আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ক্রিকেট লিগগুলোর মধ্যে একটি। এর প্রতিটি আসরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা অংশগ্রহণ করে থাকেন, এবং এই লিগের মাধ্যমে অনেক ক্রিকেটারই ক্যারিয়ারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছান। তবে এই ক্রিকেট বিশ্বের মেগা ইভেন্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উপস্থিতি প্রায় সময়ই সীমিত থাকে, এবং বেশিরভাগ সময়ই তাদের উপেক্ষিত করা হয়।
এবারের মেগা নিলামেও বাংলাদেশের মাত্র দুই ক্রিকেটারের নাম তোলা হয়, আর বাকিরা নিলামে স্থান পাননি। এই পরিস্থিতির পেছনে নানা কারণ রয়েছে, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হলেও এখনও তা বাংলাদেশি ক্রিকেটারের জন্য বড় এক প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স এবং ইমেজ
আইপিএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উপেক্ষিত হওয়ার প্রথম কারণ তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং ক্রিকেটীয় ইমেজ। যদিও মুস্তাফিজুর রহমান এবং রিশাদ হোসেনের নাম এবারের নিলামে তোলা হয়েছিল, তবে অন্য কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে নেওয়ার জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আগ্রহ দেখায়নি। মুস্তাফিজের অভিজ্ঞতা এবং সফলতা সত্ত্বেও, তাঁকে এবারও ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যে নিলামে তোলা হলেও কোন দলই তাঁকে কিনেনি।
মুস্তাফিজ আইপিএলে সাতটি মৌসুমে ৫৭ ম্যাচে ৬১ উইকেট নিয়েছেন, যা তার দক্ষতার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু তার পারফরম্যান্সও মাঝে মাঝে অনিয়মিত হতে দেখা গেছে, বিশেষ করে ইনজুরির কারণে তার ফিটনেস প্রোফাইল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি, তার গত কয়েকটি মৌসুমে ধারাবাহিকতা হারানো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা নেতিবাচক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৪ বলে ৪ ছক্কা না মেরেও যেভাবে ২৪ রান নিয়ে দলকে জেতালেন হারপ্রীত
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সূচি এবং আইপিএল মেনে চলার সমস্যা
আরেকটি বড় কারণ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচি। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যখন আইপিএলে খেলার সুযোগ পান, তখন অনেক সময়ই তাদের জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ অথবা টুর্নামেন্টের সূচি থাকে। আইপিএল সাধারণত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত চলে, এবং এই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেক সময় আন্তর্জাতিক সিরিজে ব্যস্ত থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে, আইপিএলের দলগুলোকে মাঝপথে ক্রিকেটারদের ছাড়তে হতে পারে, যা তাদের দলগত পরিকল্পনায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। এই কারণে, অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, কারণ তারা চায় তাদের প্লেয়াররা পুরো টুর্নামেন্টে উপস্থিত থাকুক।
উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে তাসকিন আহমেদকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছ থেকে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বিসিবি থেকে অনাপত্তিপত্র না দেওয়ার কারণে তিনি সেই সুযোগ হারান। এ ধরনের ঘটনা আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পক্ষে এটি একটি বড় সমস্যা, কারণ তারা চায় না প্লেয়ারদের মাঝপথে জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলের পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনতে হয়।
আরও পড়ুন: বৈভব সূর্যবংশী: এক বছরে ‘৪৯ সেঞ্চুরি’ করা ১৩ বছর বয়সে আইপিএল নিলামে
প্রযুক্তিগত ও ক্রিকেটীয় দক্ষতার ঘাটতি?
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দক্ষতার বিষয়ে কিছু প্রশ্ন উঠে থাকে। আইপিএল একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল, তারা আইপিএলে কেন তেমনভাবে সফল হতে পারছেন না, তার কারণ হতে পারে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের মধ্যে গ্যাপ থাকা।
আইপিএলে ভারতের ক্রিকেটাররা যেমন স্থানীয় লিগ এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা লাভ করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য একইরকম সুযোগ পান না। তাদের মধ্যে আইপিএল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত দক্ষতার অভাব থাকতে পারে, যা তাদের আন্ডার রেটেড হওয়ার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: হাথুরু, নান্নু, পাপন—কেউই নেই, তাহলে সিরিজ হারের দায় নেবে কে?
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ না থাকা
অবশেষে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আইপিএলে যোগ না দেওয়ার মূল কারণ হতে পারে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ঝুঁকি নেওয়ার প্রতি অনীহা। যদিও মুস্তাফিজ বা তাসকিনের মতো খেলোয়াড়দের প্রতি কিছুটা আগ্রহ থাকে, তবে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিকতা এবং নির্ভরযোগ্যতার অভাব ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে তাদের নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে দেয় না।
মোটের উপর, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি এবং ক্রিকেটারদের আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রয়োজন আরও আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের সমন্বিত উন্নয়ন, যাতে তারা আইপিএলের মতো বড় মঞ্চে নিজেদের প্রতিযোগিতার দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে।