এশিয়া কাপ: ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। রোববার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৫৯ রানের জয় তুলে নেয় জুনিয়র টাইগাররা।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। তবে ব্যাট এবং বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্সে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় টাইগার যুবারা।
ব্যাটিংয়ে সংগ্রামী বাংলাদেশ
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ১ রান করে আউট হন ওপেনার কালাম সিদ্দিকী। এরপর জাওয়াদ আবরার এবং শিহাব জেমস মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে তাদের জুটি বড় করতে পারেনি। ৬৫ বলে ২০ রান করে আউট হন জাওয়াদ। অন্যদিকে, অধিনায়ক আজিজুল হক তামিমও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। মাত্র ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর শিহাব জেমস এবং রিজান হোসেন মিলে দলের স্কোর বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে কেউই ফিফটি ছুঁতে পারেননি। শিহাব ৬৭ বলে ৪০ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের পর দেবাশীষ দেব মাত্র ১ রান করে ফিরে যান। এক পর্যায়ে ১৫৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: রংপুর রাইডার্স চ্যাম্পিয়ন, সৌম্যর ব্যাটে ৫ ছক্কায় ৮৬ রান
তবে শেষদিকে উইকেটরক্ষক ব্যাটার ফরিদ হাসান এবং মারুফ মৃধার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ফরিদ ৪৯ বলে ৩৯ রান করেন, আর মারুফ অপরাজিত থাকেন ১১ রানে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অলআউট হয় ৪৯.১ ওভারে ১৯৮ রান করে।
ভারতের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন হার্দিক রাজ, যুধাজিৎ গুহ ও চেতন শর্মা। তারা প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন। কিরণ চোরমলে, কেপি কার্তিকেয়া ও আয়ুশ মাত্রে একটি করে উইকেট শিকার করেন।
ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়
১৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার আয়ুশ মাত্র ১ রান করে আল ফাহাদের বলে বোল্ড হন। এরপর বৈভব সূর্যবংশীও বেশি সময় ক্রিজে টিকতে পারেননি; তিনি করেন মাত্র ৯ রান।
ভারতের স্কোরবোর্ডে যখন ৪৪ রান, তখন তারা হারায় তৃতীয় উইকেট। এরপর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ভারতীয় দল। ইকবাল হোসেন ইমনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতের মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ে। ইমন একাই পরপর তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের স্কোরকে আরও চাপে ফেলে দেন।
ভারতের অধিনায়ক মোহাম্মদ আম্মান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে তাকে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক আজিজুল হক তামিম। নিজের প্রথম ওভারেই আম্মানকে আউট করেন তামিম, যিনি করেছিলেন ২৬ রান।
এরপর হার্দিক রাজ কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় দল মাত্র ৩৫.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে থামে ১৩৯ রানে।
আরও পড়ুন: কঠিন সিদ্ধান্তে বিসিবি, সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি?
বাংলাদেশের বোলারদের দাপট
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ ছিল দুর্দান্ত। ইকবাল হোসেন ইমন এবং অধিনায়ক আজিজুল হক তামিম তিনটি করে উইকেট নেন। ইমন তার স্পেলে মাত্র ২৪ রান খরচ করেন এবং ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। এছাড়া আল ফাহাদ দুটি এবং রিজান হোসেন ও মারুফ মৃধা একটি করে উইকেট নেন।
ইমনের ডাবল পুরস্কার
ম্যাচ সেরা হওয়ার পাশাপাশি পুরো সিরিজেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ইকবাল হোসেন ইমন। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি মোট ১৩টি উইকেট শিকার করেন এবং সিরিজ সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কৃত হন।
এশিয়া কাপ ফাইনাল খেলা সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯:
৪৯.১ ওভারে ১৯৮ (রিজান ৪৭, জেমস ৪০, ফরিদ ৩৯; যুধাজিৎ গুহ ২/২৯, হার্দিক রাজ ২/৪১)।
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯:
৩৫.২ ওভারে ১৩৯ (আম্মান ২৬, হার্দিক রাজ ২৪; আজিজুল হক তামিম ৩/৮, ইমন ৩/২৪)।
ফলাফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল জয়ী হয় ৫৯ রানে।
ঐতিহাসিক সাফল্যের ধারাবাহিকতা
এশিয়া কাপ এর এই জয় বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি ট্রফি ধরে রাখার গল্প নয়, বরং এটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আরও একটি গৌরবময় অধ্যায় যোগ করেছে। টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপ জিতে জুনিয়র টাইগাররা প্রমাণ করেছে যে তারা বড় মঞ্চে চাপ সামলে পারফর্ম করতে সক্ষম।
এই সাফল্য ভবিষ্যতে জাতীয় দলে তাদের জায়গা করে নেওয়ার পথ সুগম করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।