রংপুর বনাম সিলেট: ২০২৫ বিপিএলে রংপুর রাইডার্স শুরু করেছে দুর্দান্তভাবে। নুরুল হাসান সোহানের অধিনায়কত্বে প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে দলটি। আজ (মঙ্গলবার) তারা চতুর্থ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৩৪ রানে পরাজিত করেছে। রংপুরের হয়ে বল হাতে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তরুণ গতিতারকা নাহিদ রানা, যিনি বিপিএলে তার ক্যারিয়ারসেরা ৪ উইকেট শিকার করেছেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
এর মধ্যে একটি বড় কারণ ছিল তরুণ গতিতারকা নাহিদ রানা, যিনি দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন করে বিপিএলে তার ক্যারিয়ারের সেরা ৪ উইকেট শিকার করেছেন। এই ম্যাচটি ছিল নাহিদের জন্য একেবারে স্মরণীয়, যা রংপুরের জয়ের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে।
প্রথম ইনিংস: রংপুরের ব্যাটিং পারফরম্যান্স
আজকের ম্যাচটি মিরপুর শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে রংপুর রাইডার্স টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। রংপুরের ব্যাটিং শুরু হয় কিছুটা ধীরগতিতে। প্রথম কিছু ওভার থেকেই সিলেটের বোলিং আক্রমণ কঠিন ছিল, এবং প্রথম পাওয়ারপ্লেতে বড় কোনো রান সংগ্রহ হয়নি। তবে, রংপুরের ব্যাটসম্যানরা কিছুটা সময় নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্থির করতে সক্ষম হয়। দলের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা একে একে ইনিংসকে এগিয়ে নেন, এবং তারা একটি মোটামুটি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন, ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রান।
আরও পড়ুন: মহিদুল ইসলাম অঙ্কন: ১৮ বলে ফিফটি, বাংলাদেশের দ্রুততম রেকর্ড গড়া তারকা
রংপুরের প্রথম ১০ ওভার খুব বেশি ফলপ্রসূ না হলেও, মাঝের ওভারগুলোতে তাদের ইনিংস দাঁড়ায়। রংপুরের অন্যতম প্রধান ব্যাটসম্যানরা ছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, যিনি শেষের দিকে ঝলক দেখিয়ে দলের স্কোর বাড়িয়েছিলেন। ২০ তম ওভারে এসে তাদের ইনিংস শেষ হয়, এবং ১৫৫ রান তোলার পর তারা আশা রাখছিল যে তাদের বোলিং আক্রমণ সিলেটকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য পূরণে বাধা দিতে পারবে।
সিলেটের ব্যাটিং: শুরুতেই ধাক্কা
রংপুর রাইডার্স যখন ১৫৫ রানের সংগ্রহ নিয়ে মাঠ ছাড়ে, তখন সিলেট স্ট্রাইকার্স জানতো যে তাদের জন্য এই লক্ষ্য ছোঁয়া কঠিন হতে পারে। প্রথম থেকেই সিলেটের ব্যাটিং শুরু হয়েছিল এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। ওপেনার জর্জ মুনশি প্রথম বলেই আউট হয়ে যাওয়ায় তাদের ইনিংসে বড় বিপর্যয়ের শুরু হয়। সিলেটের ব্যাটিং একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে এবং শুরু থেকে চাপে পড়ে যায়। সিলেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তার ব্যাটসম্যানদের ধীরগতির ব্যাটিং, যা রান রেটের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
রনি তালুকদার ও জাকির হাসান প্রথম কয়েকটি ওভারে সিলেটের ইনিংস সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, রংপুরের বোলিং আক্রমণ সিলেটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। রনি তালুকদার বেশ কিছু রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেও, তার পাশে কোন ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না।
নাহিদ রানার ম্যাজিক বোলিং: সিলেটের ব্যাটিং ব্যর্থতা
যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল রংপুরের ব্যাটিং, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের বোলিং। সিলেটের কাছে মাত্র ১৫৫ রান ছোঁয়া অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং রংপুরের বোলাররা সেই চ্যালেঞ্জে সফলভাবে জবাব দিয়েছিলেন। বিশেষভাবে, নাহিদ রানা তার ভয়ংকর গতির বোলিংয়ে সিলেটের ব্যাটিংয়ের প্রাণ কেড়ে নেন।
আরও পড়ুন: রংপুর রাইডার্স বনাম ঢাকা ক্যাপিটালস: ১ম ওভারেই ঢাকাকে উড়িয়ে দিল রংপুর
নাহিদ রানার প্রথম আঘাত আসে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে। তিনি পরপর দুটি উইকেট তুলে নিয়ে সিলেটকে পুরোপুরি ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। প্রথমে জাকির হাসান (১৮ রান) এবং পরে পল স্টার্লিং (৬ রান) কে আউট করেন। নাহিদের এই দুর্দান্ত বোলিং সিলেটের মধ্যম মেজাজে ভাঙন সৃষ্টি করে। এরপর থেকে সিলেটের ইনিংস স্থিতিশীল করার জন্য আর কোনো শক্তি থাকেনি। তার ধারাবাহিক আক্রমণে সিলেটের ব্যাটসম্যানরা ধীরগতির খেলায় পিছিয়ে পড়ে এবং একে একে উইকেট হারাতে থাকে।
খুশদিল শাহের অবদান: সিলেটের শেষ ভরসা ভেঙে গেল
নাহিদ রানার পাশাপাশি খুশদিল শাহও সিলেটের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ান। ১৫ তম ওভারে তিনি সিলেটের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন—রনি তালুকদার (৪১ রান) ও অধিনায়ক আরিফুল হক (০ রান)। রনির বিদায়ের সাথে সিলেটের লড়াই কার্যত শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী ওভারে নাহিদ আবারো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এক ওভারে প্রথম বলেই তিনি জাকির আলীকে আউট করেন, যা সিলেটের ইনিংসে আরেকটি বড় ধাক্কা।
শেষের দিকে সিলেটের ব্যর্থতা: রংপুরের সহজ জয়
সিলেটের শেষের দিকে আশা জাগানোর মতো কোনো ইনিংস দেখতে পাওয়া যায়নি। পুরো ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছিল, এবং সিলেটের কেউই দুই অঙ্কের ঘর পৌঁছাতে পারেনি। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত সিলেট ১২১ রানে থেমে যায়। রংপুরের দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে তাদের জয় নিশ্চিত হয় এবং সিলেটের জন্য এটি ছিল এক ভরাডুবি।
রংপুর বনাম সিলেট- ফলাফল
রংপুর রাইডার্স এই ম্যাচে ৩৪ রানে জয়ী হয়ে বিপিএলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এই জয়ে তাদের মূল ভূমিকা ছিল নাহিদ রানার বিধ্বংসী স্পেল, খুশদিল শাহের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং এবং রনি তালুকদারের ধৈর্যশীল ব্যাটিং। এই জয় রংপুর রাইডার্সকে তাদের বিপিএল অভিযানে শক্তিশালী একটি দল হিসেবে প্রমাণিত করেছে।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের জন্য এটি ছিল একটি দুঃখজনক পরাজয়, তবে তারা অবশ্যই পরবর্তী ম্যাচে নিজেদের ভুলগুলো শোধরাতে পারবে। রংপুর রাইডার্স তাদের উজ্জ্বল বোলিং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে সহজেই পরাস্ত করেছে এবং তাদের টুর্নামেন্টে শক্তিশালী অবস্থান আরো দৃঢ় করেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স
- মোট রান: ১৫৫/৬ (২০ ওভার)
- সর্বোচ্চ রান: ইফতিখার আহমেদ ৪৭*
- দ্রুততম ইনিংস: নুরুল হাসান সোহান ৪১(২৪)
সিলেট স্ট্রাইকার্স
- মোট রান: ১২১/৯ (২০ ওভার)
- সর্বোচ্চ রান: রনি তালুকদার ৪১
- বোলিং: নাহিদ রানা ৪/২৭
শেষ কথা: এই ম্যাচটি রংপুর রাইডার্সের জন্য ছিল এক ঐতিহাসিক জয়। নাহিদ রানা, খুশদিল শাহ, এবং অন্যান্য বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তারা সিলেট স্ট্রাইকার্সের উপর চাপ সৃষ্টি করে জয়ী হয়েছে। আশা করা যায়, এই জয় রংপুরকে বিপিএল ২০২৫ এর আরও বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে নিয়ে যাবে।
1 thought on “রংপুর বনাম সিলেট- নাহিদ রানার চার উইকেটে রংপুরের টানা ২য় জয়””