নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা: আজকের ম্যাচটি ছিল এক ভিন্ন ধরনের ক্রিকেটের গল্প, যেখানে উত্থান-পতন, উত্তেজনা এবং এক অনন্য রোমাঞ্চের দৃশ্যপট ছিল। নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচটি ছিল এক দারুণ উত্তেজনার প্রমাণ। প্রথম ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা একদম নিখুঁতভাবে খেললেও, শেষের দিকে নিউজিল্যান্ড তাদের জ্বলে ওঠা এবং এক বিস্ময়কর চেজে জয় পেয়ে ম্যাচটি এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত শুরু
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভারে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের টসে জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের জন্য পাঠান। প্রথম দিকের পরিস্থিতি পুরোপুরি শ্রীলঙ্কার পক্ষে ছিল। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার কুশল মেন্ডিস এবং পাতুম নিশাঙ্কা প্রথম ১৩.২ ওভারে বিনা উইকেটে ১২১ রান তুলে ফেলেন। মেন্ডিস (৩৬ বলে ৪৬) এবং নিশাঙ্কা (৬০ বলে ৯০) ছিলেন অসাধারণ। তারা নিউজিল্যান্ডের বোলারদের অতি সহজে মোকাবেলা করেন, যেন রান তোলার জন্য কোনো বাধা নেই।
তবে এই স্বপ্নিল শুরু শ্রীলঙ্কার জন্য সুখকর শেষ হয়নি। এক মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার চাকা থেমে যায় এবং তাদের জয়ের পথ হয়ে যায় কঠিন। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কা বিনা উইকেটে ৯৫ রান তুলে নিয়েছিল। কিন্তু তারপর শুরু হয় নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত কামব্যাক।
নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ে উত্তেজনা
শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ১৪তম ওভারের শেষের দিকে একেবারে নাটকীয়তা ঘটে। নিউজিল্যান্ডের পেসার জ্যাকব ডাফি ১৪তম ওভারের শেষ ৪ বলের মধ্যে ৩টি উইকেট তুলে নেন। তিনি কুশল মেন্ডিস (৩৬ বলে ৪৬), কুশল পেরেরা (০), এবং কামিন্দু মেন্ডিস (০) কে ফিরিয়ে দেন। এই বোলিংয়ে যেন শ্রীলঙ্কার ইনিংসে খানিকটা ভাঙন ধরল।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা- দুই বুড়ো এগিয়ে রাখলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে
এখনো ম্যাচটি পুরোপুরি শ্রীলঙ্কার হাত থেকে বের হয়ে যায়নি, কিন্তু পরবর্তী কিছু ওভারে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বোলার হেনরি এবং জ্যাকব ডাফি শ্রীলঙ্কার ইনিংসে নতুন মনোভাব যোগ করতে সক্ষম হন।
শ্রীলঙ্কার জন্য ম্যাচের শেষ ৩০ বলের মধ্যে ৪৫ রান দরকার ছিল। যদিও পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল না, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের দুর্দান্ত কৌশল এবং চাপ শ্রীলঙ্কার জন্য আন্ডারপ্রেশার তৈরি করে দেয়।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে রেকর্ড জুটি
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংও একেবারে শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল। প্রথম ১০ ওভারে তাদের ৬৫ রানে ৫ উইকেট চলে গিয়েছিল। একসময় মনে হচ্ছিল নিউজিল্যান্ড ১৫০ রানের আশপাশে স্কোর করতে সক্ষম হবে। তবে, ষষ্ঠ উইকেটের জন্য মাইকেল ব্রেসওয়েল এবং ড্যারিল মিচেল মিলে এক রেকর্ড জুটি গড়েন।
এদের মধ্যে, মিচেল (৪২ বলে ৬২) এবং ব্রেসওয়েল (৩৩ বলে ৫৯) এক দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে ১০৫ রানের অসাধারণ জুটি তৈরি করেন। এই ১০৫ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে যেন নবজীবন ফিরে আনে। ১৪, ১৫, ১৬ ওভারে তারা একযোগে ১২, ২২, ১৫ রান তুলেন, যা নিউজিল্যান্ডকে বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: জিম্বাবুয়ে বনাম আফগানিস্তান- তিন সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের নতুন রেকর্ড
এছাড়া, শ্রীলঙ্কার স্পিনার মহীশ তিকশানা শেষ ওভারে ৩ উইকেট নেন এবং ম্যাচে এক দারুণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। তিনি মাত্র ৩ রান দিয়ে নিউজিল্যান্ডের একাধিক ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন, কিন্তু ততক্ষণে তাদের স্কোর ১৭২/৮ হয়ে গেছে, যা শ্রীলঙ্কার জন্য যথেষ্ট কঠিন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
শ্রীলঙ্কার শেষ চেষ্টায় বিপর্যয়
শ্রীলঙ্কা যখন ১৩.২ ওভারে বিনা উইকেটে ১২১ রান তুলেছিল, তখন মনে হচ্ছিল তারা ম্যাচটি একেবারে সহজেই জিতে যাবে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ শ্রীলঙ্কাকে একের পর এক চাপের মধ্যে ফেলতে থাকে। ১৯তম ওভারে হেনরি শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান নিশাঙ্কা (৬০ বলে ৯০) এবং রাজাপক্ষকে (৮) আউট করে দলের জন্য চাপ বাড়িয়ে দেন। ১২ বলের মধ্যে ২০ রান করার সমীকরণে শ্রীলঙ্কা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।
নিউজিল্যান্ডের পেস অলরাউন্ডার জ্যাকরি ফোকস শেষ ওভারে ৫ রান দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৪ রানে আটকে দেন। প্রথম বলেই তিনি তিকশানাকে আউট করেন, এরপর পরপর দুটি রান আউটের ফলে শ্রীলঙ্কার আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ডকে ৮ রানের জয় এনে দেয় ফোকস।
ফলাফল এবং সিরিজের পরিস্থিতি
ম্যাচ শেষে, নিউজিল্যান্ডের অবিশ্বাস্য বোলিং এবং শেষ মুহূর্তের ব্যাটিং দক্ষতা শ্রীলঙ্কার জন্য শোচনীয় পরিণতি বয়ে আনে। শেষ পর্যন্ত, শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১৬৪/৮ রান করে এবং নিউজিল্যান্ড ৮ রানে জয়ী হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজের ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
নিউজিল্যান্ডের জন্য ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন পেস বোলার জ্যাকব ডাফি, যিনি ৩/২১ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কার শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের শিকার করেন।
এখন, সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ২৯ ডিসেম্বর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। শ্রীলঙ্কা এবার কৌশলগতভাবে পরবর্তী ম্যাচে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে, তবে নিউজিল্যান্ড তাদের শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে সিরিজটি জিততে মুখিয়ে থাকবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
- নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭২/৮ (মিচেল ৬২, ব্রেসওয়েল ৫৯, চাপম্যান ১৫, রবিনসন ১১; বিনুরা ২/২২, তিকশানা ২/২৯, হাসারাঙ্গা ২/৩৩)।
- শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৪/৮ (নিশাঙ্কা ৯০, মেন্ডিস ৪৬, রাজাপক্ষে ৮; ডাফি ৩/২১, হেনরি ২/২৮, ফোকস ২/৪১)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: জ্যাকব ডাফি।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।
এখন দেখার বিষয় হবে, পরবর্তী ম্যাচে শ্রীলঙ্কা কীভাবে তাদের দলের অভ্যন্তরীণ চাপ কাটিয়ে উঠতে পারে এবং সিরিজে সমতা ফেরাতে পারে।
2 thoughts on “নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা: উত্থান–পতনে ভরপুর উত্তেজনার ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ডের হাসি”