WhatsApp বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই মেসেজ, ছবি, ভিডিও, এবং অন্যান্য ফাইল শেয়ার করতে পারেন। তবে শুধু যোগাযোগের জন্য নয়, WhatsApp-এর চ্যানেলগুলো ব্যবহার করেও অনেকে এখন অর্থ উপার্জন করছেন। চলুন জেনে নেই কিভাবে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে আয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: 2024 সালের ফ্রি টাকা ইনকাম করার সেরা Apps ও ওয়েবসাইট
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং আয়ের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, এমনকি হোয়াটসঅ্যাপও এখন ব্যবহারকারীদের আয়ের সুযোগ দিচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল, ব্যবহার করে ছবির মতো ভিডিও ও মেসেজ শেয়ার করা যায়, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা আয় করতে পারেন। এই লেখায় আমরা জানব কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
WhatsApp চ্যানেল কি?
WhatsApp চ্যানেল মূলত একটি ব্রডকাস্ট টুল, যা ব্যবসা, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, অথবা শিক্ষামূলক বিষয় প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ফলোয়ারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের একটি মাধ্যম, যেখানে চ্যানেলের ক্রিয়েটর বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আয়ের অনেকগুলি উপায় রয়েছে, এবং যদি সঠিকভাবে এটি ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা একটি লাভজনক আয়ের উৎস হতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির কৌশল
WhatsApp চ্যানেল থেকে আয় করতে হলে কিছু কৌশল প্রয়োগ করা জরুরি। প্রথমত, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্স নির্বাচন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। আপনার কনটেন্ট হতে হবে মানসম্পন্ন এবং দর্শকদের কাছে উপকারী। এছাড়া নিয়মিত ফলোয়ারদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের মন্তব্যের উত্তর দেয়াও জরুরি। এতে ফলোয়ারদের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং তারা চ্যানেলের সাথে যুক্ত থাকতে চায়।
আরও পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম: বিকাশ, নগদ বা রকেটে পেমেন্ট
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে আয়ের বিভিন্ন উপায়
WhatsApp চ্যানেল থেকে আয় করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে, এবং আপনার সুবিধা অনুযায়ী উপায়গুলি অনুসরণ করতে পারেন।
১. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞাপনের মডেল যেখানে কোম্পানি তাদের পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্য তৃতীয় পক্ষকে কমিশন প্রদান করে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা সম্ভব, যা আয়ের একটি জনপ্রিয় উপায়। প্রথমে, একটি প্রাসঙ্গিক পণ্য বা সেবা নির্বাচন করুন এবং সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে সাইনআপ করুন। তারপর সেই পণ্যের লিংক আপনার চ্যানেলে শেয়ার করুন। যখন কেউ সেই লিংক ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় করবে, তখন আপনি কমিশন পাবেন।
২. স্পন্সরশিপ ও ব্র্যান্ড প্রমোশন
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে স্পন্সরশিপ পাওয়ার একটি বড় সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি একটি বড় ফলোয়ার বেস তৈরি করতে পারেন, তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড আপনার চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের পণ্য প্রচারের জন্য আপনাকে স্পন্সর করতে পারে। স্পন্সরশিপের জন্য আপনাকে আপনার চ্যানেলে মানসম্পন্ন কনটেন্ট প্রদান করতে হবে এবং ফলোয়ারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আপনি উল্লেখযোগ্য আয় করতে পারবেন, যা প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা বা তার বেশি হতে পারে।
৩. পেইড সাবস্ক্রিপশন
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি পেইড সাবস্ক্রিপশন চালু করতে পারেন। এটি এমন একটি মডেল যেখানে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে আপনার এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি শিক্ষামূলক চ্যানেল চালান, তাহলে ফলোয়ারদের জন্য বিশেষ টিপস বা গাইড তৈরি করে তাদের সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে সেই কনটেন্ট দেখতে দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: কিভাবে ফেসবুকে প্রতিদিন 500 আয় করা যায়?
৪. অ্যাপ রেফারেল প্রোগ্রাম
বর্তমান সময়ে অনেক অ্যাপ তাদের প্রোডাক্ট প্রচারের জন্য রেফারেল প্রোগ্রাম চালু করে থাকে। আপনি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে এই অ্যাপগুলো প্রচার করতে পারেন এবং প্রতিটি ডাউনলোড বা সাবস্ক্রিপশনের জন্য কমিশন পেতে পারেন। আপনি যদি অনেক ফলোয়ার গড়ে তুলতে পারেন এবং তাদের কাছে আপনার রেফারেল লিংক পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে এই প্রক্রিয়ায় আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
৫. অনলাইন কোর্স এবং ওয়ার্কশপ
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি অনলাইন কোর্স বা ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে পারেন। আপনি যদি কোনো বিষয়ে দক্ষ হন, যেমন ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, বা প্রোগ্রামিং, তাহলে আপনি সেই বিষয়ে ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে পারেন এবং অংশগ্রহণকারীদের থেকে ফি গ্রহণ করতে পারেন। এটি একটি ভাল আয়ের উপায়, বিশেষ করে যদি আপনার চ্যানেলের ফলোয়ারদের সংখ্যা বড় হয়।
৬. আর্ট ও ক্র্যাফট বিক্রি
যারা আর্ট বা ক্র্যাফটের সাথে যুক্ত আছেন, তাদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। শিল্পীরা তাদের কাজ চ্যানেলে প্রদর্শন করতে পারেন এবং সরাসরি ফলোয়ারদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া ডিজিটাল পণ্য যেমন ইবুক, গাইড, টেম্পলেট, ইত্যাদিও বিক্রি করা যায়।
WhatsApp চ্যানেল থেকে আয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- মানসম্মত কনটেন্ট প্রদান: দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং উপকারী কনটেন্ট প্রদান করুন, যাতে তারা আপনার চ্যানেলের সাথে যুক্ত থাকে।
- নিয়মিত আপডেট: ফলোয়ারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে আপডেট দিতে হবে। তাতে তাদের চ্যানেলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
- পরিস্কার লক্ষ্য নির্ধারণ: চ্যানেল শুরু করার আগে, আপনার চ্যানেলের মূল উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন। যেমন, শিক্ষামূলক, তথ্যবহুল, বা প্রমোশনাল কনটেন্ট।
আরও পড়ুন: ব্লগিং কী? ব্লগিং শুরু করার আগে কি কি জানা উচিত? জেনে নিন সুবিধা অসুবিধা
চ্যালেঞ্জ এবং সতর্কতা
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে আয় করা সহজ নয়। এর জন্য সময়, ধৈর্য এবং নিয়মিত পরিশ্রম প্রয়োজন। নিচে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সতর্কতার কথা উল্লেখ করা হলো:
- ফলোয়ার ধরে রাখা: ফলোয়ারদের ধরে রাখতে হলে চ্যানেলে নিয়মিত মানসম্পন্ন কনটেন্ট প্রদান করতে হবে। দীর্ঘ সময় ফলোয়ারদের সাথে যোগাযোগ না রাখলে তারা চ্যানেল থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।
- নিয়ম মেনে চলা: হোয়াটসঅ্যাপের নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। স্প্যামিং বা ভুল তথ্য শেয়ার করলে আপনার চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা: যেকোনো প্রমোশনাল কনটেন্ট শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা জরুরি। এতে আপনার চ্যানেলের বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় থাকবে এবং ফলোয়াররা আপনার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারবে।
উপসংহার
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল আয়ের একটি নতুন এবং উদ্ভাবনী মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি ব্যবহারে আপনার দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা থাকলে আপনি সহজেই মাসে ৪০ হাজার টাকা বা তার বেশি আয় করতে পারেন। তবে আয় করার আগে আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে এবং নিয়মিত কনটেন্ট প্রদান করতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আয় করতে চাইলে প্রথমে একটি শক্তিশালী ফলোয়ার বেস তৈরি করা জরুরি, যা মানসম্মত কনটেন্ট এবং ভালো সম্পর্কের মাধ্যমে সম্ভব। এছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পন্সরশিপ, পেইড সাবস্ক্রিপশন, অ্যাপ রেফারেল, এবং অনলাইন কোর্স আয়োজনের মাধ্যমে আপনার আয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
এই লেখায় উল্লেখিত টিপস এবং কৌশলগুলো অনুসরণ করে আপনি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে আয়ের একটি নতুন পথ খুঁজে পাবেন। আপনার সৃজনশীলতা এবং পরিকল্পনা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে এই মাধ্যমটি হতে পারে আপনার আয়ের একটি সফল উৎস।
বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন
হ্যাঁ, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আয় করা সম্ভব। তবে হোয়াটসঅ্যাপ নিজে কোন সরাসরি আয়ের সুযোগ দেয় না। এটি করতে হলে স্পন্সরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা প্রোডাক্ট প্রমোশনের মতো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সরাসরি টাকা পাওয়া যায় না, কারণ এটি একটি মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন। তবে চ্যানেল বা গ্রুপ ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করতে পারেন এবং স্পন্সরশিপ বা প্রমোশনের মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
হোয়াটসঅ্যাপ ভিউয়ের জন্য কোন সরাসরি টাকা দেয় না। এটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মতো অ্যাডভান্সড মোনিটাইজেশন ফিচার সরবরাহ করে না। তবে চ্যানেলের ফলোয়ার বা ভিউ বাড়িয়ে স্পন্সরশিপ চুক্তি পেলে আয় হতে পারে।
এটি নির্ভর করে আপনার চ্যানেলের বিষয়বস্তু, দর্শক সংখ্যা এবং স্পন্সরশিপ বা প্রমোশনের ওপর। বড় চ্যানেলগুলির ক্ষেত্রে আয়ের সম্ভাবনা বেশি, তবে নির্দিষ্ট কোনো দৈনিক আয়ের গ্যারান্টি নেই।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল বা গ্রুপের মাধ্যমে আয় করার জন্য কিছু পদ্ধতি:
স্পন্সরশিপ: কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: পণ্য বা পরিষেবার লিংক শেয়ার করে কমিশন আয়।
পেইড সাবস্ক্রিপশন: কোনো বিশেষ কনটেন্টের জন্য সাবস্ক্রিপশন অফার করা।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
Code: F9463467R
1 thought on “যেভাবে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করা যায়”