সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৮ করণীয় – ইসলাম কি বলে?

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৮ করণীয়

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। মানুষের জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি মুহূর্তের দিকনির্দেশনা এতে উল্লেখ করা আছে। প্রতিটি কাজেরই রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু আদব ও সুন্নাত তরিকা। একটু ভাল করে খেয়াল করলে আমাদের দৈনন্দিন করা ছোট ছোট কাজ নেক আমলে পরিণত হতে পারে। যা পরকাল ও ইহকাল উভয়ের জন্যই ভালো। তেমনি একটি আদব ও সুন্নত তরিকা হচ্ছে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৮ করণীয় কাজ করলে অনেক নেক আমলের ভাগিদার হতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ফোনে ‘হ্যালো’ বলা হারাম- সৌদি আলেমরা কি এই ফতোয়া দিয়েছেন?

ইসলামে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মানুষের মাধ্যমে কিছু ধর্মীয় কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠান করা সুন্নত বলে গণ্য হয়। তেমনি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ৮ করণীয় কর্মকাণ্ডগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলে:

১. **আল্লাহর প্রশংসা করা:** সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রশংসা করা, শুকরিয়া আদায় করা ও সন্তানের জন্য দোয়া করা উচিত।

২. **প্রিয়জনদের সুসংবাদ দেওয়া:** সন্তান ভূমিষ্ঠের সুসংবাদ প্রিয়জনদের জানানো নবীদের সুন্নত। আবার সংবাদ জানার পর মা–বাবাকে মোবারকবাদ দেওয়া এবং খুশি প্রকাশ করাও সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। আগে কাউকে আমি এই নাম দিইনি।’ (সুরা মারইয়াম: ৭)

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘সন্তান জন্মের সংবাদ পেলে তার জন্য কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করা কর্তব্য।’ (তুহফাতুল মওলুদ)

৩. **আজান দেওয়া:** সন্তানের কানে আজান দেওয়া হয়। এই বিষয়ে আলী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘ফাতিমার ঘরে হাসান ইবন আলি ভূমিষ্ঠ হলে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে তার কানে আজান দিতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি)।

৪. **তাহনিক করা:** সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেওয়া, যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে।

আনাস (রা.) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, “তোমার কাছে কি খেজুর আছে?” বললাম, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) খেজুর চিবালেন। এরপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিহ্বা দিয়ে চুষে ও ঠোঁটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল।’ (মুসলিম)

৫. **মাথা মোড়ানো ও সদকা করা:** ছেলে বা মেয়ে হোক, জন্মের সপ্তম দিন চুল কাটা এবং চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা সুন্নত।

৬. **আকিকা করা:** নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। অনেক আলিমের মতে, আকিকা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

৭. **অর্থবাচক নাম রাখা:** ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম দিন বা সপ্তম দিন নবজাতকের নাম রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আজ রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আমার পিতা ইবরাহিমের নামানুসারে তার নামকরণ করেছি ইবরাহিম।’ (মুসলিম).

৮. **আকিকা করা:** নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। অনেক আলিমের মতে, আকিকা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবাই করেছেন।’ আনাস (রা.)–এর বর্ণনায় দুটি বকরির কথাও এসেছে। (আবু দাউদ)

ইমাম মালেক (রহ.) মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার সন্তান হয়, সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা করো, নাম রাখ ও চুল কাটো।’ (সুনানে আরবাআ)

ছেলের পক্ষ থেকে দুটি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকিকা করা সুন্নত।

এই সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আপনি আপনার নিকটস্থ ইসলামিক শিক্ষাকেন্দ্র বা আলিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।