ইসলামে সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত, যা রমজান মাসের শেষে আদায় করা হয়। এই ইবাদতের মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের রোজার সমাপ্তি উদযাপন করে থাকেন এবং সমাজের দুঃস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে দান করে থাকেন। এই আর্টিকেলে আমরা ফিতরা কার উপর ওয়াজিব, কেন দিতে হবে, কখন দিতে হবে, কাকে দিতে হবে এবং কিভাবে দিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব। তার আগে জেনে নেয়া যাক ফিতরা কি এবং অর্থ কি?
ফিতরা অর্থ কি
ফিতরা বা ফেতরা একটি আরবি শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর নামে পরিচিত। এটি ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা হয় বলে একে সাদাকাতুল ফিতর বলা হয়।
ফিতরা কি
ফিতরা হল ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী রমজানের রোজা শেষে দেওয়া এক ধরনের অর্থনৈতিক ইবাদত, যা মূলত গরিব ও দুঃখী মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি মাধ্যম।
ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে
ফিতরা ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত, যা রমজান মাসের শেষে আদায় করা হয়। এটি না কেবল ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদের পুনর্বণ্টনের একটি মাধ্যম, বরং এটি সমাজের সবাইকে ঈদের আনন্দে শরিক করার একটি উপায়ও বটে। তবে, ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও নির্দেশনা রয়েছে, যা মেনে চলা জরুরি।
ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী আট শ্রেণির মানুষ রয়েছেন, যাদের মধ্যে এই সদকা বিতরণ করা যাবে। এই আট শ্রেণি হলো:
- **ফকির:** যারা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম।
- **মিসকিন:** যাদের কিছু আয় আছে কিন্তু তা তাদের চাহিদা পূরণে অপর্যাপ্ত।
- **আমিল:** যারা জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজে নিযুক্ত থাকেন।
- **মুআল্লাফাতুল কুলুব:** যারা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছেন বা ইসলামের প্রতি আগ্রহী।
- **রিকাব:** দাস মুক্তির জন্য।
- **গারিমিন:** ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
- **ফি সাবিলিল্লাহ:** আল্লাহর পথে জিহাদ করা।
- **ইবনুস সাবিল:** মুসাফির বা পথিক, যারা ভ্রমণের সময় আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী, একজন মুসলিম যদি নেছাব পরিমাণ (সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ) সম্পদের মালিক হন, তাহলে তার উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে আদায় করা উচিত।
ফিতরা আদায়ের নিয়ম
ফিতরা, যা সাদাকাতুল ফিতর নামেও পরিচিত, ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি নয় হলেও, এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত। রমজানের মাস শেষে, ঈদুল ফিতরের আগে এই সাদাকা আদায় করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল গরিব ও দুঃখী মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া এবং রোজাদারের সম্ভাব্য ভুল-ত্রুটি থেকে পবিত্রতা অর্জন করা।
ফিতরা আদায়ের সময়
ফিতরা আদায় করার সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, ফিতরা ঈদের নামাজের পূর্বে প্রদান করতে হয়। আলেমদের মতে, ফিতরা আদায়ের সময় শুরু হয় ২৮ শে রমজান থেকে এবং ঈদের নামাজের আগে পর্যন্ত চলে। এই সময়ের মধ্যে ফিতরা আদায় করা উচিত।
ফিতরা আদায়ের পরিমাণ
ফিতরা আদায়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, ফিতরা আদায়ের পরিমাণ হল এক সা’ (প্রায় ২.১৭ কেজি থেকে ৩ কেজি) খাদ্যদ্রব্য। এই খাদ্যদ্রব্য হতে পারে গম, যব, খেজুর, কিশমিশ বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য।
এবারের ফিতরা কত টাকা
এবারের ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় সাধারণত স্থানীয় বাজার মূল্য অনুযায়ী। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা উল্লেখ না থাকলেও, সাধারণত এক সা খাদ্যদ্রব্যের বাজার মূল্য অনুযায়ী ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের বাজার মূল্য অনুযায়ী, এবারের ফিতরার ন্যূনতম পরিমাণ হতে পারে ১১৫ টাকা । আরও বিস্তারিত জানতে ২০২৪ সালে এবার ফিতরা কত টাকা, জানালো ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই নিবন্ধটি পড়তে পারেন।
ফিতরা কার উপর ওয়াজিব
অনেকের মনে প্রশ্ন আসে যে ফিতরা কার উপর ওয়াজিব? এর উত্তর হলো ফিতরা সেই সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব যারা নেছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং তাদের নিজেদের এবং তাদের আশ্রিতদের প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত সম্পদ রয়েছে।
ফিতরা কেন দিতে হয়
ফিতরা, যা সাদাকাতুল ফিতর নামেও পরিচিত, ইসলামের অন্যতম একটি আর্থিক ইবাদত যা প্রতিটি সক্ষম মুসলিমের উপর ওয়াজিব। ফিতরা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো পরিললিক্ষত হয়।
ফিতরা দেওয়ার উদ্দেশ্য
ফিতরা দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল সমাজের গরিব ও দুঃখী মানুষদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া। এটি তাদেরকে ঈদের দিনে উৎসবের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তাদের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা সরবরাহ করে।
ফিতরা দেওয়ার সামাজিক প্রভাব :ফিতরা দেওয়ার মাধ্যমে সমাজের ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদের পুনর্বণ্টন ঘটে। এটি সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুভূতি তৈরি করে এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সহযোগিতা ও সহানুভূতির বন্ধন সৃষ্টি করে।
ফিতরা ও রোজার সম্পর্ক: রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলিমরা আত্ম-সংযম ও পরিশুদ্ধি অর্জন করেন। ফিতরা দেওয়ার মাধ্যমে রোজাদারের সম্ভাব্য ভুল-ত্রুটি থেকে পবিত্রতা অর্জন করা হয় এবং এটি রোজার পূর্ণতা প্রদান করে।
ফিতরা ও ইসলামিক শিক্ষা: ইসলামিক শিক্ষা অনুযায়ী, ফিতরা দেওয়া হল একটি দায়িত্ব এবং এটি মুসলিম উম্মাহর সদস্যদের মধ্যে দানশীলতা ও পরোপকারের গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করে।
ফিতরা দেওয়ার শরিয়াহ নির্দেশনা
শরিয়াহ অনুযায়ী, ফিতরা প্রতিটি সক্ষম মুসলিমের উপর ওয়াজিব এবং এটি নিজের এবং নিজের আশ্রিতদের পক্ষ থেকে আদায় করতে হয়।
ফিতরা দেওয়ার মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেন এবং সমাজের সবাইকে ঈদের আনন্দে শরিক করার একটি সুন্দর উপায় প্রদান করেন। এই প্রথা ইসলামের সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার শিক্ষাকে প্রতিফলিত করে এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে একটি সুস্থ ও সহায়ক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
ফিতরা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
পবিত্র কোরআনে সরাসরি ফিতরা সম্পর্কে কোনো আয়াত নেই, তবে জাকাত এবং সদকার বিধান রয়েছে, যা ফিতরার মূলনীতির সাথে সংগতিপূর্ণ। ফিতরা প্রদানের বিধান হাদিসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংক্ষেপে, ফিতরা হল একটি পবিত্র দান, যা মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি এবং সমতা বৃদ্ধি করে এবং ঈদের আনন্দকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এটি রোজার মাসের শেষে আত্মশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের একটি উপায়।
প্রিয় পাঠক, সদকাতুল ফিতার কার উপর ওয়াজি সমর্কিত এই পেস্টি পড়ে নিশ্চয়তই আপনি জানতে পেরেছেন সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা প্রদানের বিস্তারিত তথ্য। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন |
1 thought on “ফিতরা কার ওপর ওয়াজিব, কেন-কখন-কাকে-কিভাবে দিতে হবে”