জিম্বাবুয়ে বনাম আফগানিস্তান: গতকাল, বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচিত হয়েছে। জিম্বাবুয়ে এক ইনিংসে তুলেছে ৫৮৬ রান, যা তাদের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান। এই ঐতিহাসিক ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন তিন ক্রিকেটার, যা একটি নতুন রেকর্ড। সেঞ্চুরি পেয়েছেন শন উইলিয়ামস, ক্রেইগ আরভিন ও ব্রায়ান বেনেট। এই তিন ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে এটি এক অনবদ্য দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি
বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত এই বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি ছিল একদম দৃষ্টিনন্দন। জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৮৬ রানে অলআউট হয়। এর মধ্যে উইলিয়ামস, আরভিন এবং বেনেট তিনজনই সেঞ্চুরি করেছেন। এই তিন সেঞ্চুরির মধ্যে সেঞ্চুরির সংখ্যা মাত্র তৃতীয়বারের মতো দেখা গেলো, যা জিম্বাবুয়ের জন্য এক নতুন রেকর্ড।
শন উইলিয়ামসের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস
এই দিনটির সবচেয়ে বড় খবর ছিল শন উইলিয়ামসের অসাধারণ ব্যাটিং। তিনি ক্যারিয়ার সেরা ১৫৪ রান করেন এবং আউট হন। উইলিয়ামস দিনের শুরুতে ১৪৫ রানে অপরাজিত ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৫৪ রানে আউট হন। তার এই ইনিংসটি ছিল দলের জন্য একটি বড় ভিত্তি, যা জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা- পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে বিশ্বরেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার
উইলিয়ামসের ইনিংসের মধ্যে ছিল ১৯টি চার ও ৩টি ছক্কা। তার এই অসাধারণ ইনিংস দলকে শক্ত ভিত্তি দিতে সক্ষম হয় এবং এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। উইলিয়ামসের ব্যাটিং ছিল নিখুঁত, তিনি সঠিক সময়ে আক্রমণাত্মক এবং ঠিক সময়ে সাবধানী ছিলেন। এভাবে, উইলিয়ামস তার দলের জন্য আত্মবিশ্বাসী পুঁজি তৈরি করে দেন।
ক্রেইগ আরভিনের চতুর্থ সেঞ্চুরি
জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন তাঁর ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন। তিনি ১৮১ বলে ১০৪ রান করেন, যা তার দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরভিনের ব্যাটিং ছিল একদম পরিকল্পনামাফিক, তিনি এক দিকে থেকে টেকনিক্যালি সঠিক ব্যাটিং করেন এবং অন্যদিকে প্রয়োজনীয় রানের জন্য আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েও খেলেন।
আরভিনের সেঞ্চুরি একদম সঠিক সময়েই আসে, যখন দলের আগের ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলছিলেন। তিনি তার ইনিংসে ১৫টি চার এবং ১টি ছক্কা মারেন। আরভিনের এই পারফরম্যান্স দেখে বোঝা যায় যে, তিনি শুধু একজন অধিনায়কই নয়, একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও কার্যকরী ব্যাটসম্যানও।
ব্রায়ান বেনেটের প্রথম সেঞ্চুরি
এই টেস্টের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ব্রায়ান বেনেটের প্রথম সেঞ্চুরি। তিনি ১২১ বল খেলতে গিয়ে ১১০ রান অপরাজিত থাকেন। বেনেটের ইনিংস ছিল শান্ত এবং দক্ষতার সঙ্গে খেলা। তার এই সেঞ্চুরি দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এই ইনিংসটি নিশ্চিত করে যে জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর করতে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করে যে বিশ্বরেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ
বেনেটের সেঞ্চুরি ছিল বিশেষভাবে প্রশংসনীয় কারণ এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল। তার জন্য এটি একটি স্মরণীয় দিন, এবং তার পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের জন্য তার উপর আরও বড় চাপ তৈরি করবে, কারণ এখন তাকে আরও অনেক বড় ইনিংস খেলতে হবে।
আফগানিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয়
অন্যদিকে, আফগানিস্তান প্রথম ইনিংসে শুরু থেকে সমস্যায় পড়েছে। তারা ৩০ ওভার শেষে ৯৫ রান করেছে ২ উইকেটে, যার মধ্যে রহমত শাহ ৪৯ রান অপরাজিত রয়েছেন এবং তার সঙ্গে আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি ১৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন। আফগানিস্তান এখনো জিম্বাবুয়ের ইনিংসের থেকে ৪৯১ রান পিছিয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসানের বোলিং নিষিদ্ধ: আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় ধাক্কা
আফগানিস্তানের ওপেনার সাদিকউল্লাহ আতাল এবং আবদুল মালিক দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের ব্যাটিংয়ের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে রহমত শাহ ও শহীদি চেষ্টা করছেন যাতে তাদের দল ভালোভাবে ফিরে আসতে পারে। জিম্বাবুয়ের বোলাররা তাদের সঠিক জায়গায় বোলিং করতে সক্ষম হয়েছেন এবং আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফগানিস্তানের বোলিং
আফগানিস্তানের বোলিং দল থেকেও কিছু ভালো পারফরম্যান্স দেখা গেছে। তাদের মধ্যে আল্লাহ গজনফর ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার ছিলেন। তিনি ৩৭.২ ওভারে ১২৭ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন। তবে, আফগানিস্তান আর কোনো উইকেট নিতে সক্ষম হয়নি, এবং জিম্বাবুয়ে আরও বড় স্কোর করতে সক্ষম হয়েছে।
ম্যাচের পরবর্তী সম্ভাবনা
এখন আফগানিস্তান তাদের প্রথম ইনিংসে ৯৫ রান নিয়ে ব্যাটিং করছে এবং তাদের সামনে বড় লক্ষ্য রয়েছে। তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হলে তাদের দলকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যদিও রহমত শাহ এবং শহীদি কিছুটা লড়াই করছেন, তবুও জিম্বাবুয়ের বোলিং শক্তি এমন যে, আফগানিস্তান তাদের ইনিংসকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারবে কি না, তা এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ : বাঁধা পেরিয়ে ভারতকে কাঁদিয়ে শিরোপা জয় বাংলাদেশের
জিম্বাবুয়ের রেকর্ড
এই টেস্টে জিম্বাবুয়ে যে তিন সেঞ্চুরি করল, তা তাদের ইতিহাসে একটি বিশেষ ঘটনা। ৫৮৬ রান করা তাদের সর্বোচ্চ স্কোর, যা এখন পর্যন্ত তাদের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান। এই ধরনের পারফরম্যান্স টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য বজায় রেখে তাদের শক্তিশালী ক্রিকেট জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের দলের প্রতিটি সদস্যের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য, এবং তাদের এই ঐতিহাসিক স্কোর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দারুণ সাফল্য পেতে সাহায্য করেছে।
বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিন সেঞ্চুরি, ৫৮৬ রান, এবং একটা ঐতিহাসিক স্কোর—এগুলো সবই তাদের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। তবে, আফগানিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে কীভাবে ফিরে আসে তা পরবর্তী দিনের খেলার ওপর নির্ভর করবে।