহলে অন্যরাও আপনার ফলোয়ার দেখতে পাবে।
প্রশ্ন: ফেসবুকে বন্ধুর পরিবর্তে ফলো লেখা থাকে কেন?
উত্তর: যখন কেউ তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অপশন সীমিত করে রাখে (যেমন শুধু বন্ধুর বন্ধু বা কেউই না), তখন তাদের প্রোফাইলে গিয়ে ‘Add Friend’ বাটনের বদলে ‘Follow’ লেখা দেখা যায়। এটা মূলত প্রাইভেসির জন্য।
প্রশ্ন: ফেসবুকে কিভাবে ফলো বাটন যোগ করা যায়?
উত্তর: ফলো বাটন চালু করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
➤ ফেসবুক অ্যাপে/ব্রাউজারে লগইন করুন
➤ আপনার প্রোফাইলের সেটিংসে যান
➤ “Public Posts” বা “পাবলিক পোস্ট” অপশনে ক্লিক করুন
➤ “Who Can Follow Me” অপশনে গিয়ে “Public” সিলেক্ট করুন
এবার থেকে যে কেউ আপনাকে ফলো করতে পারবে, এমনকি ফ্রেন্ড না হলেও।
শেষ কথা: টাকা ফলোয়ারের পিছনে না, আইডিয়ার পিছনে আছে
যদি আপনি সত্যি কিছু বলতে চান, শেয়ার করতে চান, মানুষের উপকার করতে চান — তাহলে ১০০০ ফলোয়ারও আপনাকে সফল করে তুলবে।
আজ যদি আপনার কাছে ১০০০ জন মানুষ থাকে যারা আপনার কথা শুনে, সেটাই একটা বিজনেস শুরু করার মতো শক্তি। ফেসবুক শুধু একটা মাধ্যম। কনটেন্টই হচ্ছে আসল জিনিস।
তাই আজ থেকেই শুরু করুন। নিয়মিত কিছু পোস্ট করুন। মানুষকে উপকার করুন। আর হ্যাঁ, সময় দিন—রেজাল্ট আসবেই।
আপনি যদি এমন আরও টিপস চান ফেসবুক ইনকাম নিয়ে, তাহলে কমেন্ট করুন বা পোস্ট শেয়ার করে রাখুন। এটা হতে পারে আপনার ডিজিটাল আয়ের নতুন পথ।